মাছুমাবাদ দিঘিরপাড় গণহত্যা (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ)
মাছুমাবাদ দিঘিরপাড় গণহত্যা (রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এবং এতে ১২ জন মানুষ শহীদ হন।
রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের একটি গ্রাম মাছুমাবাদ দিঘিরপাড়। এখানে কয়েকঘর হিন্দুর বসবাস ছিল। তাদের খোঁজে পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিন বেলা একটার দিকে ভুলতা ব্রিজ থেকে গুলি করতে-করতে গ্রামগুলোর দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা পাচাইখাঁ গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের জিজ্ঞেস করে এখানে হিন্দু আছে কি-না। হিন্দু জনগোষ্ঠী খুঁজতে তারা মাছুমাবাদ দিঘিরপাড় গ্রামের পূর্বদিক দিক দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। তারপর তারা গ্রামের ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সারা গ্রামে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। পাকসেনারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে-ছুড়তে অগ্রসর হয়। তাদের ছোড়া গুলির শব্দ শুনে আর আগুনের শিখা দেখে আতঙ্কিত নর-নারী প্রাণভয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। পাকসেনাদের গ্রামের দিকে আসতে দেখে নারী- -পুরুষদের অনেকেই দৌড়ে বাইল্যা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অনেকে পালানোর সময় পাকসেনাদের সামনে পড়ে। পাকসেনারা তাদের ধরে পাঁচরখি ব্রিজের সামনে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন গদাধর মণ্ডলের ছেলে সর্বেশ্বর মণ্ডল, লবচাঁদ মণ্ডলের ছেলে মনোরঞ্জন মণ্ডল, সুরেন্দ্র হালদারের ছেলে অখিল হালদার, শ্রীদাম পোদ্দারের ছেলে রাখাল পোদ্দার, পাগলা বিশ্বাসের ছেলে মনা বিশ্বাস, দুর্গাচরণ বিশ্বাসের ছেলে জয়চন্দ্র বিশ্বাস, জয়চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে ধীরেন্দ্র বিশ্বাস ওরফে কুইট্টা বুইড়া বিশ্বাস, কালীচরণ দাসের ছেলে তুফানি দাস, কৃষ্ণ চরণ হালদারের ছেলে রাজমোহন হালদার, মিল শ্রমিক দুর্গাচরণ বিশ্বাস, মনমোহন বিশ্বাসের ছেলে রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস, গিরীশ দাসের ছেলে গাউসিয়া মুড়াপাড়া জুট মিলের শ্রমিক মিলন দাস ও হরচন্দ্র দাসের ছেলে মরণ্যা দাস। পাকসেনারা পিতা সর্বেশ্বর মন্ডল ও ছেলে রামজীবন মন্ডলকে ধরলে রামজীবন পাকসেনাদের হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সর্বেশ্বরকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। পাকসেনারা তাদের ওপর গুলি চালালে নীলকমল নামে এক ব্যক্তি পানিতে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে যায়। ১২ জন পাকসেনাদের হাতে শহীদ হন। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড