You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. ওসমান গনি - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. ওসমান গনি

মো. ওসমান গনি, বীর প্রতীক (১৯৩২-১৯৯৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩২ সালের ১লা এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানার মিঠাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চগড় শহরের বর্তমান এসপি বাংলোর উল্টোদিকে মিঠাপুর গ্রামের অবস্থান। ওসমান গনির পিতার নাম মো. আজিজুল হক এবং মাতার নাম আফরিন নেছা। তিনি স্থানীয় হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন।
মো. ওসমান গনির কর্মজীবন শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে চাকরির মাধ্যমে। পুলিশ বাহিনীর একজন সাহসী, দক্ষ ও চৌকস সদস্য হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে ওসমান গনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেন।
ইপিআর-এর সৈনিক হিসেবে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন। যোগ্যতা ও দক্ষতার জন্য তিনি সুবেদার মেজর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ওসমান গনি রংপুরে ইপিআর- এর চিলমারী উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যার পর ইপিআর-এর বাঙালি ও অবাঙালি সৈনিকদের মধ্যে চিলমারীতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। ওসমান গনি বাঙালি সৈনিকদের নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এরপর তিনি রংপুর ও দিনাজপুর এলাকায় বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এ পর্যায়ে তিনি পার্বতীপুর, কাঞ্চন, দিনাজপুর, নাড়াবাড়ী, কিশোরীগঞ্জ ইত্যাদি স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন।
এপ্রিলের শেষের দিকে ওসমান গনি ভারতে যান। সেখানে তিনি অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রামপুর ঘাঁটিতে যোগ দেন। তিনি ছাত্র-তরুণদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে ওসমান গনি ৬ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। এ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নিয়ে সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে লড়াই করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. ওসমান গনিকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪১৮, খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৮)।
স্বাধীনতার পর ওসমান গনি সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)- এ যোগদান করেন। তিনি বিডিআর থেকে এডি বা এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ১২ই জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নাসিমা বানু। [জালাল আহমেদ] মো. কামরুজ্জামান খলিফা, বীর বিক্রম (শহীদ ১৯৭১) হাবিলদার ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম বগুড়া জেলার অন্তর্গত গাবতলী উপজেলার সোনামোয়া গ্রামে। তাঁর মাতা করিমন নেছা এবং পিতা শরাফত উল্লাহ। চাকরি জীবনের শুরুতে মো. কামরুজ্জামান পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত হন। পরে ইপিআর বাহিনীতে যোগ দিয়ে হাবিলদার পদ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি রাজশাহী ইপিআর উইং হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর গণহত্যা শুরু করলে অন্য বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে তিনি বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন। ২৬শে মার্চ ছাত্র- জনতার সঙ্গে মিলে রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৩১শে মার্চ তিনি রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও ১ জন বন্দি হয়। ৬ই এপ্রিল ৪ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে তাঁরা পাকবাহিনীকে হটিয়ে রাজশাহী শহর শত্রুমুক্ত করেন এবং ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যদের রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ করে রাখতে সক্ষম হন। এরূপ অবস্থায় পাকবাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ পিছু হটে নিরাপদ অবস্থানে চলে যায়। কিন্তু কামরুজ্জামান তাঁর বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এ-সময় বিপরীত দিক থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ শুরু করলে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু কামরুজ্জামান নিজ অবস্থানে থেকে শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করে চলেন। তিনি শত্রুপক্ষের ৪টি গাড়ি ধ্বংস এবং ২৫ জনের মতো সৈন্য হত্যা করতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে পাকসেনারা তিন দিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলে সরাসরি গুলি করলে তিনি শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন এবং নিজ জীবন উৎসর্গ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. কামরুজ্জামান খলিফা-কে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী জাহেদা বেগম। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড