You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মনিরুল ইসলাম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মনিরুল ইসলাম

মনিরুল ইসলাম, বীর প্রতীক নায়েক ও ২নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কামাটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাহেব আলী ও মাতার নাম লায়লা বেগম।
মনিরুল ইসলাম ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। সফল প্রশিক্ষণ শেষে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁর পদায়ন হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ৭০-এর নির্বাচন, নির্বাচনোত্তর পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ এবং ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনামূলক ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে।
৭১-এর মার্চে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত অবস্থায় বিদ্রোহ করে মনিরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। জুন মাসে সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ২নং সেক্টরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ‘কে’ ফোর্সের সঙ্গে সংযুক্ত হন এবং ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে বহু সম্মুখ যুদ্ধ, এম্বুশ এবং গেরিলা আক্রমনে সাহসী ভূমিকা রাখেন। নভেম্বর মাসে ২নং সেক্টরের লাতামুড়া নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে এক তীব্র ও ভয়ঙ্কর আক্রমণে পাকসেনাদের পর্যুদস্ত করেন। আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে পাকসেনারা লতামুড়া ছাড়তে বাধ্য হয়। এ- যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একজন অফিসারসহ ৪০ জন যোদ্ধা প্রাণ হারান এবং ৬০ জন আহত হন। নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম যুদ্ধে অসীম সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং বহু শত্রুসেনাকে হত্যা করেন।
২নং সেক্টরের অধীন সীমান্ত এলাকা থেকে বেশ ভেতরে কালাছড়া চা বাগান। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সংবাদ আসে ঐ চা বাগানে পাকসেনাদের একটি দল অবস্থান নিয়েছে। দলটি বেশ বড়। তাদের আক্রমণে পর্যুদস্ত করতে অন্তত চারগুণ সেনা প্রয়োজন। মুক্তযোদ্ধারা সংখ্যায় মাত্র দ্বিগুণ। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। দুটি দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা শত্রুর ওপর আক্রমণ করেন। একটি দল পাকসেনাদের অবিশ্রান্ত গোলাবর্ষণ উপেক্ষা করে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যায়। একই দলের একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দলটি পাকসেনাদের আক্রমণে সুবিধা করতে পারছিল না। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। কিন্তু মনিরুল ইসলাম থেমে থাকেননি। তাঁর দলের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পাকসেনারা দৌড়ে তাদের সুরক্ষিত বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। মনিরুল ইসলাম তীব্র ইচ্ছা শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সহযোদ্ধাদের নিয়ে শত্রুর বাঙ্কারে গ্রেনেড হামলা চালান। ফলে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। এমনি অবস্থায় অন্য মুক্তিযোদ্ধারা একত্র হয়ে শত্রুর ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালান। অনেক নিহত ও আহত সেনাদের ফেলে রেখে পাকসেনারা পালাতে বাধ্য হয়। ২৭ জন পাকসেনার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ-যুদ্ধে মুক্তিসেনাদের ২ জন শহীদ ও ৭ জন আহত হন। মনিরুল ইসলাম ‘কে’ ফোর্সের অধীনে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে আখাউড়া, কর্নেল বাজার, মুকুন্দপুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ও বীরোচিত ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সুবেদার মনিরুল ইসলাম-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ৩ সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড