ভাটপেয়ারী যুদ্ধ (সিরাজগঞ্জ সদর)
ভাটপেয়ারী যুদ্ধ (সিরাজগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় অক্টোবর মাসের শেষদিকে। এতে ৩২ জন পাকসেনা নিহত হয়। এখান থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ-যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকসেনারা ভাটপেয়ারী গ্রামে গণহত্যা চালায়। তারা গ্রামের ৯ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশ যমুনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
সিরাজগঞ্জ সদর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে ভাটপেয়ারী গ্রাম। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভাটপেয়ারীর একটি স্কুলে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা অস্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলে। পাকসেনারা স্কুলের পাশে এলএমজি পোস্ট স্থাপন করে চারপাশে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করে। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য এ ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা কাজিপুর থেকে এসে এ আক্রমণ পরিচালনা করেন। ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ১টি এলএমজি, ২টি এসএলআর, ৬৬টি এসএমসি ও ৪৫টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়ে এ-যুদ্ধে অংশ নেন। আক্রমণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন ও আমিনুল ইসলাম চৌধুরী পুরো দলকে ৪ ভাগে ভাগ করেন। হাবিলদার আজিজসহ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা স্কুলের নিকটবর্তী বাজারে, শফিকুল ইসলাম ও তাঁর দল স্কুলের সামনে এবং ফিরোজ ভূঁইয়া ও তাঁর দল স্কুলের পার্শ্ববর্তী বাঁধের পূর্ব পাশে অবস্থান নেন। ফিরোজ ভূঁইয়ার দলের সদস্যরা প্রথম পাকসেনাদের টেলিফোন লাইন কেটে দেন। এলএমজি পোস্ট ধ্বংস করার জন্য তোতা মিয়া আরো ২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বটগাছে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ করা হয়। পাকসেনা ও রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করে। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে হাবিলদার আজিজ দল নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুপক্ষের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এ যুদ্ধ চলে। এতে ৩২ জন পাকসেনা নিহত হয়। শুধু একটা রুমে অল্প কিছু সৈন্য জীবিত ছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধা রুমে ঢুকে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প থেকে ২৫টি চাইনিজ রাইফেল, কয়েকটি এসএমজি, ১টি এলএমজি, ২১টি হ্যান্ড গ্রেনেড ও অনেক গোলাবারুদ হস্তগত করেন। এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও মোতালেব আহত হন।
ভাটপেয়ারী যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তানিরা হিংস্র হয়ে ওঠে। ১৬ই নভেম্বর তারা ভাটপেয়ারী গ্রাম ঘেরাও করে ৯ জন নিরীহ মানুষকে ধরে যমুনা নদীর ধারে হাত-পা-চোখ বেঁধে হত্যা করে। নিহতদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। সেদিন ভাটপেয়ারীর যেসব মানুষ গণহত্যার শিকার হন, তারা হলেন- আব্দুস সোবহান (পিতা কেফাত উদ্দিন), আব্দুল হামিদ (পিতা জাবেদ আলী; শিক্ষক), মতিয়ার রহমান (পিতা জাবেদ আলী), হাবিবুর রহমান (দীনমজুর), আবুল হোসেন (পিতা কছিম উদ্দিন), মইশা শেখ, ওসমান আলী, আব্দুল আজিজ (পিতা বন্দে আলী) ও আয়নাল হক (পিতা বিদেশী হাজী)। [মাহফুজা হিলালী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড