বাগেরহাট শহর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর)
বাগেরহাট শহর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এ গণহত্যায় বহু লোক প্রাণ হারায়।
পাকবাহিনী সর্বপ্রথম ২৪শে এপ্রিল বাগেরহাটে অনুপ্রবেশ করে। এদিন তারা শহরে ঢুকে সরুই, শালতলা, কর্মকারপট্টি, মেইনরোড, ঘোষপট্টি, সাহাপাড়া, ওয়াপদা, সাধনার মোড় প্রভৃতি এলাকায় কিরণচন্দ্র দাস, নিশিকান্ত পাল, মুজিবর রহমান, মতিলাল সাহা, প্রমথ সাহা, সাহেব আলী, শ্রীপতি গোস্বামী, ভোলানাথ বসু, শিশুতোষ দাস, অমূল্য সাহা, গোপাল দাস, অমূল্য পাল, বাসুদেব মল্লিক, নির্মল বসু, শিবপ্রসাদ দাস, জিতেন নাগ, রমণীরঞ্জন মজুমদার, ছুটে দাম, পলাশ চক্রবর্তী প্রমুখকে হত্যা করে।
১০ই মে পাকবাহিনী পুনরায় বাগেরহাটে আসে। এদিন বাগেরহাটের খ্যাতিসম্পন্ন ডাক্তার অমরেন্দ্র বসু ওরফে ফগ ডাক্তার এবং তাঁর প্রতিবেশী যশোদা দর্জিকে একত্রে বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবসে বাগেরহাট প্রশাসন ভবনের ছাদে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলক চিত্তরঞ্জন মজুমদারকেও সেদিন পাকবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে -রাজাকার মজিদ কসাই। ১০ই মে বাগেরহাটের আমলাপাড়ার রেস্ট হাউসে পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। একই সময় ডাকবাংলোতে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপিত হয়। এ দুটি ক্যাম্পে নিয়মিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে নির্যাতন এবং এক পর্যায়ে ডাকবাংলোর ঘাটে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। হত্যার পর লাশ ভৈরব নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এছাড়া মোজাম ডাক্তারের চেম্বারের পেছনের নদীর ঘাট, বাজারে রসিক প্রামাণিকের বাসা এবং ওয়াপদা রেস্টহাউস চত্বরকে বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মোজাম ডাক্তারের চেম্বারের পেছনে একদিনে মালোপাড়ার পলাশ, রতন ও পীযূষকে জবাই করে হত্যা করা হয়। পীযূষের পিতা খোকা মালোকে চরগ্রামের নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়। রসিক প্রামাণিকের বাসার নিচে বলরাম সাহা ও তাঁর তিন কর্মচারীকে জবাই করা হয়।
বাগেরহাট শহরের এসব বধ্যভূমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের তখনকার ত্রাস আকিজ উদ্দিন জবাই করে হত্যা করত। অত্যন্ত নির্বিকারচিত্তে মানুষ খুন করতে পারত বলে রাজাকার রজ্জব আলী ফকির তার বাহিনী নিয়ে যখন যে গ্রামে যেত, আকিজ উদ্দিনকে সেখানে তার সঙ্গী রাখত। রাজাকার কমান্ডার সিরাজ মাস্টার এবং মজিদ কসাই ছিল অন্য দুই কুখ্যাত হত্যাকারী। পুরো বাগেরহাটে এরা মানুষ হত্যা ও জবাইয়ের কাজ করত। বাগেরহাট শহরে একটি বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [স্বরোচিষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড