You dont have javascript enabled! Please enable it! ভৈরব নদের ঘাট বধ্যভূমি (কচুয়া, বাগেরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

ভৈরব নদের ঘাট বধ্যভূমি (কচুয়া, বাগেরহাট)

ভৈরব নদের ঘাট বধ্যভূমি (কচুয়া, বাগেরহাট) বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়।
২৭শে আগস্ট কচুয়া থানা সদরে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। মাধবকাঠি রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধ্বংস হওয়ার ২১ দিন পর রাজাকার কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে তৎকালীন সিও অফিস দখল করে তারা এ ক্যাম্পটি স্থাপন করে। প্রথমদিকে রাজাকারদের সংখ্যা ছিল ৪১ জন। ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১ জনে। তিন-চার মাস ধরে এই রাজাকার বাহিনী কচুয়া থানায় হত্যা, নারীনির্যাতন ও লুণ্ঠন চালায়। তাদের ক্যাম্পের সামনেই ছিল একটি বধ্যভূমি। বিভিন্ন সময়ে রাজাকার আব্দুল গণি সরদার, আব্দুল গণি শিকদার, হাশেম আলী শেখ (পিতা আকুবালি শেখ, হাজরাখালী), আফসার দিদার, ফজলু দিদার, ইদ্রিস মোল্লা প্রমুখ স্থানীয় রাজাকার প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন এবং মহকুমা রাজাকারের ডেপুটি কমান্ডার সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে ২২শে নভেম্বর বিকেল ৫টায় হাশেম আলী শেখ (পিতা তাসেন উদ্দিন শেখ, টেংরাখালী), সতীশ চন্দ্ৰ মণ্ডল (পিতা রামচরণ মণ্ডল) ও মো. হাবিব শেখকে টেংরাখালীর বাড়ি থেকে আটক করে। এরপর ভৈরব নদীর ঘাটে কাঠের সিঁড়িতে তাদের দাঁড় করিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং পরে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। অনুরূপভাবে একই স্থানে বিভিন্ন সময়ে জুজখোলা গ্রামের ধলু সরদার, চরকাঠি গ্রামের আজাহার আলী সরদার, খলিশাখালী গ্রামের অনিল চন্দ্র হালদার (পিতা ক্ষুদিরাম হালদার), কাকারবিল গ্রামের শফিউদ্দিন মৃধা ও তাঁর পুত্র শাহজাহান মৃধাকে ধরে এনে নির্যাতনের পর গুলি ও জবাই করে ভৈরব নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
২২শে নভেম্বর ভোর রাতে রাজাকার হাসেম আলী শেখ, সুলতান ডাকুয়া, আব্দুল গনি সরদার প্রমুখ বারুইখালী গ্রামের মণীন্দ্রনাথ সাহাকে বাড়ি থেকে আটক করে মারপিট করতে-করতে কচুয়া বাজারে গুড়ের হাটে নিয়ে আসে। তারপর তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
ভৈরব নদীর ঘাট বধ্যভূমিতে অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষকে রাজাকাররা হত্যা করে। এই শহীদদের অনেকের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। যাদের নাম-পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- সুলতান সরদার (পিতা রওশন সরদার, কচুয়া), শফিউদ্দিন মৃধা (কাকারবিল), শাহজাহান মৃধা (পিতা শফিউদ্দিন মৃধা, কাকারবিল), অনিল চন্দ্র হালদার (পিতা ক্ষুদিরাম হালদার, খালিশাখালী), বাবু খাঁ (পিতা রহমাত আলী খাঁ, কচুয়া), আজহার আলী সরদার (চরকাঠি), মোহাম্মদ হাবিব শেখ (পিতা কলিমউদ্দিন শেখ, টেংরাখালী), সতীশচন্দ্র মণ্ডল (পিতা রামচরণ মণ্ডল, টেংরাখালী), হাশেম আলী শেখ (পিতা হাজী তাসেন উদ্দিন, টেংরাখালী), মণীন্দ্রনাথ সাহা (পিতা রবীন্দ্রনাথ সাহা, বারইখালী), মোহাম্মদ শেখ (পিতা মোসলেম শেখ, হাজরাখালী) ও আব্দুল লতিফ তালুকদার (পিতা মোজাম্মেল তালুকদার, কচুয়া)। [তাপস কুমার বিশ্বাস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড