You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মাজহারুল হক - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মাজহারুল হক

মাজহারুল হক, বীর প্রতীক (১৯২৭-১৯৮৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৭ সালের ২৩শে মার্চ ঝালকাঠি জেলার সদর থানার পারকি পাইকনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঝালকাঠি শহর থকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এ গ্রাম। মাজহারুল হকের পিতার নাম আফছার আলী খান এবং মাতার নাম জয়নব বেগম। তিনি স্থানীয় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।মাজহারুল হক ইস্ট পাকিস্তান
রাইফেলস (ইপিআর)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৫০ সালে ইপিআর-এর সিপাহি পদে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি লালমনিরহাট জেলায় নায়েব সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জেলার হাতীবান্ধা থানার জাওরানী বিওপি থেকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং লালমনিরহাট এলাকার বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে গিয়ে তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন। এ সেক্টরের ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী এবং উলীপুর। সাব-সেক্টরে ক্যাপ্টেন নওয়াজিশের অধীনে তিনি যুদ্ধে করেন। তাঁর নেতৃত্বে এ সাব-সেক্টরে কয়েকবার অপারেশন পরিচালিত হয়। অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নেতৃত্বে রায়গঞ্জে পাকসেনাদের বহনকারী একটি গাড়ি ধ্বংস করেন। এ সময় ১০ জন পাকসেনা নিহত এবং প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাঁদের হস্তগত হয়। নভেম্বর মাসে মাজহারুল হক তাঁর দল নিয়ে পাটেশ্বরী থেকে পলায়নরত পাকসেনাদের আক্রমণ করেন। আক্রান্ত পাকসেনারা পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। এর কিছু দিন পর ভুরুঙ্গামারী মুক্ত করার যুদ্ধে মাজহারুল হক অংশ নেন। এ-যুদ্ধে তিনি বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘বিচ্ছু মাজহারুল’ নামে পরিচিত ছিলেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মাজহারুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪২৮, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭৮)।
স্বাধীনতার পর মাজহারুল হক বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি) -এ যোগদান করেন। বিডিআর-এ তিনি একজন অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সুবেদার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে লালমনিরহাট সীমান্তে একটি বড় চোরাচালান ধরায় অসীম সাহসিকতা ও সততার পরিচয় দেয়ায় তিনি নিজ বাহিনী কর্তৃক সম্মানিত হন। তাঁকে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় চাকরিরত অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১৩ সালে বিজিবি তাঁকে মরণোত্তর রংপুর রাইফেলস ক্লাব সম্মাননা প্রদান করে।
মাজহারুল হক ২ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সাফিয়া বেগম। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার মাজহারুল হককে রংপুরের মাহিগঞ্জ বাজারে ৩ রুমের একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়। তখন থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড