মধুপুর গণহত্যা (মধুপুর, টাঙ্গাইল)
মধুপুর গণহত্যা (মধুপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় এপ্রিল থেকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন গ্রামের বহু লোক হত্যার শিকার হয়।
টাঙ্গাইল জেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ মধুপুর। গারো আদিবাসী অধ্যুষিত এ জনপদটি ব্যবসা- বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও পরিচিত। শাল ও গজারি বৃক্ষের জন্য মধুপুর সমধিক প্রসিদ্ধ। টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে মধুপুরের দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। মধুপুরে রয়েছে রাণী হেমন্ত কুমারী দেবীর মালিকানাধীন মদন গোপাল বিগ্রহের একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এখানে ছিল জয়সিঙ্গীর ও রূপগিরি সন্ন্যাসীর নেতৃত্বাধীন সন্ন্যাসী দলের প্রধান কেন্দ্র। এপ্রিল মাস থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় এখানে গণহত্যা হয়। এসব গণহত্যায় শহীদ হন মধুপুরের কালামাঝি, আশুরা, চাপড়ি ও ভট্টবাড়ির বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। শহীদদের মধ্যে কালামাঝি গ্রামের হরেন্দ্র চন্দ্র চারাল (পিতা জলধর চন্দ্র চারাল), যোগেন্দ্র চন্দ্র চারাল (পিতা জলধর চন্দ্র চারাল), উপেন্দ্র চন্দ্র চারাল (পিতা জলধর চন্দ্র চারাল), মহেন্দ্র চন্দ্র চারাল (পিতা হরেন্দ্র চন্দ্র চারাল), দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র চারাল (পিতা হরেন্দ্র চন্দ্র চারাল) বেলায়েত হোসেন মণ্ডল (পিতা তোমেজ উদ্দিন মণ্ডল), ওমর আলী (পিতা সাদেক আলী মুন্সি), বছির উদ্দিন, ডা. ছামান আলী মিঞা (পিতা কিনা মামুদ মণ্ডল, রাণীরাত), ডা. সুধাংশু সাহা (পিতা অশ্বিনী কুমার সাহা, চাপড়ি), ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ওরফে ধীরা ঠাকুর (পিতা চন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ভট্টবাড়ি), সতীশ চন্দ্র (দলিল লেখক, আশুরা), আহাম্মদ আলী (পাকুটিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কম্পাউন্ডার, নান্দিনা) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখ্য, মধুপুর গণহত্যায় আহত মির্জাপুরের সাধন ভট্টাচার্য বেঁচে যান। বংশাই নদীতে ভাসমান অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার অপরাধে চাপড়ি গ্রামের জনপ্রিয় ডা. সুধাংশু সাহাকে রাজাকার কমান্ডার মেছের মাওলানা হানাদার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। মেছের মাওলানার নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ভট্টবাড়ির ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ওরফে ধীরা ঠাকুরকে নিজ বাড়িতে পুত্র- কন্যাদের সামনে গুলি করে হত্যা করে। ১১ই ডিসেম্বর পাকুটিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্তব্যরত অবস্থায় রাণীরাত গ্রামের ডা. ছামান আলী মিঞাকে হানাদার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে মধুপুর বধ্যভূমির কাছে হত্যা করা হয়। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড