You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | বাঘাবাড়ি যুদ্ধ (শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

বাঘাবাড়ি যুদ্ধ (শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ)

বাঘাবাড়ি যুদ্ধ (শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর। এটি ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার শেষ যুদ্ধ। এ- যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ২ জন আহত হন। অপরপক্ষে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং বাকিরা নগরবাড়ি হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। শাহজাদপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
১৩ই ডিসেম্বর আব্দুর রাজ্জাক মুকুল ও রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে মো. সাইফুদ্দিন তারা, মো. নিয়ামুল ওয়াকিল খান আওরঙ্গ-সহ প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাদপুরের বাড়াবিল গ্রামে অবস্থান করছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী বগুড়া থেকে বাঘাবাড়ির দিকে যাচ্ছে – রাতে তাঁরা এ খবর পান। উল্লাপাড়ার পাকসেনারা তখন পালাচ্ছিল। তারা একটি করে ব্রিজ অতিক্রম করে আর সেটি বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে, যাতে পেছন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করতে না পারেন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিপুর অঞ্চলে তাদের আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে তাঁরা খুব ভোরে শক্তিপুর অঞ্চলে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি বাহিনী শক্তিপুরে আসার সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পেছনের দিকে গুলি করতে-করতে বাঘাবাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সৈয়দপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাকসেনাদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং বিহারিরাও ছিল। শতশত পাকসেনা, মিলিশিয়া ও বিহারি পরিবার আত্মসমর্পণের জন্য নগরবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা পেছন থেকে তাদের অনুসরণ করেন। অন্যদিকে শাহজাদপুরের কলেজ এবং কাছারি বাড়িতে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের খালেকুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন ৫২ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল ধাওয়া করে। এ-সময় দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য দুটি দল শাকতোলা গ্রামের কাছে এলে এখানে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছুক্ষণ যুদ্ধ হয়। এরপর ভারতীয় বিমান থেকে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারাও একই সময় নুকালি এবং আলোকদিয়া গ্রামে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এ-যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ২ জন আহত হন। এখানে অনেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। যারা বেঁচে ছিল তারা নগরবাড়ি হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। এভাবে শাহজাদপুর থেকে পাকবাহিনী বিতারিত হলে এ উপজেলা সম্পূর্ণভাবে হানাদারমুক্ত হয়। [মাহফুজা হিলালী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড