বীর প্রতীক মোদাসসের হোসেন খান
মোদাসসের হোসেন খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) লেফটেন্যান্ট, পরবর্তীতে লে. কর্নেল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালের ১২ই নভেম্বর মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর থানার কাজী কসবা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তোফাজ্জল হোসেন খান এবং মাতার নাম রোকেয়া খানম। ৬ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে মোদাসসের হোসেন খান ৬ষ্ঠ। তিনি ১৯৬৮ সালে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে একই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের কাকুল শহরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকবাহিনী কর্তৃক ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট নামে নারকীয় গণহত্যার সংবাদ শুনে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে জীবন বাজি রেখে পালিয়ে লাহোর-ইসলামাবাদ-করাচি হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকা থেকে আগরতলা হয়ে ভারতের তেলঢালায় গিয়ে ২৩শে মে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তাঁকে ‘জেড’ ফোর্সের ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর এ জে এম আমিনুল হকের অধীনে ‘সি’ (চার্লি) কোম্পানির কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।
৩রা আগস্ট সংঘটিত শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী নকশী বিওপি-র যুদ্ধটি ছিল তাঁর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। বিওপি-টি পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি দখলের দায়িত্ব অর্পিত হয় ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ওপর। নকশী বিওপি যুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন মেজর এ জে এম আমিনুল হক। কোম্পানির ইন- চার্জ ছিলেন মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরী এবং তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মোদাসসের হোসেন খান। এ যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেও পাকবাহিনীর শেলের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত এবং ১২ জন নিখোঁজ হন। মেজর আমিন আহমেদ চৌধুরী আহত হন। ৩০শে আগস্ট ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মোদাসসের হোসেন খান কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে এক সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার লাতুজুড়ি ও সাগরনাল চা বাগানে পাকবাহিনীর ক্যাম্প ধ্বংসে বীরত্বের পরিচয় দেন। ১৪ই ডিসেম্বর সিলেটের এম সি কলেজে অপারেশন শেষে তিনি সিলেট বিমান বন্দরে গিয়ে পৌঁছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশ সরকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোদাসসের হোসেন খানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর র্যাংক ছিল লেফটেন্যান্ট। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সৈয়দা মুস্তারী খান। পারিবারিক জীবনে তিনি ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড