বীর প্রতীক মো. নূরুল হক
মো. নূরুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) নৌকমান্ডো ও চট্টগ্রামে অপারেশন জ্যাকপট-এ অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার কোতয়ালি থানার খাজা রোডস্থ বাদামতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সামশুল হুদা এবং মাতার নাম মোস্তফা খাতুন। মো. নূরুল হক চট্টগ্রাম শহরে অধ্যয়ন করেন।
১৯৭১ সালে তিনি ব্যবসা করতেন। ব্যবসা করলেও তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক ঘটনা পরম্পরা তাঁকে আলোড়িত করে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম শহরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
মো. নূরুল হক এপ্রিল মাসে শ্রীনগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের হরিণা ক্যাম্পে যান। এখানে কয়েকদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। হরিণা ক্যাম্পে নৌকমান্ডো দল গঠনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হলে অন্যদের সঙ্গে মো. নূরুল হকও মনোনীত হন। মনোনীতদের আগরতলা-কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশিতে স্থাপিত নেভাল প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানো হয়। মো. নূরুল হক এ ক্যাম্প থেকে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অপারেশন জ্যাকপট-এর অধীনে ১৫ই আগস্ট চট্টগ্রাম নৌবন্দরে পরিচালিত অপারেশনে তিনি অংশ নেন। এ সফল অপারেশনের পর তাঁরা ভারতে ফিরে যান। সেপ্টেম্বরে মো. নূরুল হক এক দল কমান্ডোর সঙ্গে ভারত থেকে আবার চট্টগ্রামে আসেন। এ- সময় তাঁরা পুনরায় চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেন। চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানকালে মো. নূরুল হক পাকসেনাদের একটি জিপে গ্রেনেড হামলা করেন। এতে জিপটি বিধ্বস্ত হয় এবং একাধিক পাকসেনা হতাহত হয়। এরপর তাঁরা বন্দরের বহির্নোঙরে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কমান্ডোরা সমুদ্রে নামেন। কিন্তু তাঁরা ভাটার প্রবল টানে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে ব্যর্থ হন। তাঁরা একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এক সময় মো. নূরুল হকসহ ৪ জন কমান্ডো মেরিন একাডেমির জেটির কাছে পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন। পাকসেনারা মো. নূরুল হকের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেও তিনি অকথ্য নির্যাতনের শিকার হন। স্বাধীনতার পর তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. নূরুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অন্যতম নেতা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড