You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মিজানুর রহমান খান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মিজানুর রহমান খান

মিজানুর রহমান খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) ১১নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৫২ সালের ১১ই জুন জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডা. রিয়াজুল ইসলাম খান এবং মাতার নাম নুরুন্নাহার খানম। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মিজানুর রহমান খান জয়দেবপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-তরুণ ও অন্যান্যদের যুক্ত করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মিজানুর রহমান খান জয়দেবপুরে ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত ছাত্র-সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এক পর্যায়ে তিনি ভারতে গিয়ে মেঘালয় রাজ্যের মহেন্দ্রগঞ্জে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মহেন্দ্রগঞ্জ ছিল মুক্তিযুদ্ধের ১১নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে তিনি অন্যদের সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মিজানুর রহমান খান কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে শেরপুর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ, মদনেরচর ও দেওয়ানগঞ্জে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল অন্যতম। তিনি বহুসংখ্যক রাজাকার, -আলবদর ও আলশামস সদস্যকে হত্যা ও গ্রেপ্তার করেন। তিনি বাসাইল থানার কামুটিয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে আহত হন। ১৪ই নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে কামালপুর যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মিজানুর রহমান খান-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম আলেফা বেগম মঞ্জু। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
মিজিবাড়ি গণহত্যা (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় জুলাই মাসের শেষদিকে। এতে ৭ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
ফরিদগঞ্জে পাকবাহিনী ও রাজাকার কর্তৃক গণধর্ষণ, গণহত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এখানে রাজাকারদের একটি দুর্ধর্ষ জল্লাদ স্কোয়াড ছিল। তাদের নেতা ছিল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান খলিল, ডা. ফয়েজ, ছেলামত উল্যা ভূঁইয়া, মাওলানা আমিনুল হক, ছেলামত উল্যা পণ্ডিত এবং পীরে কামেল বলে খ্যাত শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদুর রশিদ চৌধুরী খান বাহাদুর (রূপসা)। এদের নির্দেশে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এলাকায় ধর-পাকড়, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করে।
জুলাই মাসের শেষদিকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা খুব ভোরে এসে দত্রা বেপারী বাড়ি, সরকার বাড়ি, খাজুরিয়া মোল্লা বাড়ি ও খাজুরিয়া বাজার পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ভূঁইয়ার চৌচালা ঘরসহ তাঁদের বাড়ির ৬টি ঘরের মধ্যে ৫টি পুড়ে ছাই করে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের তাণ্ডবে তাঁর চাচা আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে হার্ট এটাকে মারা যান। হানাদাররা আশ- পাশের বাড়ি থেকে লোকদের ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন চালায়। তারা রাইফেলের বাট দিয়ে সাধারণ মানুষদের পেটায় আর জিজ্ঞেস করে – মুক্তিযোদ্ধারা কোথায়? এদিন তারা খাজুরিয়া মিজিবাড়ির ৭ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের গুলিতে অনেকে আহত হয়। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচার থেকে দত্রা, খাজুরিয়া ও আশপাশের মানুষ জানমাল বাঁচানোর জন্য বাড়ির পাশের ঝোপঝাড়, জলাশয়ের কচুরিপানার নিচে লুকিয়েও রেহাই পায়নি। হানাদাররা বাজার ঘরের আসবাবপত্র, নগদ অর্থ ও মেশিনারিজ দ্রব্য এবং বাড়ি-ঘরের ধান-চাল, গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি লুট করে নেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের এ তাণ্ডব চলে।
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে গজারিয়ার খাঁ বাড়িতে এক নির্মম ঘটনা ঘটে। এর নায়ক গজারিয়ার গাইনা খাঁ ও লতিফ মাঝি। ঘটনার দিন গাইনা খাঁ ও লতিফের নেতৃত্বে রাজাকাররা খুব ভোরে গজারিয়া সংগ্রাম কমিটির সদস্য কাজল খাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। কাজল খাঁ তখন বাড়িতে ছিলেন না। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে গাইনা খাঁ ও লতিফ মাঝি কাজল খাঁর বাড়ির সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়। তাদের তাণ্ডবে লোকজন জীবন বাঁচানোর জন্য ছুটাছুটি করে। কাজল খাঁর স্ত্রী জীবন নিয়ে পালিয়ে যেতে পারলেও তাঁর ছোট মেয়েটি ঘরে লুকিয়ে ছিল। জল্লাদ রাজাকার গাইনা খাঁ ও লতিফ মাঝি ৩ বছরের সেই মেয়েটিকে জীবন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে। [দেলোয়ার হোসেন খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড