You dont have javascript enabled! Please enable it! ভুরুঙ্গামারী কলেজ মোড় গণকবর (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

ভুরুঙ্গামারী কলেজ মোড় গণকবর (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম)

ভুরুঙ্গামারী কলেজ মোড় গণকবর (ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম) ভুরুঙ্গামারী উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের অদূরে প্রায় ৩.৩০ একর জমির ওপর অবস্থিত। এখানে বর্তমানে একটি পুকুর, বেশকিছু দালান ও একটি খেলার মাঠ রয়েছে। ১৯৭১ সালে এ স্থানটি ছিল নির্জন-নিস্তব্ধ।
পাকবাহিনী ও স্থানীয় দালাল, রাজাকার ও আলবদররা বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষদের ধরে এনে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন শেষে হত্যা করত এবং তাদের লাশ এ গণকবরে ফেলে দিত। কলেজের পুকুর ও অফিস বিল্ডিংয়ের পেছনে (বর্তমানে বাসভবন) গণকবর ও জল্লাদখানা ছিল। এখানে প্রায়ই মানুষ জবাই করা হতো। স্বাধীনতার পর এ গণকবরে ৩০টির বেশি মাথার খুলি পাওয়া যায়। কলেজ মোড় গণকবরে আরো অনেককে কবর দেয়া হয়।
কুখ্যাত জাময়াত নেতা হাজী কমরউদ্দিন ভুরুঙ্গামারী কলেজের প্রিন্সিপাল ও থানা শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল ডিগ্রি কলেজের পুকুরপাড়ের পশ্চিম পাশে প্রিন্সিপালের অফিস ছিল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেওয়ানের খামার মৌজার মো. বছির উদ্দিন মণ্ডলের পুত্র পাকসেনাদের নিয়ে ছিট পাইকেরছড়ার অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এখান থেকে তারা ১৫-১৬ জনকে আটক করে। তাদের সারাদিন কলেজে আটকে রেখে সন্ধ্যার পূর্বে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের লাশ কলেজ মোড় পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। এখান থেকে পেছনে দুহাত বাঁধা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ তমিজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি হাতের বাঁধন খুলে পালাতে সক্ষম হলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৪ই নভেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা ভুরুঙ্গামারীর দখল নেয়ার পর এখান থেকে ২০ জন নারীকে তাঁরা উদ্ধার করেন। বীরাঙ্গনাদের সাহেবগঞ্জ হেডকোয়ার্টার্স, ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও তাদের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
এ এলাকার সকল হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও নারীর ওপর পাশবিক অত্যাচারে প্রিন্সিপাল কমরউদ্দিন, চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, হাজী বশির উদ্দিন, মৌলানা মোবারক আলী, মৌলানা আব্দুল কাদের, কাজী আবেদ আলী, মৌলানা আব্দুল লতিফ, আশেক আলী, শাজাহান আলী, আন্ধারীরঝাড়ের আব্দুল খালেক মণ্ডল, ধীর মামুদ মণ্ডল, কসিম উদ্দিন (মঙ্গা), গোলজার হোসেন, নাগেশ্বরীর আলহাজ সাইফুর রহমান, ভিতরবন্দের জামায়াত নেতা মওলানা শামসুল ইসলাম খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন মেম্বার, ভুরুঙ্গামারীর একাব্বর আলী, বেলাল উদ্দিন আন্ধারীরঝাড়ের দুদু, শহীদুল্লাহ (পিতা কান্দুরা পঞ্চায়েত), পাইকেরছড়ার খলিলুর রহমান (পিতা জয়েন উদ্দিন মাস্টার), নাগেশ্বরীর রাজাকার ক্যাপ্টেন জয়নাল আবেদীন, ক্যাপ্টেন ম. আব্দুল বারী ফাকু (পিতা বাবু বানিয়া, খলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম সদর)-সহ আরো অনেকে জড়িত ছিল। [এস এম হারুন অর রশীদ লাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড