You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. রফিকুল ইসলাম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. রফিকুল ইসলাম

মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৫) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৫ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মধ্য ভাটিরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল আলী দেওয়ান এবং মাতার নাম ফরিদা বেগম। মো. রফিকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলা স্কুলে ছাত্র থাকাকালে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ছাত্রলীগ-এর একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৭০ সালে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। স্বাধীনতার পর মুন্সিগঞ্জের রামপাল হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন।
ছাত্রলীগের কর্মী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর অনুসারী মো. রফিকুল ইসলাম ৭১ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা গণহত্যা শুরু করলে গজারিয়ায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। বিক্ষুব্ধ মানুষ মিছিল-সমাবেশে অংশ নেয়। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে রফিকুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরু থেকে গজারিয়া ও মুন্সিগঞ্জ দিয়ে অসংখ্য মানুষ নিরাপদ স্থানের সন্ধানে লঞ্চ-স্টিমার যোগে চারদিকে ছুটতে থাকে। তরুণ রফিকুল ইসলাম এসব দেখে পাকিস্তানিদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তিনি মে মাসে ভারতে যান। আগরতলায় গিয়ে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যুক্ত হন। মেলাঘরে প্রশিক্ষণের পর তাঁকে মুন্সিগঞ্জ থানা কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। দেশে ফিরে তিনি বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করেন। মুন্সিগঞ্জ সদর, গজারিয়া, টঙ্গিবারী, ঢাকার মাতুয়াইল এবং কুমিল্লা জেলার কয়েকটি স্থানে তিনি অপারেশন পরিচালনা করেন। ১৪ই আগস্ট তিনি তাঁর দলের সদস্যদের নিয়ে গজারিয়ার মধ্যভাটের চরে একটি সেতু ধ্বংস করতে যান। সেতুতে বিস্ফোরক স্থাপনের সময় পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত শেলের আঘাতে রফিকুল ইসলাম আহত হন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি আবার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সরকার মো. রফিকুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর মো. রফিকুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। তিনি তাঁর গ্রাম ভাটিরচরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ডালিয়া সুলতানা। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড