You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. কুদ্দুস মোল্লা - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. কুদ্দুস মোল্লা

মো. কুদ্দুস মোল্লা, বীর প্রতীক (১৯২০-১৯৯২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার কাইতমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব ফজলে আলী মোল্লা এবং মাতার নাম আমেনা বেগম। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তিনি ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে বিপথগামী ছিল এবং এজন্য বেশ কয়েকবার কারাভোগও করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে বরিশাল আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসে। গোপন সূত্রে এ খবর জানতে পেরে ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরোধ বাহিনী গৌরনদীর উত্তরে কটকস্থলে তাদের প্রতিরোধের জন্য অবস্থান নেয়। দেশের টানে মো. কুদ্দুস মোল্লাও তাঁর দলবল নিয়ে ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। এদিন দুপুরে কটকস্থলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে মো. কুদ্দুস মোল্লা ও স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধারা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন প্রতিরোধযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দা শহীদ হন। এরপর মো. কুদ্দুস মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য দলবলসহ ভারতে চলে যান। ভবিষ্যতে সঠিক পথে চলার শর্তে তাঁকে এবং তাঁর দলবলকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রিক্রুট করে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। অতঃপর তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে জুলাই মাসে দেশে ফিরে এসে ৯নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ জলিলের অধীন টাকি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, ছবিপুর প্রভৃতি স্থানের ইন- চার্জ এবং বেইজ কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এসব এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। সেসব যুদ্ধের মধ্যে মুলাদী উপজেলার ছবিপুরের যুদ্ধটি ছিল খুবই স্মরণীয়।
একদিন আড়িয়াল খাঁ নদী দিয়ে দুটি জাহাজযোগে পাকিস্তানি বাহিনীর অনুগত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছিল। কুদ্দুস মোল্লা স্থানীয় মুক্তিকামী জনতার সহযোগিতায় নদীর পাড়ে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ঐ জাহাজের ওপর আক্রমণ করেন। পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষ কুদ্দুস মোল্লার নিকট আত্মসমর্পণ করে। এতে ১১টি অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. কুদ্দুস মোল্লাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৯২ সালের ২৭শে নভেম্বর ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। নিজ গ্রামের বাড়ি কাইতপাড়ায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্ত্রী হাজেরা খাতুন ও নূরজাহান বেগম। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড