You dont have javascript enabled! Please enable it! বরুণা বাজার গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) - সংগ্রামের নোটবুক

বরুণা বাজার গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

বরুণা বাজার গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় জুলাই মাসের শেষার্ধে। এতে কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের বরুণা একটি গ্রাম্য বাজার ও শিক্ষাকেন্দ্র। এ বাজারে রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। বরুণা বাজারসহ সমগ্র ধামালিয়া ইউনিয়ন ছিল এ ক্যাম্পের রাজাকারদের আয়ত্তে। ডুমুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কমিউনিস্টদের একাংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অংশ নেয়। কৃষক নেতা শেখ আবদুল মজিদ (১৯৩৯-১৯৮৯) কমিউনিস্টদের নেতা ছিলেন। তাঁর নাম অনুসারে কমিউনিস্টরা মজিদ বাহিনী – নামে পরিচিত ছিল। ধামালিয়া এলাকায় রাজাকারদের সঙ্গে মজিদ বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ হয়।
জুলাই মাসের শেষার্ধে বরুণা ও ধামালিয়া গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিকে মজিদ বাহিনীর সহযোগী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক মনে করে রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। বরুণা বাজার সংলগ্ন স্কুলের মাঠে নিয়ে রাজাকাররা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। অল্পক্ষণের মধ্যে গুলিবিদ্ধ একজন ছাড়া সকলে প্রাণ হারায়। গুলিতে খোকন মোল্লা (ধামালিয়া) আহত হন। রাজাকাররা চলে গেছে ভেবে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে রাজাকাররা তাকে দেখে ফেলে। তখন পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে একজন কৃষক কোদাল নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলেন। রাজাকার মতিন ঐ কৃষকের কাছ থেকে কোদাল নিয়ে পলায়নরত খোকন মোল্লার মুখ ও গলায় উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। এ নির্মম আক্রমণে খোকন মোল্লা প্রাণ হারান। উল্লেখ্য, মতিন রাজাকার কিছুকাল পরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়লে সে ১১০ জনকে নিজ হাতে খুন করেছে বলে স্বীকার করে। পরে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনতার হাতে মতিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
এ ঘটনার পরে রাজাকাররা বরুণা বাজার এলাকায় বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। মোকছেদ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এসবের প্রতিবাদ করে রাজাকারদের আক্রোশের শিকার হন। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
বরুণা বাজার গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে ৬ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আব্দুস সবুর বিশ্বাস (পিতা ইউসুফ বিশ্বাস, বরুণা), আহাদ আলি ফকির (পিতা ফজলুল ফকির, বরুণা), আব্দুস ছাত্তার মোড়ল (পিতা আবদুল কাদের মোড়ল, বরুণা), আনোয়ার মোল্লা (পিতা আয়েনউদ্দিন মোল্লা, ধামালিয়া), খোকন মোল্লা (পিতা কালু মোল্লা, ধামালিয়া) এবং মোকছেদ মোল্লা (বরুণা)। [দিব্যদুতি সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড