বীর প্রতীক মো. আবদুল মজিদ
মো. আবদুল মজিদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালের ১১ই নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার দোয়রাবাজার উপজেলার ৯নং ইউনিয়নের আজবপুর (ট্যাংরাটিলা) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল গণি ও মাতার নাম সকিনা বেগম। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম।
মো. আবদুল মজিদ ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। এপ্রিল মাসে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে মো. আবদুল মজিদ কোনোরূপ ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অপেক্ষা না করে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল মাসের শুরুতে হানাদার বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য তাঁর বাড়ির পাশে অবস্থিত টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড পাহাড়া দেয়ার জন্য অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এ সময় আবদুল মজিদ স্থানীয় কয়েকজন যুবকসহ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। তাঁদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য মেঘালয়ের ইকো ওয়ান ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠানো হয়। তৃতীয় ব্যাচে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে তাঁরা বালাটে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ গ্রুপটি মে মাসে সুরমা নদীর উত্তর পাড়ের বেরিগাঁওয়ে প্রথম অপারেশনে অংশ নেয়। কিন্তু এলাকাটি একেবারে অপরিচিত হওয়ায় এ অপারেশনে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এরপর মো. আবদুল মজিদ ৫নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলীর অধীনে ক্যাপ্টেন হেলালের নেতৃত্বে সেলা সাব-সেক্টরে পাইওনিয়ার কোম্পানির হয়ে নরসিংহপুর, টেংরাটিলা, আজবপুর, বালিউড়া, রাউলি, জাউয়া, রাধানগর প্রভৃতি এলাকার সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ছাতকের বুরকি এলাকার সম্মুখ যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বর মাসে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের জাউয়া ব্রিজ অপারেশনে মো. আবদুল মজিদ সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ ব্রিজ রক্ষায় রাজাকারদের দিয়ে পাহাড়ার ব্যবস্থা করে। অপারেশনের সময় মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে ৫ জন সশস্ত্র রাজাকারকে আটক করে। এরপর তাঁরা এক্সপ্লোসিভ দিয়ে ব্রিজটি ধ্বংস করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার মো. আবদুল মজিদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনী আবদুল মজিদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে তিনি নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু এবং নিজস্ব কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম লুৎফা বেগম। এ. দম্পতি ৪ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড