বীর প্রতীক মো. ওয়ালিউল ইসলাম
মো. ওয়ালিউল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা, ‘প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্স’ সম্পন্নকারী, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এবং পরবর্তীতে মেজর। তিনি ১৯৫৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল সদর উপজেলার উত্তর আলোকান্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. ওয়াজেদ আলী এবং মাতার নাম আশরাফুন নেছা। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি কুমিল্লা ইস্পাহানি পাবলিক হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ-সময় তিনি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।
২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মো. ওয়ালিউল ইসলাম তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৩০শে মার্চ তিনি কালুরঘাটে চলে যান এবং অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। কালুরঘাট, মহালছড়িসহ বেশ কয়েকটি প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে হরিণা ট্রেনিং সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং চলাকালীন সময় তিনি ‘প্রথম বাংলাদেশ ওয়্যার কোর্স’-এ অন্তর্ভুক্ত হন। অতঃপর তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি জেলায় অবস্থিত মূর্তি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ১৫ সপ্তাহের ট্রেনিং শেষে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তাঁকে মেজর এ টি এম আমিনুল হকের অধীনে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘বি’ কোম্পানির কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। তাঁর পোস্টিং হয় সিলেট অঞ্চলে। তিনি সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার ছোটলেখা, ভানুগাছ প্রভৃতি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মৌলভী বাজার জেলার কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারে মেজর দাউদের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ১লা ডিসেম্বর মো. ওয়ালিউল ইসলামের নেতৃত্বে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি গ্রুপ ও মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ মো. ওয়ালিউল ইসলাম ভানুগাছ বাজারে স্থাপিত পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং এক পর্যায়ে তারা মর্টার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। মো. ওয়ালিউল ইসলাম এতে হতোদ্যম না হয়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। উভয় পক্ষের প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী ঘাঁটি ছেড়ে মৌলভীবাজারের দিকে পালিয়ে যায়। এর ফলে ভানুগাছ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। পাকবাহিনীর ফেলে যাওয়া বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ তাঁদের হস্তগত হয়। এ যুদ্ধে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪-৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মো. ওয়ালিউল ইসলামের অসাধারণ রণকৌশল ও সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মো. ওয়ালিউল ইসলাম ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাসে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। এ দম্পতি ১ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক-জননী। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড