You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মো. আজাদ আলী - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মো. আজাদ আলী

মো. আজাদ আলী, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৯) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৯ সালের ৩০শে নভেম্বর রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার কুশবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. আরজান আলী প্ৰামাণিক, মাতার নাম রাজিয়া খাতুন। মো. আজাদ আলী ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা এবং ছাত্রসমাজের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে তিনি খুবই প্রতিবাদী ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মে মাসে তিনি মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে চলে যান এবং চাকুলিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৭নং সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি চারঘাট উপজেলার আড়ানি, গোচরগাঁও, বাউশা বাজার, বাঘা, ডাকরা, আড়ানি রেলওয়ে ব্রিজ, নন্দনগাছি প্রভৃতি এলাকায় গেরিলা অপারেশন করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনী নাটোর-আবদুলপুর রেললাইন সচল রাখতে নিয়মিত টহল দিত। নভেম্বর মাসে মো. আজাদ আলীর নেতৃত্বাধীন গেরিলা দলের ওপর হানাদারদের টহল ট্রেন এম্বুশ করার দায়িত্ব পড়ে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২২শে নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা জনবসতিহীন নাবিরপাড়ায় রেললাইনে বিস্ফোরক লাগাতে থাকেন। এমন সময় দূর থেকে একটি টহল ট্রেনের সার্চলাইট দেখে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে সুইচ লাগানোর মুহূর্তে আকস্মিকভাবে তা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে মো. আজাদ আলীর বাম হাতের কবজি উড়ে যায়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে টহল ট্রেনটি দ্রুত এগিয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধাদের এম্বুশের মধ্যে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ১৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য মো. আজাদ আলীকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে মো. আজাদ আলী ঢাকার বারিধারাস্থ ডিওএইচএস-এ বসবাস করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মিসেস আজাদ সুলতানা। এ দম্পতি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড