You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক বশির আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক বশির আহমেদ

বশির আহমেদ, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫৭) স্কুলের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৭ সালের ১৯শে মে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম লাল মামুদ, মাতার নাম কিশোরী বেওয়া।
বশির আহমেদ ১৯৭১ সালে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি দেশের মানুষদের রক্ষার তাগিদ অনুভব করেন।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তিনি ভারতে যান। ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টর মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চাইলে কিশোর হিসেবে প্রথমে তাঁকে প্রশিক্ষক সোলায়মান হক নিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর অবিচল মনোবল দেখে তিনি শেষ পর্যন্ত সম্মত হন। মে মাসের শেষদিকে তিনি এ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কামালপুর এলাকার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটি। কামালপুরে মুক্তিযুদ্ধকালে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানিদের পরাজিত বা আত্মসমর্পণে বাধ্য করা যাচ্ছিল না। ৪ঠা ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভারতীয় -মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার গুরবক্স সিং গিল আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে পাকিস্তানিদের কামালপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন হাসান মালিকের কাছে চিঠি পাঠাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠি বহনের আহ্বান জানানো হলে প্রথমে কেউ রাজি হননি। তখন বশির আহমেদ এগিয়ে আসেন। চিঠি ও সাদা পতাকা নিয়ে কামালপুর ক্যাম্পের কাছাকাছি গিয়ে তিনি প্রথমে সাদা সোয়েটার দেখান। পরে সাদা পতাকা নাড়িয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তখন ভারতের যুদ্ধবিমান আকাশে চক্কর দিচ্ছিল। ক্যাম্পের আশপাশে কয়েকটা বোমা ফেলে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পাকিস্তানিরা বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত তাঁকে আটক করে রাখে। এদিকে বশির আহমেদকে মেরে ফেলেছে ধারণা করে সঞ্জু নামের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সাদা পতাকা দিয়ে কামালপুর ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সে-সময় আবার ভারতীয় যুদ্ধবিমান পুনরায় বোমা বর্ষণ করে। এতে ২-৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। সঞ্জু আর বশির আহমেদ বিমান লক্ষ করে সাদা পতাকা দেখান। কামালপুরের পাকিস্তানি অধিনায়ক আত্মসমর্পণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে চিঠির জবাব দিয়ে বশির আহমেদকে ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত কামালপুর ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন হাসান মালিকসহ ১২৬ জন পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বশির আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার পরে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। এ দম্পতির ৩ পুত্র সন্তান রয়েছে। [রেহানা পারভীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড