You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.29 | বারোআড়িয়া হত্যাকাণ্ড (বটিয়াঘাটা, খুলনা) - সংগ্রামের নোটবুক

বারোআড়িয়া হত্যাকাণ্ড (বটিয়াঘাটা, খুলনা)

বারোআড়িয়া হত্যাকাণ্ড (বটিয়াঘাটা, খুলনা) সংঘটিত হয় ২৯শে নভেম্বর। এতে ৫ মাসের শিশুসহ ৪ জনকে হত্যা করা হয়।
বটিয়াঘাটা সদর থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গ্রাম বারোআড়িয়া। এর পরেই পাইকগাছা উপজেলা। তিনদিকে নদীবেষ্টিত, একদিকে খাল এবং চারপাশে ওয়াপদা বাঁধ নির্মিত বারোআড়িয়া ৪নং সুরখালি ইউনিয়নের অন্তর্গত হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রাম। বাজার ও লঞ্চঘাটের জন্য এ জায়গাটি বেশ পরিচিত। দীর্ঘকাল ধরে এখানকার মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ এলাকার অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি স্বাধীনতাবিরোধীরা ইচ্ছেমতো লুটপাট করে। এ গ্রামের মনি গোলদারের ফেলে যাওয়া দোতলা বাড়িতে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর তারা সুরখালি ও গাওঘরা গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ সকল ক্যাম্পে প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করা হতো। ক্যাম্পগুলোর আশপাশের বহু এলাকা জুড়ে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এখানকার সবচেয়ে নারকীয় এবং বীভৎস ঘটনা ঘটে বারোআড়িয়া বাজার সংলগ্ন গুরুপদ মণ্ডলের বাড়িতে।
রাজাকার বাহিনীর সদস্য মোজাহার ও হাতেমের নেতৃত্বে একদল রাজাকার এক রাতে গুরুপদ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা গুরুপদ মণ্ডল, তার ২০ ও ১১ বছর বয়সী দুই ছেলে যথাক্রমে অংশুপতি মণ্ডল ও খোকন মণ্ডলকে বাড়ির পাশে নদীর চড়ে হাঁটু পর্যন্ত পুঁতে গুলি করে হত্যা করে। এরপর গুরুপদ মণ্ডলের স্ত্রী গুরুদাসীর কোলের ৫ মাস বয়সী কন্যা পারুলকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আছাড় মেরে হত্যা করে। গুরুদাসী ও তাঁর ১৬ বছর বয়সের কন্যা অঞ্জলিকে রাজাকাররা তাদের ক্যাম্পে আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করে। পরবর্তীতে এই ক্যাম্প উচ্ছেদ করার সময় মানসিক ভারসাম্যহীন গুরুদাসীকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তার মেয়ে অঞ্জলিকে আর পাওয়া যায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে গুরুদাসী পাগলী বেশে খুলনা শহরের রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। [শংকর কুমার মল্লিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড