বীর প্রতীক মো. মোহসীন আলী সরদার
মো. মোহসীন আলী সরদার, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫০ সালের ২৬শে নভেম্বর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র।
ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি-সচেতন মো. মোহসীন আলী সরদার স্বাধীনতাপূর্ব পাকিস্তানবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে এপ্রিল মাসে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ৩য় বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের সঙ্গে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৭নং সেক্টরের আঙ্গিনাবাদ সাব-সেক্টরে যোগ দেন এবং এডজুট্যান্টের দায়িত্ব পালন করেন। দিনাজপুর-ফুলবাড়ি সড়কের মোহনপুর সেতুর পশ্চিম দিকে বনতারা বিওপি ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্প। এর অদূরেই ছিল ভারতের সমজিয়া বিওপি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ই আগস্ট রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ বনতারা বিওপি ক্যাম্প আক্রমণ করে। ৫টি উপদলে বিভক্ত এ গ্রুপে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ৪টি দলে ছিলেন ১১ জন করে এবং বিস্ফোরক দলে ছিলেন ৬ জন। ১১ জনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. মোহসিন আলী সরদার। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েক সুবেদার সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে হানাদার সদস্যরা অতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে তারা ভারী অস্ত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। উভয় পক্ষের যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং সুবেদার সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের পজিশন তেমন সুরক্ষিত ছিল না। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে তাঁরা পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কিছু সময় মো. মোহসীন আলী সরদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে।
স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে মো. মোহসীন আলী সরদার সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম খাদিজা খানম। এ দম্পতির ৪ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড