বীর প্রতীক মো. ইদ্রিস আলী
মো. ইদ্রিস আলী, বীর প্রতীক (১৯৫২-২০১৪) শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী ও সিলেট অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ৫ই মে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মো. ইসমাইল এবং মাতার নাম জরিনা খাতুন।
মো. ইদ্রিস আলী ১৯৭১ সালে এসএসসি পাস করে সিলেট মদন মোহন কলেজে নৈশ শাখায় ভর্তি হন। একই সঙ্গে তিনি দোয়ারাবাজার বড়খাল জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দোয়ারাবাজার দখল করলে মো. ইদ্রিস আলী মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। তিনি ভারতের মেঘালয়ের ইকো-১ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রথম ব্যাচে ২৮ দিনের গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম দিকে তাঁরা “হিট এন্ড রান’ পদ্ধতিতে রাতের অন্ধকারে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে গেরিলা হামলা চালিয়ে আবার ভারতে চলে যেতেন। এভাবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলেন।
জুলাই মাসে মো. ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে দোয়ারাজারের বাংলাবাজার (পূর্বের নাম পাকিস্তান বাজার) এলাকায় প্রেরণ করা হয়। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের কাছাকাছি টেবলাই, চাঁনপুর, জয়নগর প্রভৃতি গ্রামে বাংকার খুঁড়ে অবস্থান নেন।
তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি ছাতক-টেংরাটিলা গ্যাস লাইন কয়েকবার উড়িয়ে দেয়। ১৩ই অক্টোবর তাঁরা হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ছাতক সিমেন্ট কারখানা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। মো. ইদ্রিস আলী সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জয়নগর, নোয়ারাই, হাদাটিয়া, টেংরাটিলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধেও সাহসিকতার পরিচয় দেন। এছাড়া তিনি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের খবরাখবর মুক্তিযুদ্ধের নিয়মিত বাহিনী এবং মিত্রবাহিনী-কে অবহিত করতেন
মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. ইদ্রস আলী-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পরে তিনি পুনরায় শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান। তিনি দোয়ারাবাজারের বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসাম্মৎ উম্মে কুলসুম। এ দম্পতির ৪ পুত্র সন্তান রয়েছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড