বীর প্রতীক মফিজুর রহমান
মফিজুর রহমান, বীর প্রতীক (১৯৪৫-২০০৪) নায়েক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নোয়াব আলী এবং মাতার নাম রাহাতনের নেছা। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
তিনি বাতশিরি হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন এবং ১৯৬২ সালের ১২ই মার্চ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্-এ যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ইপিআর বাহিনীর পিলখানা সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকবাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্ট তাঁদের ওপর আতর্কিতে আক্রমণ করে। হানাদারদের আক্রমণের মুখে মফিজুর রহমানসহ বাঙালি ইপিআররা পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু হানাদারদের আক্রমণে তাঁদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ-যুদ্ধে অনেক ইপিআর সদস্য শহীদ হন। তিনিসহ কিছু সংখ্যক সদস্য পিলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। পরে তাঁরা বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে পুনর্গঠিত হন। সেখান থেকে তাঁরা নরসিংদীর পাঁচদোনায় চলে যান। ভৈরব-নরসিংদীর মাঝখানে রামনগরে ১৩-১৪ই এপ্রিল পাকিস্তানি কমান্ডো বাহিনীর বিপক্ষে মফিজুর রহমানের দলের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখেন। পাঁচদোনায় তাঁরা ময়মনসিংহ থেকে আগত ক্যাপ্টেন মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। ঢাকা-নরসিংদী সড়কের কড়ইতলী, বাবুরহাট, পাঁচদোনাসহ আরো কয়েকটি স্থানে যুদ্ধের পর তাঁরা ভৈরব-নরসিংদীর মাঝখানে রামনগর এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ১৩ই এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানে আক্রমণ করে। ইপিআর সৈনিক সুলতান আহমেদ, বীর বিক্রম, আব্দুল মালেক ও মফিজুর রহমানের দল বীর বিক্রমে শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার নায়েক মফিজুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২০০৪ সালে পরলোক গমন করেন। তাঁর স্ত্রী নাম ফজিলাতের নেসা। তাঁরা ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড