You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. আব্দুল মজিদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. আব্দুল মজিদ

মো. আব্দুল মজিদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি রংপুর সদর উপজেলার তামপাট ইউনিয়নের ঘাঘটপাড়া (আক্কেলপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কছিমউদ্দিন আহমেদ, মাতার নাম মরিয়ম বেগম। তাঁর পিতা ছিলেন একজন পল্লি চিকিৎসক।
মো. আব্দুল মজিদ নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তা তিনি সেনানিবাসে বসে প্রত্যক্ষ করেন। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান এবং আগরতলায় ভাসানিয়া ক্যাম্পে যোগদান করেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হন এবং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর অধীনে যুদ্ধ করেন। মো. আব্দুল মজিদ গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টরের চারগাছ, কৃষ্ণপুর বাগাবাড়ী, কসবা, গঙ্গাসাগরসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার চন্দ্রপুর যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কসবা রেলস্টেশন থেকে আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রপুরের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ এলাকা ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব- সেক্টরের অধীনে ছিল। গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন আইনউদ্দীন, বীর প্রতীক (পরে মেজর জেনারেল)। ২১শে নভেম্বর ঈদের দিন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে চন্দ্রপুর আক্রমণ করে। ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্বে একজন মেজর ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজ ছিলেন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার ফলে তাদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অপরদিকে লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল আজিজসহ মুক্তিবাহিনীর ২২ জন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার ও ৩ জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ ৪৫ জন শহীদ হন। সারারাত যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী চন্দ্রপুর থেকে পিছু হটলেও পরবর্তীতে তারা এলাকাটি পুনর্দখল করে। এ যুদ্ধে মো. আবদুল মজিদ ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তারপরও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। সহযোদ্ধাদের অনেকের মৃত্যু চোখের সামনে দেখেও তিনি দমে যাননি। এ যুদ্ধের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতের লক্ষ্ণৌ সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি পুনরায় যুদ্ধে অংশ নেন|
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. আবদুল মজিদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী মোছা. শামসুন নাহার বেগম। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড