বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা
ভূপেন হাজারিকা (১৯২৬-২০১১) উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এবং মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি ১৯২৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর আসামের শদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গৌহাটির তেজপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৪০ সালে মেট্রিক্যুলেশন, কটন কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আইএ, বানারাস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৪৪ সালে বিএ এবং ১৯৪৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ভূপেন হাজারিকা একজন সঙ্গীতশিল্পী, কবি, গীতিকার, সুরকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সমগ্র ভারত, বিশেষ করে অসমীয় ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। অসামান্য অবদানের জন্য শিল্পী ভূপেন হাজারিকা ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মবিভূষণ-সহ অসংখ্য খেতাব ও পুরস্কারে ভূষিত হন। কেবল ভারত উপমহাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তিনি খ্যাতি ও স্বীকৃতি লাভ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। তাঁর ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’, ‘আমি এক যাযাবর’, ‘বিস্তীর্ণ পারাপারে’, ‘মানুষ যদি না হয় মানুষ’, ‘মেঘ থম থম করে’ ইত্যাদি গান বাংলা ও উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতে তাঁকে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও অমরত্ব দান করেছে।
তরুণ বয়স থেকে ভূপেন হাজারিকা প্রগতিশীল ও আধুনিক চিন্তার অনুসারী এবং গণমানুষের পক্ষের রাজনীতির সমর্থক ও কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৬৭-৭২ সালে আসাম বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য (নির্দলীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে শিল্পী ভূপেন হাজারিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে নিজের সঙ্গীত প্রতিভা ও ব্যাপক পরিচিতিকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি গান রচনা, সুর সৃষ্টি এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাঁর দরদী ও উদাত্ত কণ্ঠে গাওয়া ‘জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ’ এবং ‘জয় জয় মুক্তিবাহিনীর জয়’ ইত্যাদি গান ১৯৭১ সালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর পরিবেশিত গান মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শিল্পী ভূপেন হাজারিকাকে ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মামনা’ (মরণোত্তর) প্রদান করে। ২০১১ সালের ৫ই নভেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড