You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. ফজলুল হক - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. ফজলুল হক

মো. ফজলুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৫) কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কাদেরিয়া বাহিনী-র কোম্পানি কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৫ সালে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের উকিলদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. ওসমান গনি তালুকদার এবং মাতার নাম লাইলী বেগম।
৭১-এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিজয় নস্যাৎ করতে জেনারেল ইয়াহিয়ার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ ইত্যাদি ঘটনা ফজলুল হকের মনে গভীর রেখাপাত করে। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ভারতে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি এ বাহিনীর সঙ্গে টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলার বিভিন্ন যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সাহসিকতার পরিচয় দেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল ভূঞাপুর থানার সিরাজকান্দির নিকটবর্তী ধলেশ্বরী নদীতে অস্ত্র বোঝাই পাকিস্তানি জাহাজের ওপর সফল অভিযান।
আগস্ট মাসে কাদেরিয়া বাহিনীর কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে অস্ত্র বোঝাই কয়েকটি পাকিস্তানি জাহাজ উত্তরবঙ্গে অস্ত্র সরবরাহের উদ্দেশ্যে নদীপথে আসবে। যমুনার তীরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন ঐ জাহাজগুলো আক্রমণ করার। ১১ই আগস্ট অস্ত্র বোঝাই ৭টি জাহাজ সিরাজকান্দি বরাবর আসে। পূর্ব থেকে পজিশন নিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে জাহাজগুলোর ওপর আক্রমণ চালান। ভারী অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই বড় দুটি জাহাজ আরএসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ ও এসটি রাজন মুক্তিযোদ্ধাদের গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। অন্য জাহাজগুলো আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং পেছনে ফিরে যায়। আক্রান্ত দুটি জাহাজে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে এবং কেউ-কেউ পানিতে ঝাঁপ দেয়ার পর ডুবে মারা যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামবাসীর সহায়তায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ জাহাজ থেকে উদ্ধার করার পর সে দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অভিযানে মূল নেতৃত্ব দেন হাবিবুর রহমান, বীর বিক্রম, যিনি এরপর থেকে জাহাজমারা হাবিব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কোম্পানি কমান্ডার ফজলুল হক অভিযানে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। এ ঘটনার পর ১৩ই আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে বিমান হামলা চালায়। তাতে ফজলুল হক মারাত্মকভাবে আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ফজলুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম নাজমা হক। এ দম্পতির ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড