মুক্তিযুদ্ধে মনোহরগঞ্জ উপজেলা (কুমিল্লা)
মনোহরগঞ্জ উপজেলা (কুমিল্লা) একটি প্রাচীন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এটি লাকসাম থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাকসাম উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ২০০৫ সালে এটি স্বতন্ত্র উপজেলায় পরিণত হয়। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে মনোহরগঞ্জ অঞ্চলের জনগণ ছিল আন্দোলনমুখী। এ উপজেলার হাসনাবাদে ব্রিটিশবিরোধী শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিটি অন্দোলনেই মনোহরগঞ্জবাসীর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ অঞ্চলের জনগণ জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য সংগঠিত হয়।
মনোহরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন মৈশাতুয়া ইউনিয়নের হাটিরপাড় গ্রামের আবুল বাশার। ১৯৭০ সালে তিনি দক্ষিণ লাকসাম (জলাঞ্চল) ছাত্রলীগ-এর ইউনিট সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতে তিনি ভারতে যান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ওমপি নগরে প্রশিক্ষণের পর তিনি ২নং সেক্টরের অধীন লাকসামের একটি অঞ্চলের কমান্ডার নিযুক্ত হন। এরপর তিনি মনোহরগঞ্জের হাসনাবাদে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি একটি বেসামরিক প্রশাসন গঠন করেন। এর সদস্য ছিলেন মওলানা নুরুল বাসার, দয়াল খালেক, সোলাইমান মাস্টার, আব্দুল হামিদ, দেলোয়ার এবং আমিন ডাক্তার। এঁরা বেসামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। এ সময় আবুল বাশারের বন্ধু এ টি এম আলমগীর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত) বিএলএফ-এর ডেপুটি কমান্ডার হয়ে মনোহরগঞ্জে আসেন। তাঁরা দুজন একত্রে এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেন। তাদের সাথে একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মো. আবুল কাশেম আজাদ ওরফে কাশেম ভূঁইয়া।
লাকসাম থানার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হলে মনোহরগঞ্জ অঞ্চলের অনেক ছাত্র- জনতা এতে অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য তখন লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জ পর্যন্ত বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টেলিফোন সংযোগ স্থাপন করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নূরুজ্জামান ভূঁইয়া (লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজের বিএ ক্লাসের ছাত্র ও ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাহিত্য সম্পাদক) লাকসাম থানার ২৭টি ইউনিয়নে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ২৩শে মার্চ লাকসাম হাইস্কুল মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬শে মার্চের পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে-ঘুরে যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান এবং যুবকদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন। এপ্রিল মাসের শেষদিকে মান্নান মাস্টার (ফুলপুকুরিয়া), নূরুজ্জামান ভূঁইয়া (মান্দারগাঁও, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী ইউপি চেয়ারম্যান), মফিজুর রহমান ভূঁইয়া, (দাদঘর, কেয়ারী) ও হাছান আহম্মদ ভূঁইয়া (মান্দারগাও) লাকসাম হাইস্কুল মাঠে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিকে লাঠিসোঁটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের ৫০-৬০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এরপর নূরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন যুবক ভারতের কাঠালিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। প্রশিক্ষণের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন আবদুল খালেক দয়াল ওরফে দয়াল খালেক (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান)।
মুক্তিযুদ্ধকালে লাকসাম থানাকে ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। মনোহরগঞ্জ, হাসনাবাদ, চিতোষী ও খিলা নিয়ে গঠিত ৩নং অঞ্চলের যুদ্ধকালীন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন আবুল বাশার (হাটিরপাড়, মৈশাতুয়া)। ডেপুটি কমান্ডার (বিএলএফ) ছিলেন এ টি এম আলমগীর।
পাকবাহিনী যাতে মনোহরগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা চিতোষী ও সূচীপাড়া দিয়ে মনোহরগঞ্জে ঢোকার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। একদিন পাকবাহিনী কৌশলে সূচীপাড়া ফেরিঘাট দিয়ে মনোহরগঞ্জে ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেন। বি এম কলিম উল্যা ভূঁইয়া, সুবেদার আবদুল রশিদ ও জহিরুল হক পাঠানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি গ্রুপ তিনদিক থেকে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে। ছয়ঘণ্টা স্থায়ী সূচীপাড়া ফেরিঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধএ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং তারা পিছু হটে।
১৫ই এপ্রিল পাকসেনারা লাকসামে অনুপ্রবেশ করে লাকসামের প্রধান সড়ক ও রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরিতে মিনি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করে এবং সেখান থেকে সৈন্য পাঠিয়ে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপনের ব্যবস্থা করে। মনোহরগঞ্জ উপজেলায় তাদের ক্যাম্পগুলো ছিল খিলাবাজার, নাথেরপেটুয়া বাজার ও হাসনাবাদ বাজারে।
মনোহরগঞ্জে পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে শান্তি কমিটির সদস্যরা তৎপর ছিল। বাইশগাঁও ইউনিয়নের না শরীফপুর গ্রামের সাজেদুল হক মোক্তারের (মুসলিম লীগ নেতা, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের মামা ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পিতা; ১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এমএলএ নির্বাচিত) নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। সাত পুকুরিয়ার শামসুল হক, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, তার ভাই মফিজুর রহমান, নোয়াগাঁওয়ের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর ও দুর্গাপুরের আবুল কাশেম মিয়া শান্তি কমিটিতে যোগ দেয়ার জন্য এলাকার লোকজনদের চাপ দেয়। মান্দারগাঁওয়ের ফুলপুকুরিয়ার ডা. মফিজুর রহমান, মেডুয়ার মাস্টার আনোয়ার উল্লাহ, তাহেরপুরের ডা. মুজিবুর রহমান মিয়া, দিশাবন্দের জব্বর সওদাগর, বগু বেপারী, হাটিরপাড়ের মোখলেছুর রহমান, কালা মিয়া, রশিদপুরের দুদ মিয়া, মৈশাতুয়া কাঠালিয়ার মাওলানা সামসুল হকসহ শান্তি কমিটির অন্যান্য সদস্যরা এলাকার লোকজনকে তাদের কমিটিতে যোগ দিতে চাপ দেয়। তখন তারা এলাকা রক্ষার নামে এসব কমিটি গঠন করে। স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাকর্মীরা শান্তি কমিটি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। দিকচান্দা থেকে মনোহরগঞ্জে আসার পথে চারজন পাকসেনাকে তাদের দোসর আরব আলী পথ দেখিয়ে আমতলী হয়ে মৈশাতুয়া, বশৈয়া ও বাতাবাড়িয়ার ভেতর দিয়ে আশিরপাড় গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসে। আসার পথে তারা অধিকাংশ গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশিরপাড় বাজারে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর পাকসেনারা চলে গেলেও তাদের দোসররা এসব গ্রাম থেকে ঘরবাড়ির টিন, ধান-চাল, স্বর্ণালংকার, জামাকাপড়, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি লুট করে নিয়ে যায়। তারা বাড়ির গাছ পর্যন্ত কেটে নিয়ে যায়।
পাকসেনারা তাদের দোসরদের সহায়তায় মনোহরগঞ্জের ঝলম কাচারিবাড়িসহ বহু গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। দোসরদের দেয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ করে বহু মুক্তিসেনা ও তাদের সহযোগীদের হত্যা করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করে। পাকসেনা ও তাদের দোসরদের হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ফলে ঝলম কাচারিবাড়ি, লৎসর, হাটিরপাড়, লক্ষণপুর ও দিশাবন্দসহ আশপাশের গ্রামের অসংখ্য হিন্দু পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। মনোহরগঞ্জে পাকবাহিনীর বেশি আক্রোশের শিকার হয় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলো।
যুদ্ধকালীন সময়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় পাকবাহিনীর স্থায়ী কোনো নির্যাতনকেন্দ্র বা বন্দিশিবির ছিল না। তারা এ অঞ্চল থেকে লোকজন ধরে নিয়ে লাকসামে তাদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট থ্রি-এ সিগারেট ফ্যাক্টরিতে বন্দি করে নির্যাতন করত, নারীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করত। তারা যুবতী মেয়েদের সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করত, যাতে তারা পালিয়ে যেতে বা আত্মহত্যা করতে না পারে। যারা তাদের পাশবিক ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে পারত না তাদের বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে গর্তে ফেলে দিত।
উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামের রাস্তার পাশে পুকুর পাড়ে একটি গণকবর রয়েছে। এটি মানরা গণকবর নামে পরিচিত। পাকবাহিনী ১৩ জন মানুষকে হত্য করে এখানে মাটিচাপা দেয়। বর্তমানে এ গণকবরটির তেমন কোনো চিহ্ন নেই।
সূচীপাড়ার প্রতিরোধযুদ্ধের পর কমান্ডার আবুল বাসারের দল এবং মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামানের দল একত্রিত হয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়। অক্টোবর মাসে তাঁরা মনোহরগঞ্জ থেকে লাকসাম থানার হাসনাবাদ ইউনিয়নের বাদুয়াপাড়ার জব্বার সাহেবের বাড়ি ও হরিপুর মাদ্রাসায় ক্যাম্প স্থানান্তর করেন। সেখানে বেশ কয়েকটি লড়াইয়ের পর নভেম্বর মাসে তাঁরা লাকসামে প্রবেশ করেন। লাকসাম যাওয়ার পথে তাঁরা চিতোষীতে ডাক্তার শাহাবুদ্দীন চেয়ারম্যানের বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য ক্যাম্প করেন। এখানে অবস্থানকালে চিতোষী সাতপুকুরিয়া খেয়াঘাটে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। বাদুয়াপাড়ায় গড়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে সুলতান আহম্মদ ও মোখলেছ প্রশিক্ষণ দেন। এখান থেকে লাকসাম থানার বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিবাহিনীর অপারেশন চলতে থাকে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীয়াং বাজার অপারেশন, মুন্সিরহাট অপারেশন- অপারেশন আশিরপাড় বাজার হু অপারেশন। ১৮ই অক্টোবর, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীয়াং বাজার অপারেশন করেন। সেখানে তখন শান্তি কমিটির সভা চলছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সভাস্থল ঘেরাও করে শান্তি কমিটির সদস্য কালিয়াপুরের হাবিবুর 3 রহমান ও খলিলুর রহমান, শ্রীয়াংয়ের আবু তাহের ও এসহাক মিঞাকে (চান্দার বাপ) আটক করেন।
শ্রীয়াং বাজারের পর মুক্তিযোদ্ধারা মুন্সিরহাট বাজার অপারেশন করে কয়েকজন রাজাকারকে আটক করেন। এরপর তাঁরা আশিরপাড় বাজার অপারেশন করে স্বাধীনতাবিরোধী বেশ কয়েকজনকে আটক করেন। এ সময় ঐ এলাকার প্রভাবশালী চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান এবং তার সঙ্গী দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আনারউল্যা চেয়ারম্যান (পশ্চিম লাকসামের আতঙ্ক) দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে এবং গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা খনাতুয়া পার হয়ে আসার সময় রাজাকার মাওলানা আবদুল ছত্তার ধানক্ষেতে লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করে। ২রা ডিসেম্বর পাকসেনাদের একটি দল শ্রীয়াং বাজার হয়ে চাঁদপুর যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। সেখানে তাঁরা দুজন পাকসেনাকে আটক করলে ক্ষুদ্ধ জনতা একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে|
ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় বাহিনী মনোহরগঞ্জে এসে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়| এরপর যৌথ বাহিনীর আক্রমণে পাকবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে মনোহরগঞ্জ ত্যাগ করে। ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর মিনি ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত লাকসাম সিগারেট ফ্যাক্টরিতে তাদের সর্বশেষ অপারেশন পরিচালনা করেন। এর আগেই পাকবাহিনী সেখান থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যায়। রেখে যায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন। মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করে নিজ-নিজ এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি লাকসাম সিগারেট ফ্যাক্টরি পতনের মধ্য দিয়ে ১১ই ডিসেম্বর এ অঞ্চল হানাদারমুক্ত হয়। মনোহরগঞ্জ উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- শামসুল হুদা (পিতা বন্দে আলী মীর, ফুলপুকুরিয়া), আবদুল আউয়াল (পিতা নোয়াব আলী, বিপুলাসার) ও সফিকুর রহমান (পিতা আব্বাস আলী, বাকরা)। এছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল খালেক দয়াল এখানকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। [নঈম আজাদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড