বামনডাঙ্গা যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)
বামনডাঙ্গা যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২রা অক্টোবর। এতে ৮-১০ পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ঘটনার দিন সকালবেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আশ্রাফুজ্জামান কহিনুর বামনডাঙ্গা যাওয়ার জন্য সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী দুটি নৌকাযোগে প্রায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা সকাল ১০টার দিকে বামনডাঙ্গা বাজারে গিয়ে পৌছান। স্থানীয় লোকজন তাঁদের নানাভাবে আপ্যায়ন করে। এদিকে রাজাকার বালা শেখের স্ত্রী দৌড়ে দিগনগর ক্যাম্পে গিয়ে পাকসেনা ও রাজাকারদের এ সংবাদ দেয় এবং রাজাকারদের সহযোগী কিছু লোক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে এবং চা-বিস্কুট, ডাব ইত্যাদি খাইয়ে সময় অতিবাহিত করতে থাকে। দুপুরের দিকে হঠাৎ নদীপথে নৌকাযোগে পাকসেনা কমান্ডার আতা খানের নেতৃত্বে প্রায় ৩০- ৪০ জন পাকসেনা ও রাজাকার এসে বামনডাঙ্গা বাজারের পূর্বদিক থেকে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলেন। সে অবস্থায় তাঁদের কেউ-কেউ দ্রুত পজিশন নেন, আবার কেউ-কেউ পিছু হটতে থাকেন। এদিকে কমান্ডার কহিনুর গুলিবিদ্ধ হন। তা সত্ত্বেও তিনি এলএমজি দিয়ে পাল্টা ব্রাশ ফায়ার করেন। এতে পাকসেনা ও রাজাকাররা কিছুটা দমে যায়। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা কহিনুরকে পিছু হটতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি পিছু না হটে বরং তাঁদের আত্মরক্ষা করতে বলেন। এর মধ্যে শত্রুরা খুবই নিকটে এসে পড়ে। কহিনুর তাঁর এলএমজি-তে গুলি লোড করে বাজারের মাঝখানে একটি ঝাউগাছের আড়ালে পজিশন নিয়ে চুপচাপ শত্রুর অপেক্ষায় থাকেন। এতে শত্রুপক্ষ মনে করে যে, মুক্তিযোদ্ধারা পালাচ্ছে। তাই তারা গুলি করতে-করতে এগিয়ে আসে। কহিনুর এমন একটি সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। শত্রুরা তাঁর আওতার মধ্যে আসামাত্রই তিনি এলএমজি থেকে ব্রাশ ফায়ার করলে সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনা কমান্ডার আতা খানসহ কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হঠাৎ এ ধরনের আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকারা পর্যুদস্ত হয়ে পালাতে থাকে। শত্রুদের আক্রমণের আর কোনো সম্ভাবনা না দেখে বিজয় নিশ্চিত যেনে কমান্ডার কোহিনুর এলএমজি নিয়ে পায়ে হেঁটে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানরত সহযোদ্ধাদের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হন। কহিনুরের ঘাড়ে, পায়ে ও বুকের পাশে গুলি লাগে এবং তিনি মারাত্মক আহত হন। অন্য ২ জন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাঁরা হলেন আবুল কালাম আজাদ ও সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস। অপরদিকে পাসেনাদের কমান্ডার আতা খান সহ ৮-১০ জন নিহত হয়। রাজাকার বালা শেখ গুলিতে চোখ হারায়।
বামনডাঙ্গার যুদ্ধে কহিনুরের দলের সঙ্গে কাইয়ুম সিকদারের দলও অংশ নিয়েছিল। তবে একক কৃতিত্বের দাবিদার কমান্ডার আশ্রাফুজ্জামান কহিনুর। তাঁর অসীম সাহস, রণনৈপুণ্য ও দেশপ্রেম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য বয়ে আনে। [মো. ফিরোজ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড