You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.14 | মধুপুর প্রতিরোধযুদ্ধ (মধুপুর, টাঙ্গাইল) - সংগ্রামের নোটবুক

মধুপুর প্রতিরোধযুদ্ধ (মধুপুর, টাঙ্গাইল)

মধুপুর প্রতিরোধযুদ্ধ (মধুপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৪ই এপ্রিল। এতে একজন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। এক পর্যায়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায় এবং তাদের কিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল বিকেলে পাকহানাদার বাহিনী কয়েকটি জিপে চড়ে রেকি করতে মধুপুরে আসে। মধুপুরের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত থাকলেও ঐদিন ছিল মধুপুর হাটবার। হানাদার বাহিনী মধুপুরে আসার খবরে মুহূর্তের মধ্যে হাটটি ভেঙ্গে যায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইলের দিকে ফিরে যায়। পাকবাহিনী মধুপুর আক্রমণ করবে তা জেনে পরের দিন ১৪ই এপ্রিল সকাল থেকে কে এ রশিদ খসরুর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ও ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা মালাউড়ীর পাকা রাস্তার দুপাশে অপেক্ষা করতে থাকেন। মধুপুরের ব্রিজের দক্ষিণে মালাউড়ীতে আব্দুর রাজ্জাক, আলম (চলচ্চিত্রনায়ক সোহেল রানার ভাই), আব্দুল মজিদ, হাবিবুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মালাউড়ী গোরস্থান এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পজিশনে থাকেন। অপর কয়েকজন মালাউড়ী জামে মসজিদের একটু দক্ষিণে রাস্তার পশ্চিমের বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে ওঁৎ পেতে থাকেন। -দুপুরের দিকে হানাদার বাহিনী তিনটি গাড়িতে করে মধুপুরের দিকে আসতে থাকে। প্রথমে একটি গাড়ির চাকা লক্ষ করে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়লে চাকা পাংচার হয়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা পাকসেনা অফিসারের গায়ে একটি গুলি লাগলে সে সেখানেই মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকলে হানাদাররা হতবিহব্বল হয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পেছনে থাকা পাকবাহিনীর আরো কিছু সৈন্য কভারিং ফায়ার করতে- করতে এগিয়ে এলে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এক সময় পাকসেনারা পিছু হটতে শুরু করে। তারা মালাউড়ী গোরস্থানের ওপর দিয়ে পূর্বদিকে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে বর্তমান টেংরী সিএন্ডবি অফিস এলাকা হয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে নিহত সেনাসদস্যের লাশ নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের বাড়িঘরে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ করে। যুদ্ধটি সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ-যুদ্ধে বিকল দুটি গাড়ি ও হানাদারদের ফেলে যাওয়া বেশকিছু অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্রসফায়ারে মালাউড়ীর মসজিদ এলাকায় কলিম উদ্দিন মুন্সী ও হোসেন আলী এবং বাসস্ট্যান্ডে ওমর আলী শহীদ হন। এছাড়া টেংরী পাহাড়ের পাদদেশে ড্রেনের পাশে কাজী মোন্তাজ আলী ও ইয়াকুব আলী শহীদ হন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড