বীর প্রতীক মো. এজাজুল হক খান
মো. এজাজুল হক খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) ১১নং সেক্টরের ও কামালপুর যুদ্ধের সাহসী সৈনিক এবং স্বাধীনতার পর অনারারি ক্যাপ্টেন। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৯শে অক্টোবর কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার গোয়ালগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কিফাত আলী খান এবং মাতার নাম সাহেরা খানম।
মো. এজাজুল হক খান ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম ইবিআরসি-তে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে কমান্ডো ব্যাটালিয়নে পদায়ন করা হয়। ১৯৭১ সালে ৩য় কমান্ডো ব্যাটালিয়ন হিসেবে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার পর মো. এজাজুল হককে বন্দি করে হানাদার বাহিনী ঢাকায় পাঠায়। জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকারনামা নিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয় এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করে। কয়েকদিন পর তিনি মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়ি যান এবং সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তীতে তাঁকে বাংলাদেশ ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্স কর্তৃক প্রশিক্ষিত সৈনিক হিসেবে ১১ নম্বর সেক্টরে পদায়ন করা হয়। ১১নং সেক্টরে তিনি সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। জামালপুর ও ধানুয়া কামালপুরের বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি আবু তাহেরের সঙ্গে পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করেন।
ভারতের সীমান্তবর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর বিওপি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যন্ত শক্ত ঘাঁটি ছিল। এখানে চতুর্দিকে অসংখ্য মাইন ছড়ানো ছিল। হানাদারদের মূল প্রতিরক্ষার চারপাশে ছিল অসংখ্য বাংকার। মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর পাকিস্তান ঘাঁটির কাছাকাছি পরিখা খনন করে অবস্থান নেন। কয়েকটি দল এবং গ্রুপে ভাগ হয়ে একাধিকবার এ ঘাঁটি দখলে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান, কিন্তু সফল হতে পারেননি। ১৪ই নভেম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে এক শক্তিশালী আক্রমণ চালানো হয়। এ-সময় একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন মো. এজাজুল হক খান। হানাদারদের পাল্টা আক্রমণে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর দুর্গের মধ্যে প্রায় প্রবেশ করেন। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি শেল মেজর তাহেরের সামনে বিস্ফোরিত হয় এবং তিনি পায়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁর একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মো. এজাজুল হক কিছুটা সামনে থাকায় দ্রুত এসে মেজর তাহেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। সেদিনের যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. এজাজুল হক খান-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে মো. এজাজুল হক খান সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন এবং অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৮ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী মালিদা খানম। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড