বোয়ালিয়া বাংকার আক্রমণ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
বোয়ালিয়া বাংকার আক্রমণ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) পরিচালিত হয় ৮ই সেপ্টেম্বর। এতে ৮- ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের শক্ত অবস্থান ছিল। সেসব অবস্থানে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ পরিচালনা করেন। বোয়ালিয়া বাজারে পাকহানাদার বাহিনী অনেক বাংকার নির্মাণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা এসব বাংকারে আক্রমণ করলে ৮-১০ জন পাকসেনা নিহত হয়। বোয়ালিয়া বাংকার আক্রমণ একটি সফল অভিযান হওয়ায় এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের তা উজ্জীবিত করে।
৮ই সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার দিকে মেহেদীপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বাংকারসমূহে আক্রমণ করে। আকস্মিক এ হামলায় ঘটনাস্থলে ৮-১০ জন পাকসেনা নিহত হয়। হঠাৎ আক্রান্ত হওয়ায় অপ্রস্তুত ও হতচকিত পাকসেনারা কোনো প্রতিরোধ না করেই পিছু হটে। তারা নৌকায় নদী পার হয়ে রহনপুরে পালিয়ে যায়। প্রাণরক্ষার জন্য কিছু পাকসেনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালাবার চেষ্টা করতে গিয়ে ডুবে মারা যায়। বোয়ালিয়া বাংকার দখলে নিয়ে সকাল ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কাশিয়াবাড়ি ডিফেন্সে এবং বিকেলে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাঁর সাব-সেক্টর কার্যালয় মেহেদীপুরে ফিরে যান। এ-যুদ্ধে দলদলীর কোম্পানি কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম, ইপিআর সুবেদার গফুর মণ্ডল, ইপিআর সুবেদার মীর মোকাদ্দেশ, আনসার পিসি রাজা মিয়া, সেনাসদস্য সুবেদার কুতুব উদ্দীন প্রমুখ অংশ নেন।
৮ই সেপ্টেম্বরের পর আরো কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধারা বোয়ালিয়াস্থ পাক-বাংকারে আক্রমণ করে তাদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। তাই এ বাংকার এলাকায় তারা সব সময়ই মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে আতংকিত থাকত। ২৬শে সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণে বোয়ালিয়াসহ আশপাশের পাকিস্তানি ডিফেন্স বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জীবন রক্ষার জন্য তারা মহানন্দা নদী অতিক্রম করে রহনপুরের দিকে পালিয়ে যায়। ৭ই অক্টোবর ভোর ৪টার দিকে মুক্তিবাহিনী আবার আক্রমণ করে। ২৬শে নভেম্বর ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর বোয়ালিয়া থেকে শত্রুবাহিনীকে উৎখাত করার লক্ষ্যে রাত প্রায় ৩টার দিকে পাকবাহিনীর বাংকারে আক্রমণ করেন। এ অপারেশন পুরোপুরি সফল হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাকসেনারা নৌকা ও মোটরের টিউব ভাসিয়ে নদীপথে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পানিতে ডুবে কয়েকজন হানাদার সৈন্য মারা যায়। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড