You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম মুজিবুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম মুজিবুর রহমান

মুজিবুর রহমান, বীর উত্তম (১৯৩৬-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৬ সালে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দলিল উদ্দিন সরদার এবং মাতার নাম লেকজান বেগম। তিনি ১৯৫৪ সালে লোহাগড়া হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) পুনর্গঠিত হলে তাঁর কর্মদক্ষতা ও অন্যান্য গুণাবলি বিবেচনায় তাঁকে এ বাহিনীতে আত্তীকরণ করা হয়। তিনি এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জোবেদা খাতুন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মুজিবুর রহমান যশোর সেক্টরের অধীনে চুয়াডাঙ্গা ইপিআর ৪ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি তাঁর উইং-এর বাঙালি অধিনায়ক মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্যান্য ইপিআর সদস্যদের নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া অঞ্চলের সবগুলো প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা ৩০শে মার্চ কুষ্টিয়া মুক্ত করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করেন।
১৮ই এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ-পশ্চিম রাণাঙ্গনের সদর দফতর ইছাখালি থেকে শার্শা উপজেলার বেনাপোলে স্থানান্তরিত করা হয়। এ সদর দফতরের কাছাকাছি পূর্বদিকে কাগজপুকুরে মুক্তিবাহিনীর দুটি কোম্পানি নিয়ে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য, ২৩শে এপ্রিল নবগঠিত মুজিবনগর সরকার-এর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বেনাপোল সদর দফতর পরিদর্শন করেন। ঐদিনই বিকেলে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কাগজপুকুর প্রতিরক্ষা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণে এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থান সুরক্ষিত করার পূর্বেই ২৪শে এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ওপর আবার আক্রমণ করে; শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী দলের গোলাবারুদ প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসে। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট গোলাবারুদ পৌছে দেয়ার কাজটি খুবই ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। তা জেনেও এ কঠিন দায়িত্ব তিনি নিজহাতে তুলে নেন। গোলাগুলির মধ্যেই জিপে করে তিনি মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবারুদ পৌঁছে দিতে থাকেন। একটি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে তিনি দেখেন গানম্যান গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। তাঁর সহযোদ্ধারা মেশিনগানের লক খুলে তা অকেজো অবস্থায় ফেলে পিছু হটে চলে গেছেন। এমতাবস্থায় মুজিবুর রহমান পার্শ্ববর্তী মেশিনগান পোস্ট থেকে লক সংগ্রহ করে এই মেশিনগানে লাগিয়ে এটিকে সচল করে নিজেই শত্রুসেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁর মেশিনগানের গুলি শেষ হয়ে যায়। শত্রুসেনারা চারদিক থেকে তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং তাদের ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন। এরই সঙ্গে পতন ঘটে কাগজপুকুর প্রতিরক্ষা ঘাঁটির।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ নায়েক সুবেদার মুজিবুর রহমানকে ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৫১, খেতাবের সনদ নং ৪৪)। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড