You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.27 | ভিটাপাড়া রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

ভিটাপাড়া রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা)

ভিটাপাড়া রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ২৭শে সেপ্টেম্বর। এ-যুদ্ধে রাজাকাররা পরাজিত হয়। যুদ্ধে ২ জন রাজাকার নিহত হয়। তাদের ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ১২টি রাইফেল ও প্রচুর গুলি হস্তগত করেন। অপরদিকে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের গুলিতে আহত হন।
ভিটাপাড়া হয়ে পাকসেনারা সব সময় নগরবাড়ি থেকে বাঘাবাড়ি যাতায়াত করত। তাই ভিটাপাড়া ব্রিজ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটাপাড়া ব্রিজে রাজাকারদের একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। বেশ কয়েকজন সশস্ত্র রাজাকার সার্বক্ষণিক এ ব্রিজ রক্ষার দায়িত্বে থাকত। বেড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ জন দক্ষ সেকশন কমান্ডার ছিলেন। তাঁরা হলেন- ইপিআর সদস্য নজরুল ইসলাম, সেনাসদস্য আব্দুল কাদের এবং ইপিআর সদস্য মো. শাহজাজান আলী। তাঁদের প্রত্যেকের অধীনে ২০-২৫ জন করে সশস্ত্র গেরিলা ছিলেন। ভারী অস্ত্রের প্রশিক্ষণ থাকায় ৩ জনই এলএমজি ম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অকুতোভয় এ তিন সৈনিক অস্ত্র- গোলাবারুদ সংগ্রহ এবং পাকসেনাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ভিটাপাড়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা তিন সেকশন থেকে বাছাই করা ১৫-২০ জন গেরিলার একটি দল নিয়ে ২৭শে সেপ্টেম্বর সকালে ভিটাপাড়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। কমান্ডার শাহজাহান আলী উত্তর দিক থেকে এবং আব্দুল কাদের দক্ষিণ দিক থেকে ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। ব্রিজে পাহারারত এক রাজাকার আব্দুল কাদেরের নৌকা লক্ষ করে গুলি করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। রাজাকারদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও মকবুল হোসেন আহত হন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের বেপরোয়া আক্রমণে রাজাকাররা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। মোন্তাজ ও মমিন নামে দুই রাজাকার গুলিবিদ্ধ ও নিহত হয়। রাজাকারদের ক্যাম্প থেকে ১২টি রাইফেল ও প্রচুর গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প থেকে যখন রাইফেল নৌকায় তুলছিলেন, তখন হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের হাত থেকে একটি রাইফেল ব্রিজের নিচে গভীর পানিতে পরে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে জানে আলম জানু নামক এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা রাইফেলটি পানির তলদেশ থেকে উদ্ধার করেন। রাইফেল ও গুলি নৌকায় বোঝাই করার সময় পাকবাহিনীর মালভর্তি একটি ট্রাক নগরবাড়ি থেকে বাঘাবাড়ি যেতে ভিটাপাড়া ব্রিজ অতিক্রম করছিল। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ট্রাকের চাকায় গুলি করেন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভেদ না করায় ট্রাকটি দ্রুত বাঘাবাড়ির দিকে চলে যায়। ঘটনার পরপর পাকসেনারা বাঘাবাড়ি থেকে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভিটাপাড়া ঘিরে ফেলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা অতি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সাঁথিয়ার হলুদগড়ে আশ্রয় নেন। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড