মুক্তিযুদ্ধের পত্রপত্রিকা
মুক্তিযুদ্ধের পত্রপত্রিকা ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের পাশাপাশি যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকাসহ অবরুদ্ধ শহরগুলোর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক-সাপ্তাহিকে পাকিস্তানি জান্তার ফরমায়েশ অনুযায়ী খবরাখবর পরিবেশিত হতো। এছাড়া কিছু জেলায় পাকিস্তানি দখলদারদের পক্ষেও সাপ্তাহিক- পাক্ষিক বেরিয়েছিল। এমত পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, মুজিবনগর ও বহির্বিশ্ব থেকে অর্ধশতাধিক পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়। এসব সাপ্তাহিক-পাক্ষিক পত্রপত্রিকা মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়; বিশ্বজনমত গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের কতিপয় মুক্তাঞ্চল এবং ঢাকাসহ শত্রু পরিবেষ্টিত এলাকা থেকে গোপনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে পত্রিকা প্রকাশিত হতো। মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা কার্যক্রম কলকাতা, আগরতলাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিচালিত হতো। এছাড়া লন্ডন, নিউইয়র্কসহ ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন শহরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সংগঠন বা একশন কমিটিসমূহের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হয়। জয় বাংলা, বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলা-সহ আরো কিছু নামে একাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বেশির ভাগ পত্রপত্রিকা ছিল অনিয়মিত ও স্বল্পস্থায়ী। এসব পত্রপত্রিকা, বিশেষ করে দেশের ভেতর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো আকারে ছোট ও পৃষ্ঠা সংখ্যা কম থাকত। কোনো-কোনো পত্রিকা সাক্লোস্টাইলে ছেপে প্রকাশিত হতো। এমনকি দু-একটি পত্রিকা হাতে লিখেও প্রকাশিত হয়। পত্রিকাগুলোর মূল্য ছিল ১০ পয়সা থেকে ৬০ পয়সা।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পত্রপত্রিকার মধ্যে নিয়মিত ও উল্লেখযোগ্য ছিলো আওয়ামী লীগ-এর মূখপত্র সাপ্তাহিক জয় বাংলা। এর সম্পাদক ছিলেন আহমদ রফিক। টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল মান্নানের ছদ্মনাম ছিল এটি। এছাড়া মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী-র প্রতিষ্ঠিত গণমুক্তি, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর মুখপত্র নতুন বাংলা, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং কাজী জাফর আহমেদ, হায়দার আকবর খান রনো, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির চট্রগ্রাম বিভাগ থেকে স্বাধীন বাংলা প্রকাশিত হয়। তবে অধিকাংশ পত্রপত্রিকা বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিবাহিনী, সংগঠন বা মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রকাশিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-এর বহির্বিশ্ব মিশনের পক্ষে বাংলাদেশ বুলেটিন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতর থেকে ক্রোড়পত্র ওরা দুর্বার ওরা দুর্জয় প্রকাশিত হয়। এতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য এবং দেশবাসী, মুক্তিবাহিনী ও বিশ্ববাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর বক্তব্য প্রকাশিত হতো।
মুজিবনগর ও অবরুদ্ধ বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকাগুলোতে রণাঙ্গনের সংবাদ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, শরনার্থীদের দুর্ভোগ, মুজিবনগর সরকারের বক্তব্যসহ নানা প্রতিবেদন-বিশ্লেষণ থাকত। বহির্বিশ্বের পত্রিকাগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য- সমর্থনের জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতো। পত্রপত্রিকাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-
জয় বাংলা
সাপ্তাহিক জয় বাংলা আওয়ামী লীগের মুখপত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এটি মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন আহমদ রফিক (আবদুল মান্নান এমএনএ) এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মতিন আহমদ চৌধুরী। ভারতে যোগাযোগের ঠিকানা ছিল- বাংলাদেশ মিশন, ৯ সার্কাস এভিনিউ, কলকাতা ১৭। এটি ১১ই মে ১৯৭১ আত্মপ্রকাশ করে এবং শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২৪শে ডিসেম্বর পত্রিকাটির মোট প্রকাশিত সংখ্যা ৩৪টি। ট্যাবলয়েট সাইজের পত্রিকাটির প্রথমে মূল্য ছিল ২০ পয়সা এবং ৩য় সংখ্যা থেকে মূল্য ২৫ পয়সা করা হয়। পত্রিকাটিতে রণাঙ্গনের খবর, মুজিবনগর সরকার ও রাজনীতিকদের বক্তৃতা-বিবৃতি, আন্তর্জাতিক সংবাদ ইত্যাদি থাকত। পত্রিকাটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর নিয়মিত কলাম ‘যা দেখছি যা ভাবছি’। জয় বাংলা পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছিল শিল্পী কামরূল হাসানের অঙ্কিত ইয়াহিয়ার মুখের ব্যঙ্গ চিত্র, যার শিরোনাম ছিল— ‘এই জানোয়ারটিকে হত্যা করতে হবে’।
বাংলাদেশ (Bangladesh )
মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বুলেটিন বাংলাদেশ প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেন ফেরদৌস মুরশিদ। উপদেষ্টা ছিলেন মওদুদ আহমেদ।
জয় বাংলা
রাজশাহী জেলার নওগাঁ থেকে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক ছিলেন হায়দার রহমত উল্লাহ। প্রকাশিত সংখ্যা ১১টি। এতে থাকত সম্পাদকীয়, সম্পাদকের আবেদন এবং পবিত্র কোরানের বাণী। এটি বিনা মূল্যে বিলি করা হতো।
জয় বাংলা
পত্রিকাটির সম্পাদক, প্রকাশক বা সংশ্লিষ্টদের নাম জানা যায়নি। ১৭ই জুলাই ১৯৭১ প্রকাশিত সংখ্যায় লেখা ছিল ‘বাংলাদেশ মুক্তিফৌজ’ কর্তৃক প্রকাশিত।
জয় বাংলা
পত্রিকাটিতে ‘স্বাধীন বাংলার সিলেট জেলার মুখপত্র’ উল্লেখ থাকত। এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক আব্দুল বাসিত। মূল্য ছিল ২০ পয়সা। সার্কুলেশন ছিল প্রায় আড়াই হাজার কপি। পত্রিকাটি প্রকাশের নেপথ্যে ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা। পত্রিকাটি কিছুদিন বের হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ
Saved
পত্রিকাটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র। সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম গোপন রাখা হয়। প্রথম প্রকাশিত হয় একাত্তরের জুলাই মাসে। ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত ২৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এতে রণাঙ্গনের সংবাদ ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশিত হতো। মূল্য ছিল ১০ পয়সা। ২৬শে মার্চ প্রকাশিত পত্রিকার একটি শিরোনাম ছিল ‘মুক্তির আনন্দে উচ্ছল সোনার বাঙলা’।
বাংলাদেশ
ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আবুল হাসান চৌধুরী এবং প্রকাশক আবদুল মমিন। মে মাস থেকে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ
পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালেহা বেগম। প্রকাশক ছিলেন রণজিৎ দাস। সাপ্তাহিক এ পত্রিকাটির মূল্য ছিল ১০ পয়সা।
বাংলাদেশ (বরিশাল সদর)
বরিশাল থেকে প্রকাশিত এ পত্রিকাটির সম্পাদক মণ্ডলীতে ছিলেন এস এম ইকবাল, মিন্টু বসু ও হেলাল উদ্দিন। এর প্রকাশনায় ছিলেন হারেচ এ খান, এনায়েত হোসেন মিলন এবং মুকুল দাস। ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশ (বরিশাল সদর)- আত্মপ্রকাশ করে। এদিন এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় এবং এটিই ছিল শেষ সংখ্যা।
বাংলাদেশ
পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি এটি সম্পদনা করতেন কীর্তি ছদ্মনামে। হাতে লেখা পত্রিকাটির মূল্য ছিল ২৫ পয়সা। পত্রিকার সংখ্যাগুলো নিয়ে ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ : মুক্তিযুদ্ধে ৭০ দিন’ নামে সম্পাদক রহমানের কীর্তির বই প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ
পত্রিকাটি প্রবাসী সরকারের জালালাবাদ আঞ্চলিক তথ্য ও গণসংযোগ দফতর থেকে প্রথমে পাক্ষিক এবং পরে সাপ্তাহিক আকারে প্রকাশিত হতো। সম্পাদক ছিলেন আবদুল মতিন চৌধুরী। এর ১৭টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ৮ পৃষ্ঠার এ পত্রিকাটির সংবাদ সংগ্রহের মূল উৎস ছিল সি আর দত্তের রেজিস্টার। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অপারেশনের খবর সংগ্রহ করা হতো। মেজর জিয়ার রেজিস্টার থেকেও খবর সংগ্রহ করা হতো। পত্রিকাটির সার্কুলেশন সংখ্যা ছিল ২০০০ কপি। এর মধ্যে ১০০০ কপি মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ প্রদান ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। মেজর সি আর দত্তের সেক্টরে ৫০০ কপি, মেজর জিয়াউর রহমানের সেক্টরে ৩০০ কপি এবং বিভিন্ন শরণার্থী শিবির-এ ২০০ কপি প্রদান করা হতো। বাকি ১০০০ কপি সম্পাদক নিজে ফেরি করে বিক্রি করতেন। এর মূল্য ছিল ২৫ পয়সা। পত্রিকার প্রকাশনা ব্যয় মেটানোর পর বাকি টাকা মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য ব্যয় করা হতো। স্বাধীনতার পর পত্রিকাটির ১১টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ
দৈনিক বাংলাদেশ নামে পত্রিকাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও (বর্তমান জেলা) থেকে প্রকাশিত হয়। প্রধান সম্পাদক ছিলেন কাজী মাজহারুল হুদা এবং প্রকাশক ও মুদ্রাকর কাজী আবদুর রহমান। ঠাকুরগাঁর বনশ্রী প্রেস থেকে এটি মুদ্রিত হতো। এর বিনিময় মূল্য ছিল ১৫ পয়সা। পত্রিকাটি ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত ৬টি সংখ্যা এবং পরে তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল থেকে ১৮ই জুন থেকে ৩০শে জুনের মধ্যে আরো ৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ
পত্রিকাটির সম্পাদক ও যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে আমিনুল হক বাবুল এবং অমল চন্দ্র পাল। চার পাতার পত্রিকাটির মূল্য ছিল ১৫ পয়সা। ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-এ প্রকাশিত ২য় সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল ‘গোল টেবিল নয়, রণাঙ্গনেই সমাধান’।
অভিযান
কবি-সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। এটি ১৮ই নভেম্বর ১৯৭১ আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম সংখ্যায় ছিল কবি সিকান্দার জাফরের গানের পংক্তি ‘প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত…আমাদের সংগ্রাম চলবেই’। যোগাযোগের ঠিকানা ছিল- ৮৪/৯ রিপন স্ট্রিট, কলকাতা ১৬।
উত্তাল পদ্মা
মুহাম্মদ আবু সাহিদ খান (আবু সাঈদ খান) এর সম্পাদক ছিলেন। রোশেমা বেগম কর্তৃক মুজিবনগর থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। পত্রিকাটির লেখালেখি ও প্রকাশনায় যুক্ত ছিলেন নিরঞ্জন অধিকারী, কমল কৃষ্ণ গুহ, মকসুদ আহম্মেদ রাজা, গৌরচন্দ্র সাহা ও সালমা বেগম। আত্মপ্রকাশ করে ২৪শে নভেম্বর ১৯৭১। এতে প্রথম পাতায় রাজনৈতিক ভাষ্যকারের মন্তব্য-প্রদিবেদন প্রকাশিত হয়— ‘স্বাধীনতা ব্যতিরেকে রাজনৈতিক সমাধান – কল্পনা করাও মহাপাপ’।
বিপ্লবী বাংলাদেশ
এটি বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন নূরুল আলম ফরিদ। পত্রিকাটি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইউসুফ হোসেন কর্তৃক মুদ্রিত এবং রফিক হায়দার রবিন কর্তৃক প্রকাশিত। প্রথম প্রকাশ ৪ঠা আগস্ট ১৯৭১। শেষ সংখ্যা বের হয় একাত্তরের ২৬শে ডিসেম্বর। প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল— “বিশ্ববিবেকের কাছে আবেদন’।
সোনার বাংলা
সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক ছিলেন সরকার কবীর খান, প্রধান উপদেষ্টা মতিউর রহমান এবং প্রকাশক কে জি মোস্তফা। পত্রিকাটিতে ‘মুক্তিবাহিনীর মুখপত্র’ উল্লেখ করা হয়। এর মূল্য ছিল বাংলাদেশে ১৫ পয়সা এবং ভারতে ২০ পয়সা।
বাংলার কথা
পত্রিকাটি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা নামে আত্মপ্রকাশ করে ১৪ই আগস্ট ১৯৭১। ২য় সংখ্যা (১লা সেপ্টেম্বর) থেকে নামকরণ করা হয় বাংলার কথা। এর সম্পাদক ছিলেন ওবায়দুর রহমান ও সহযোগী সম্পাদক মজিবুর রহমান। উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন ডা. মুহাম্মদ আলাউদ্দিন (এমপিএ), মুহ. আবদুল হাদী (এমপিএ) প্রমুখ। ঠিকানা লেখা থাকত ‘অবকাশ’, মুক্তনগর রাজশাহী। ৬ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির বিনিময় মূল্য ছিল ৩০ পয়সা। প্রথম সম্পাদকীয় ছিল— মুক্তিযুদ্ধ কি ও কেন’।
সোনার বাংলা
এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন এম এ শাহ, ভারপাপ্ত সম্পাদক এ বি এম জালাল উদ্দিন। দুজনের নামই ছিল ছদ্মনাম। প্রকৃতপক্ষে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোদাব্বির আলী মানিক ‘এম এ শাহ’ নাম ব্যবহার করতেন। অনুরূপভাবে সাংবাদিক আব্দুল বাসিতও তাঁর পারিবারিক নাম এ বি এম জালাল উদ্দিন-এর পরিবর্তে ঐ নাম ব্যবহার করতেন। সাপ্তাহিকী হলেও শেষের দিকে প্রতিদিন এর সান্ধ্য সংস্করণ প্রকাশিত হতো। পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে লেখা থাকত, ‘তামাবিল, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত’।
জাগ্রত বাংলা
ময়মনসিংহ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার আফসার উদ্দিন কর্তৃক এটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন হাফিজউদ্দিন আহমেদ। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১লা জুন ১৯৭১। পত্রিকাটি সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত হতো। শুভেচ্ছা মূল্য ছিল ৩০ পয়সা।
জাতীয় বাংলাদেশ
এর সম্পাদক ছিলেন এ এম এম আনোয়ার। পত্রিকাটি শেখ মোহাম্মদ শহীদ আনোয়ার কর্তৃক পূর্বাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৫ই নভেম্বর ১৯৭১। এর প্রথম সম্পাদকীয় ছিল— ‘এ সংগ্রাম সত্য, ন্যায়ের’।
স্বাধীন বাংলা
পত্রিকাটি ছিল কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির চট্রগ্রাম বিভাগের মুখপত্র। এর মূল্য ছিল ১০ পয়সা। ৩য় সংখ্যায় (১লা নভেম্বর ১৯৭১) পত্রিকার নামের পাশে বক্সের মধ্যে লেখা ছিল ‘আমাদের সামনে হাজার হাজার শহীদ বীরত্বের সঙ্গে জনগণের স্বার্থে প্রাণ বলি দিয়েছেন। তাহাদের সেই পতাকা উর্দ্ধে তুলিয়া আসুন আমরা আগাইয়া যাই তাহাদের সেই রক্ত চিহ্ন ধরিয়া।
স্বাধীন বাংলা
পত্রিকাটি সরকার কবীর খান কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত। এতে লেখা থাকত ‘স্বাধীন বাংলা মুক্তিবাহিনীর সাপ্তাহিক মুখপত্র’। মূল্য ১০ পয়সা।
স্বাধীন বাংলা
পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে জুন ১৯৭১। এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন জাহানারা কামরুজ্জামান। সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন এস এ আল মাহমুদ চৌধুরী। পত্রিকাটি এম এ মজিদ কর্তৃক বলাকা প্রেস জামালগঞ্জ, রাজশাহী থেকে মুদ্রিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান- (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মুজিবনগর সরকার)।
স্বাধীন বাংলা
এটি প্রথম প্রকাশিত হয় সেপ্টেম্বর ১৯৭১। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি খোন্দকার সামসুল আলম দুদু কর্তৃক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এর মূল্য ছিল ১৫ পয়সা।
স্বাধীন বাংলা
কাজী জাফর-রনো-মেননের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের মুখপত্র। প্রথম প্রকাশিত হয় অক্টোবর ১৯৭১। পত্রিকাটিতে আহ্বান ছিল- মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় সকল রাজনৈতিক শক্তিকে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার।
স্বাধীন বাংলা
এর সম্পাদক ছিলেন আ ম ম আনোয়ার। পত্রিকাটি চৌমুহনী, নোয়াখালী থেকে ২৬শে মার্চ থেকে এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়৷
সাপ্তাহিক বাংলা
পত্রিকাটি মাইকেল দত্ত সম্পাদিত এবং বিজয় কুমার দত্ত মুদ্রিত। একই সঙ্গে সিলেট ও মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত হয়। এর একটি সংখ্যার শিরোনাম ছিল— ‘কূটনীতির পথে নয়, রণনীতির মধ্যেই বাংলার মুক্তি’।
দুর্জয় বাংলা
সাপ্তাহিক দুর্জয় বাংলা-র সম্পাদক ছিলেন তূষার কান্তি কর। এর প্রিন্টার্স লাইনে উল্লেখ করা হয়- সিলেট সুরমা প্রকাশনী থেকে কান্তি কর কর্তৃক প্রকাশিত ও মুদ্রিত। প্ৰথম প্ৰকাশিত হয় ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭১।
নতুন বাংলা
পত্রিকাটি ছিল অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর মুখপত্র। প্ৰথম প্ৰকাশিত হয় ১৯শে জুলাই ১৯৭১। মোট ১৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে রণাঙ্গনের সংবাদের পাশাপাশি ন্যাপের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন থাকত।
সংগ্রামী বাংলা
এর প্রধান সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে আবদুর রহমান সিদ্দিক ও সৈয়দ আবদুল মতিন। সংগ্রামী বাংলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ৭১-এর ১৮ই অক্টোবর। সংখ্যাটি ছিল বিপ্লবী আলি আসাদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত।
সংগ্রামী বাংলা
এটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঠাকুরগাঁও এলাকার পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন এমদাদুল হক। সিরাজুল হক এমপিএ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। এর বিনিময় মূল্য ছিল ১০ পয়সা।
দাবানল
সাপ্তাহিক দাবানল-এর সম্পাদক ছিলেন মো. জিনাত আলী। এটি মুজিবনগর থেকে মো. সেলিম কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত হয় একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে। মূল্য ছিল ২৫ পয়সা। ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১ প্রকাশিত ২য় সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল— ‘আপোষের বাণী আগুনে জ্বালিয়ে দাও’।
দেশ বাংলা
ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ২৭শে অক্টোবর ১৯৭১। প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হতো। ভারতের ঠিকানা ছিল- ৩ হায়াত খান লেন, কলকাতা।
বাংলার বাণী
১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় হাফেজ হাবিবুর রহমানের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলার বাণী। এটি মুজিবনগর থেকে আমির হোসেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৭১। ৮ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির মূল্য ছিল ৩০পয়সা। এতে নিয়মিত কলাম লিখতেন সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।
বঙ্গ বাণী
পত্রিকাটি নওগাঁ থেকে প্রকাশিত হতো। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ জলিল। এর সম্পাদক ছিলেন কে এম হোসেন (খন্দকার মকবুল হোসেন)। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২৩শে মে ১৯৭১।
বাংলার ডাক
মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদক ও কার্যকরী সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে দীপক রায় চৌধুরী ও দুলাল রায়। অধ্যাপক ইউছুফ আলী এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ৫ম সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন ছিল ‘বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি – চালের দাম ১০০ টাকা, পাট কেউ কিনছে না’।
বাংলার ডাক
এর সম্পাদক ছিলেন সুশীল সেনগুপ্ত। এতে রণাঙ্গনের খবর ও সংবাদ পর্যালোচনা থাকত।
বাংলার মুখ (বাংলার কথা)
এটি ছিদ্দিকুর রহমান আশরাফীর সম্পাদনায় মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩ই আগস্ট ১৯৭১। মূল্য ছিল ২৫ পয়সা।
বাংলার মুখ
এটি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুয়াত উল ইসলাম পত্রিকাটি প্রকাশনার মূল উদ্যোক্তা। এর সম্পাদক ছিলেন জুলফিকার মতিন। একাত্তরের নভেম্বরে প্রকাশিত বাংলার মুখ-এর প্রথম সংখ্যার হেডলাইন ছিল ‘ষড়যন্ত্রের স্বৰ্গ পাকিস্তান’।
মুক্ত বাংলা
পত্রকাটি সিলেট এলাকা থেকে প্রকাশিত হয়। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও জেলা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবুল হাসনাত খান সাআদত ছিলেন মুক্ত বাংলা-র সম্পাদক। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন আকাদ্দস সিরাজুল ইসলাম এবং মুদ্রাকর ও প্রকাশক আবুল হাসনাত। পত্রিকাটির নামের নিচে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে সিলেট জেলার নির্ভীক স্বাধীন মুখপত্র’ – এ স্লোগান ব্যবহার করা হতো। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১। পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪ এবং শুভেচ্ছা মূল্য ছিল ২০ পয়সা। লন্ডনের জন্য ডাকমাসুলসহ মূল্য ছিল ১ টাকা। লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের, বিশেষ করে প্রেস মালিক মনি সিং-এর আর্থিক সহযোগিতায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে সিলেট অঞ্চলের রণাঙ্গনের খবর প্রাধান্য পেত।
মুক্ত বাংলা
এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত এক পাতার পত্রিকা। এর সম্পাদকের নাম গোপন রাখা হয় এবং সম্পাদনায় ‘দ-জ’ উল্লেখ করা হয়।
অমর বাংলা
এ সাপ্তাহিক পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন এ বি ছিদ্দিকী। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ৪ঠা নভেম্বর ১৯৭১। পি পি বড়ুয়া কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল— ‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু’।
স্বদেশ
এটি খুলনা জেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন গোলাম সাবদার সিদ্দিকী। প্রথম প্রকাশিত হয় ১৬ই জুন ১৯৭১। প্রথম সংখ্যায় সম্পাদকীয় ছিল— ‘আমাদের লক্ষ্য মৃত্যু অথবা জয়লাভ’। এর মূল্য ছিল ২০ পয়সা।
জন্মভূমি
মোস্তফা আল্লামার সম্পাদনায় একাত্তরের জানুয়ারিতে ঢাকায় সাপ্তাহিক জন্মভূমি প্রকাশিত হয়। মুজিবনগর থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয় ১৬ই জুলাই ১৯৭১। পত্রিকাটির মোট ৩০টি সংখ্যা বের হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল কখনো ৮ কখনো ১২। প্রচার সংখ্যা ছিল ১০-১২ হাজার কপি। এর মূল্য ছিল ৩০ পয়সা। এ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর প্রায়শই আকাশবাণী থেকে পুনঃপ্রচারিত হতো। অপারেশন ফেরত মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর অফিস ও বিভিন্ন নিউজ এজেন্সি থেকে খবর সংগ্রহ ছাড়াও পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টাররা নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করতেন। পত্রিকার নিজস্ব কোনো অফিস ছিল না। তবে প্রিন্টার্স লাইনে লেখা থাকত, ‘জন্মভূমি প্রেস এন্ড পাবলিকেশনের পক্ষে মোস্তফা আল্লামা কর্তৃক রবীন্দ্র এভিনিউ, মুজিবনগর, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, মুদ্রিত ও সম্পাদিত’। ভারতে যোগাযোগের প্রধান ঠিকানা ছিল, ‘৩৩/২ শশীভূষণ দে স্ট্রিট, কলকাতা-১২’।
আমার দেশ
সাপ্তাহিক আমার দেশ-এর সম্পাদক ছিলেন খাজা আহমদ। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ৭১-এর আগস্টে। ৬ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির মূল্য ছিল ২৫ পয়সা।
স্বাধীনতা
পত্রিকাটি কবি অরুণাভ কর্তৃক সম্পাদিত হয়।
স্বাধীনতা (প্রতিরোধ)
এটি একটি পাক্ষিক পত্রিকা। ঢাকা থেকে সাইক্লোস্টালে প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, মুনতাসীর মামুন ও কুতুবুর রহমান। স্বাধীনতা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরবর্তী সময়ে এর নাম পরিবর্তন করে প্রতিরোধ করা হয়। পত্রিকাটির মোট প্রকাশিত সংখ্যা ৬ ৷
মুক্তি
এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মাসিক সাহিত্যপত্র। এর সম্পাদক ছিলেন শফিউদ্দিন আহমেদ। পত্রিকাটি একাত্তরের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করে। সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত হতো। এর সূচনাতে সম্পাদকীয় ছিল— ‘বাংলাদেশে আজ যুদ্ধ’।
মুক্তি
এটি একটি পাক্ষিক পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন সাহাবুদ্দিন খান। পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ২রা অগ্রহায়ণ ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ। ঢাকার আড়াইহাজার থানা থেকে সাইক্লোস্টাইল করে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো।
মুক্তি
আসাম রাজ্য থেকে মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক সমিতির সহযোগিতায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। এর সম্পাদক ছিলেন খোন্দকার আবদুল মালেক (শহীদুল্লাহ) এমপিএ। সহকারী সম্পাদক ছিলেন ড. সুধাময় দাস, বার্তা সম্পাদক রমেন দত্ত ও স্টাফ রিপোর্টার মোজাম্মেল হক। পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে ৩রা সেপ্টেম্বর ১৯৭১। এর মূল্য ছিল ১৫ পয়সা।
মায়ের ডাক
এর সম্পাদক ছিলেন সালেহা বেগম এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শেখ আবদুর রহমান এমপিএ। শ্রীমতী নীলিমা দে কর্তৃক মুজিবনগর থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকাটি ছিল নারী সমাজের মুখপত্র। এতে মুক্তিযুদ্ধে নারীর তৎপরতা ও করণীয় বিষয়ক সংবাদ-নিবন্ধ প্রাধান্য পেত। ২রা অক্টোবর ১৯৭১ প্রকাশিত ২য় সংখ্যার সম্পাদকীয় ছিল- ‘শীত আসছে, মায়েরা তৈরি হোন’।
রণাঙ্গন
এটি ছিল টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিফৌজের মুখপত্র। এর সম্পাদক ‘রণদূত’, ছদ্মনাম। এর সহযোগী সম্পাদক ছিলেন ফারুক আহমেদ এবং প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী। প্রথম প্রকাশ ১১ই জুলাই ১৯৭১। সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত ৪ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির শুভেচ্ছা মূল্য ছিল ৫০ পয়সা।
রণাঙ্গন
সাপ্তাহিক রণাঙ্গন পত্রিকাটি মুক্তাঞ্চল পাটগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন মুস্তফা করিম। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন মতিয়র রহমান এমএনএ এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক করিম উদ্দিন আহমেদ এমপিএ। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যার একটি প্রতিবেদন ছিল— ‘বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিলা গেরিলা বাহিনী’।
লড়াই
এটি ছিল পূর্বাঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর বুলেটিন। এতে রণাঙ্গনের খবর ও রাজনৈতিক প্রতিবেদন থাকত। এর মূল্য ছিল ১০ পয়সা। এতে সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম উল্লেখ করা হতো না। বুলেটিন-১ এর সম্পাদকীয় ছিল— ‘অস্ত্রেই আমাদের অস্তিত্ব’।
ধূমকেতু
অর্ধসাপ্তাহিক ধূমকেতু পিরোজপুর থেকে প্রকাশিত এবং অমর সাহা কর্তৃক সম্পাদিত।
গ্রেনেড
এটি একটি সাপ্তাহিকী। বিচ্ছু নামক গেরিলা বাহিনী অবরুদ্ধ ঢাকার গোপন ঠিকানা থেকে সাইক্লোস্টাইলে ছেপে পত্রিকাটি প্রকাশ করত।
ইশতেহার
২৬শে মার্চের পর নঁওগা থেকে দৈনিক ইশ্বতোর-এর দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম ছিল না। প্রকাশনার সঙ্গে শফিক খান, মইনুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, আজিজুল হক, আ ফ ম আলমগীর, আখতার সিদ্দিকী, জহুরুল ইসলাম ইদুল, খায়রুল আলম প্রমুখ যুক্ত ছিলেন।
গণমুক্তি
এটি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এর সম্পাদক ছিলেন পারভীন খান। পত্রিকাটি জিয়াউল হক কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়- টিপু সুলতান রোড, ঢাকা-১। পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশ ১লা নভেম্বর ১৯৭১। এতে ন্যাপের রাজনীতির প্রতিফলন থাকত।
ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার
মুক্তিবাহিনীর ক্রোড়পত্র ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতরের পক্ষ থেকে এম আর আখতার মুকুল কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়।
অগ্নিবান
এটি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরাম থেকে সাইক্লোস্টাইলে ছেপে প্রকাশিত হতো। উপদেষ্টা পরিষদে আবদুল মতিন চৌধুরী, আবদুর রউফ খান, নরেশ চন্দ্র চৌধুরী, আবদুর রশীদ খান, নাসিমা সুলতানা প্রমুখ যুক্ত ছিলেন।
অগ্রদূত
এটি রংপুর জেলার রৌমারী থেকে প্রকাশিত হতো। সম্পাদক ছিলেন আজিজুল হক, সহ-সম্পাদক ছিলেন মতিয়ুর রহমান। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জে রহমান। সাদাকত হোসেন ছক্কু এমএনএ ও নূরুল ইসলাম পাপ্পু এমপিএ ছিলেন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। পত্রিকাটির মুদ্রণে ছিলেন মোহাম্মদ আলী। হারুন হাবিব এর অন্যতম সাংবাদিক ছিলেন। এর প্রথম প্রকাশ ৩১শে আগস্ট ১৯৭১। পত্রিকাটির মোট ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর মূল্য ছিল ২০ পয়সা।
Bangladesh
ইংরেজি সাপ্তাহিক বুলেটিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ মিশন, ওয়াশিংটন থেকে এম আর সিদ্দিকী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয়।
Bangladesh
বাংলাদেশ সমিতি, কানাডা, টরেন্টো শাখা কর্তৃক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।
Babgladesh Today
এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত পাক্ষিক।
Bangladesh News Letter
পত্রিকাটি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের মুখপত্র। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এস জাফরি কর্তৃক ৩৯১, কিংসটন রোড, লন্ডন থেকে এটি প্রকাশিত হয়।
Bangladesh News Letter
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, শিকাগো শাখা কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা।
The Nation
এটি মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন আবদুস সোবহান। যোগাযোগের ঠিকানা ছিল— ৯ ক্রকভ লেন, কলকাতা ১।
Bangla Desh West Coast news Bulletin
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, ক্যালিফোর্নিয়া শাখা কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা।
The People
পত্রিকাটি আবিদুর রহমান সম্পাদিত এবং মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত।
প্রতিনিধি
সাপ্তাহিক প্রতিনিধি বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে প্রকাশিত এর সম্পাদক ছিলেন আহমেদ ফরিদ উদ্দিন। পত্রিকাটির প্রিন্টার্স লাইনে থাকত— ‘সম্পাদক কর্তৃক রক্তলেখা ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত’
বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা
বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটির গণসংযোগ বিভাগ কর্তৃক গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা।
জনমত
এটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক। এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন এ টি এম ওয়ালী আশরাফ এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনিস আহমদ।
বাংলাদেশ পত্র
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, কলেজ স্টেশন শাখা কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
শিখা
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, নিউইয়র্ক শাখা কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রচারিত।
স্ফুলিঙ্গ
বাংলাদেশ সমিতি কুইবেক কর্তৃক প্রকাশিত। [আবু সাঈদ খান]
তথ্যসূত্র: হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদিত), বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, ৬ষ্ঠ খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮২; অধ্যাপক অজয় রায় ও শামসুজ্জামান খান (সম্পাদিত), বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, ৪র্থ খণ্ড (দ্বিতীয় পর্ব), বাংলা একাডেমি ২০১২; হাসিনা আহমেদ, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের পত্রপত্রিকা, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ বেঙ্গল স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড