মেহেন্দীগঞ্জ থানা গণহত্যা (মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল)
মেহেন্দীগঞ্জ থানা গণহত্যা (মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল) সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় শতাধিক মানুষ শহীদ হন।
নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ থেকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মানুষ রক্ষা পায়নি। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী কয়েকবার মেহেন্দীগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে। রাজাকারদের কমান্ডার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে ফজলুল হক শান্তি কমিটির নেতা ডা. মোশাররফ খান, নাসিরউদ্দিন তালুকদার এবং উলানিয়ার মির্জা বাড়ির নয়া মিয়া অম্বিকাপুর, চরহোগলা, কালিকাপুর, সোনামুখী, চরগোপালপুরসহ আশপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে থানায় এনে জড়ো করে। ২৭শে নভেম্বর দারোগা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী থানায় জড়ো করা শতাধিক লোককে দড়ি দিয়ে বেঁধে থানার ঘাটলায় গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল বাতেন এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। থানার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে যেখানে ৩টি খাল মিলিত হয়েছে, সেখানে এ সকল মানুষকে হত্যা করা হয়। থানার সামনে এ গণহত্যা হয় বিধায় শহীদদের কোনো লাশ নিকট আত্মীয়-স্বজন কেউ আনতে সাহস পায়নি। এমনকি ভয়ে কেউ বলতে সাহস পর্যন্ত পায়নি যে, তাদের কেউ হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছে। এ কারণে সমস্ত মৃতদেহ খাল ও নদীর পানিতেই মিশে গেছে। এ গণহত্যায় ২৫ জন শহীদের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- সুলতান আহমেদ, আবদুর রশিদ সিকদার, নরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, মো. কাজল, মফিদুল হক, মানিক হাওলাদার, সেরাজুল হক, হাসেম আলী হাওলাদার, আবু বকর, ওমর আলী হাওলাদার, আবদুস শুক্কুর সিকদার, হরিমোহন পোদ্দার, জলিল উদ্দীন বেপারী, সৈয়দ মো. শাহজাহান, শাহজাহান তালুকদার, পোপ বিহারী নন্দী, হারুন সিকদারসহ ৪ ভাই এবং হাসেম হাওলাদারের বাড়ির ৫ জন। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড