বীর প্রতীক মো. আব্দুল গণি
মো. আব্দুল গণি, বীর প্রতীক (১৯২৮-২০০২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৮ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সোনাইমুড়ি থানা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এ গ্রামের অবস্থান। আব্দুল গণির পিতার নাম আহমদ উল্লা বেপারী এবং মাতার নাম হাজেরা বেগম। তিনি স্থানীয় স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরে কুমিল্লায় কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সাহসী ও সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন।
মো. আব্দুল গণি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ইপিআর এর ফেনীর জয়লস্করে অবস্থিত ৪র্থ ব্যাটালিয়নে সিপাহি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে আব্দুল গণি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি সিলেটের তামাবিল এলাকায় একাধিক প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। তামাবিল পাকবাহিনীর দখলে চলে গেলে তিনি ভারতে প্রবেশ করে মেজর মীর শওকত আলী, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বাধীন ৫ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন। সিলেটের জৈন্তাপুর, তামাবিল ও জাফলং সাব-সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। ভারত থেকে এসে এ সাব-সেক্টর এলাকায় মো. আব্দুল গণি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। মে মাসে তামাবিলে পাকসেনাদের ওপর পরিচালিত এক আক্রমণে মো. আব্দুল গণি এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্ব দেন। এ অপারেশনে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। অক্টোবর মাসে মো. আব্দুল গণি তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গোয়াইনঘাটের ভাঙ্গা সেতু এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনা ও রাজাকারদের আক্রমণ করেন। এ আক্রমণের সময় আব্দুল গণির রণকৌশল ও সাহসের কাছে পাকসেনারা বিপর্যস্ত ও পরাজিত হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. আব্দুল গণিকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪৩০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৮০)।
স্বাধীনতার পর আব্দুল গণি বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি)-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন সততা ও দক্ষতার সঙ্গে বিডিআর-এ দায়িত্ব পালন করায় তিনি সুবেদার পদে উন্নীত হন। কর্মজীবনে তিনি একাধিকবার মেডেল ও পদকে সম্মানিত হন। ১৯৮৭ সালে মো. আব্দুল গণি অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর ১৯৯৬ সালে তাঁকে গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এখানে তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ২০০২ সালের ৩১শে মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড