You dont have javascript enabled! Please enable it! বিজুলবাজার যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

বিজুলবাজার যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর)

বিজুলবাজার যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় জুন মাসের প্রথম দিকে। এতে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকেন।
নবাবগঞ্জের অনেক মুক্তিযোদ্ধাও নিজ এলাকায় এসে আশুড়ার বিলের শালবন ও অন্যান্য স্থানে আত্মগোপন করে গেরিলা তৎপরতা শুরু করেন। তখন পাকসেনাদের শক্ত ঘাঁটি ছিল বলাহার, ডুগডুগি ও ভাদুরিয়া ক্যাম্প। এখান থেকে তারা ডাঙ্গাপাড়া, বিরামপুর, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জ ক্যাম্পে যুদ্ধের রসদপত্র সরবরাহ করত। এদিক থেকে পাকবাহিনীর কাছে এ ক্যাম্পগুলোর গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট। এ ক্যাম্পগুলোর ফলে এ অঞ্চলের জনগণ ভয় ও ত্রাসের মধ্যে দিন কাটাত। রাজাকাররা ভয় দেখিয়ে এ অঞ্চলের গ্রামগুলো থেকে গরু-ছাগল ও হাস-মুরগি সংগ্রহ করে পাকসেনাদের ঘাঁটিতে পৌছে দিত। সেই সঙ্গে হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে তারা হিন্দু পাড়াগুলোতে লুটপাট ও নানারকম অত্যাচার চালাত। এসব খবর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কানে গেলে তাঁরা প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করেন।
জুন মাসের ১০ তারিখ ভাদুরিয়া বাজারের পাশে হিন্দুপাড়া থেকে পাকহানাদার বাহিনীর কয়েকজন সৈন্য বেশ কয়েকজন হিন্দু যুবককে ধরে এনে হত্যা করে। এ খবরের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ১২ই জুন সকাল ৮টার দিকে পাকবাহিনী একটি গরুর গাড়িতে রসদপত্র নিয়ে বলাহার থেকে বিরামপুরের দিকে যাচ্ছিল। নবাবগঞ্জের গেরিলাবাহিনী এ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা কাশেম চিস্তির নেতৃত্বে বিজুলবাজারে অবস্থান নেন। গরুর গাড়িতে ১০জন পাকসেনা ছিল। গাড়িটির সম্মুখ ভাগে পাকসেনাদের একটি টহল গাড়ি বিরামপুরের দিকে যাচ্ছিল। সকাল ৯টার দিকে টহল গাড়িটি বিজুলবাজার অতিক্রম করে বিরামপুরের দিকে চলে যায়। অবস্থানরত গেরিলা বাহিনী টহল গাড়ির অবস্থান জেনে বিজুলবাজারের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকেন। গাড়িটি চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় বিজুলবাজারকে টার্গেট করে অবস্থান নেন। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে রসদভর্তি গরুর গাড়িটি বিজুলবাজার অতিক্রম করে বড় ব্রিজের দিকে যেতে থাকে। গেরিলারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে গাড়িটির পিছু নেন। তাঁদের একটি গ্রুপ বিজুলবাজার থেকে পূর্ব দিকে অর্ধ কিলোমিটার সামনে বড়ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে গোপনে নিরাপদ অবস্থান নিয়েছিল। বাজার থেকে অন্য গেরিলাদের সিগন্যাল পাওয়ার পর তাঁরা ব্রিজ থেকে বিজুলবাজারের দিকে সতর্কতার সঙ্গে এগুতে থাকেন। বিজুলবাজার থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার সামনে গরুর গাড়িটি এগুতেই বাজারে অবস্থানরত গেরিলারা গাড়িটির ওপর আক্রমণ চালান। এ-সময়ে বড় ব্রিজে অবস্থানরত গেরিলারাও এসে যোগ দেন। পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা গরুর গাড়িটিকে কেন্দ্র করে ডিফেন্স নেয়। ১০-১৫ মিনিট দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পাকবাহিনীর ৬ জন সদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। বাকি ৪ জন পালিয়ে যায়। গাড়োয়ানেরও মৃত্যু হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের রসদপত্র উদ্ধার করে বিজুলবাজার থেকে দ্রুত সরে পড়েন। এ-যুদ্ধে অংশ নেন আ. রশিদ, আশরাফ আলী, আফতাব আলী, মকবুল হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। [মাসুদুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৭ম খণ্ড