You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.13 | মাঝাপাড়া গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মাঝাপাড়া গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর)

মাঝাপাড়া গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৩ই জুন। এতে ১৬ জন হিন্দু নর-নারী প্রাণ হারায়। বীরগঞ্জ উপজেলার ৯নং সাতোর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রাম চৌপুকুরিয়া। ১৩ই জুন এ গ্রামের মাঝাপাড়ায় বিহারিদের দ্বারা গণহত্যার ঘটনা ঘটে, যাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৬ জন মানুষ নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়। গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় বিহারি সোনা মিয়া, হেজামত আলী, নায়েব আলী, আফাজউদ্দিন, আলিমুদ্দিন, আফতাব, আফজাল প্রমুখ। এ গণহত্যার কারণ ছিল প্রতিহিংসা। মাঝাপাড়া থেকে অর্ধ কিলোমিটার দূরে বিহারিদের একটি কলোনি ছিল, যা ৫নং বিহারিপাড়া কলোনি নামে পরিচিত। এর অবস্থান ছিল বীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের পূর্বদিকে। বিহারিরা মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাঙালি ও সাঁওতালদের ওপর নানান রকম অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছিল। ফলে বাঙালি ও সাঁওতালরা একজোট হয়ে ২৪শে মে কলোনিতে হামলা চালিয়ে বিহারিদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। কয়েকদিন পর পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় বিহারিরা তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসে এবং ২৪শে মে-র ঘটনার জের ধরে ১৩ই জুন ৫০-৬০ জন বিহারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাঝাপাড়ায় হামলা চালিয়ে হিন্দুদের জবাই করে। তারা প্রথমে ডা. দীনবন্ধুকে জবাই করে। তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি র নেতা এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লোকজনদের সংগঠিত করেছিলেন। তাঁর কথামতো বাঙালি ও সাঁওতালরা বিহারিদের জমিতে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। ডা. দীনবন্ধুকে হত্যার পর অন্যদের হত্যা করা হয়। এ গণহত্যায় নিহতরা হলেন- মাঝাপাড়ার ডা. দীনবন্ধু রায় (পিতা ক্ষেত্রমোহন রায়), নিমেশ্বরী বেওয়া (স্বামী অনন্ত রায়), আলোক চাঁদ বর্মণের দুই স্ত্রী চেতনাবালা ও বিশোরানী রায় এবং পুত্র তত্বকান্তি বর্মণ, দুন্দু রায় (পিতা হরসুন্দর), কমলাকান্ত রায়ের স্ত্রী বনলতা বেওয়া ও পুত্র কণ্ঠরাম রায়, নওগাঁর মোটাই বর্মণ ও শুকানু বর্মণ, ছৌপুকুরিয়ার বিজয় রাম রায়, মদনসাগরের ভূপতি চন্দ্র রায়, দোয়াপাড়ার নিদালু বর্মণ এবং এলাকায় আশ্রয় নেয়া লালবাবু রায়, নিমোবালা ও পাথারু বর্মণ|
বিহারিরা ডা. দীনবন্ধু রায়দের বাড়ির সব মালামাল লুট করে তাঁদের গরুর গাড়িতে করেই নিয়ে যায়। আরেক দল বিহারি যাকে যেখানে পায় তাকে সেখান থেকে ধরে এনে ঐ বাড়ির উঠোনে হাত, পা ও চোখ বেঁধে জড়ো করে। এরপর ধারালো ছোড়া দিয়ে জবাই করতে থাকে। ছোড়ার আঘাতে যারা মরেনি, তাদের দা দিয়ে কোপায়। এভাবে একে-একে ১৬ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। বিহারিদের একটি গ্রুপ যখন হিন্দুদের ধরে-ধরে জবাই করছিল, তখন আরেকটি গ্রুপ লুট-তরাজে ব্যস্ত ছিল। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড