মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল সদর উপজেলা
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের সর্বত্র এমনকি প্রতিটি থানায় জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ৮ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রেডিওতে প্রচারিত হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও অসহযোগ আন্দোলন – চূড়ান্ত রূপ নেয়। ২০শে মার্চ ব্রজমোহন কলেজে ছাত্র-শিক্ষকরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার তারবার্তাটি জেলা আওয়ামী লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের কাছে আসে। তিনি বার্তাটির অনুলিপি ভোলা, পটুয়াখালি, বরগুনা ও ঝালকাঠিতে পাঠিয়ে দেন।
২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ এমপিএ (পিস্তল মহিউদ্দিন নামে অধিক পরিচিত)-র কলেজ রোডের বাসায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সভায় শহরসহ প্রতিটি মহকুমা এবং থানা সদরের পুলিশের অস্ত্রাগারের রাইফেল সংগ্রহ করে থানা সদর ও চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ শিবির প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫শে মার্চ রাতে বরিশাল শহরের পেশকার বাড়ির সামনে হেমায়েত মঞ্জিলের মাঠে গণসংগীতের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের কাছে ট্র্যাঙ্ককলের মাধ্যমে মধ্যরাতে নোয়াখালীর খালেদ মোহাম্মদ আলী এমএনএ-র নিকট থেকে ঢাকার রাজারবাগ, পিলখানাসহ শহরের অন্যত্র পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার সংবাদ বরিশাল কন্ট্রোল রুমে পৌঁছায়। সঙ্গে-সঙ্গে গণসংগীতের মাইক থেকে ঢাকায় পাকসেনাদের নির্বিচার গণহত্যার খবর প্রচার করা হয় এবং পাকবাহিনীকে প্রতিহতের জন্য সকলকে আহ্বান জানানো হয়। এ-সময় আওয়ামী লীগ নেতা সরদার জালাল উদ্দিন, ছাত্রলীগ- নেতা জহুরুল ইসলাম খান পান্না (জেড আই খান পান্না), এনায়েত হোেসন চৌধুরী, এস এম আলমগীর প্রমুখ রিকসাযোগে মাইক নিয়ে পাকসেনাদের পিলখানা ও রাজারবাগ এবং নিরীহ জনতার ওপর সশস্ত্র আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ার খবর শহরে প্রচার করতে থাকেন এবং ২৬শে মার্চ সকালে সবাইকে পেশকার বাড়ির কন্ট্রোল রুমে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। ২৫শে মার্চ রাতেই নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসায় শহরে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক খান, এডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত এমএনএ, সহ-সভাপতি এডভোকেট আমিনুল হক চৌধুরী, সহ-সভাপতি কাজী মহিউদ্দিন আহম্মদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ এমপিএ, যুগ্ম- সম্পাদক আমীর হোসেন আমু এমপিএ, সরদার জালাল উদ্দিন, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. আইয়ুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রাশাসক কাজী আজিজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফকরুদ্দিন, ছাত্রনেতা মাকছুদ আলী খান বাদল, ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা, নূরুল আলম ফরিদ, সৈয়দ কামাল উদ্দিন ফিরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী জেলার সার্বিক প্রশাসনিক দায়িত্ব সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের ডা. সুফিয়া বেগম (স্বামী নূরুল ইসলাম মঞ্জুর)-এর চেম্বারে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়। তাঁর টেলিফোনটি কন্ট্রোলরুমের কাজে ব্যবহৃত হয়। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন মাকসুদ আলী খান বাদল, মেডিকেল কলেজের ছাত্র লুৎফর রহমান ও মইনুল হোসেন। সভাশেষে জেলা প্রশাসক আইয়ুবুর রহমান, পুলিশ সুপার ফকরুদ্দিন আহমেদ, এসআই বাদশা মিয়া, হাবিলদার আকবরসহ অন্য পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় গভীর রাতে বরিশাল পুলিশ লাইন অস্ত্রাগারে রক্ষিত সকল অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ পেশকার বাড়ির কন্ট্রোল রুমে আনা হয়। ২৬শে মার্চ সকালে কন্ট্রোল রুম থেকে পাকবাহিনীকে মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং স্বাধীনতাকামী অন্যদের মুক্তিযুদ্ধের শপথ পাঠ করিয়ে হাতে রাইফেল তুলে দেয়া হয়। একই দিন সকাল থেকে ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধুর পাঠানো ওয়ারলেস ম্যাসেজটি একটি পিকআপ ভ্যানে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের পাশের মজিদ মিয়ার দোকানের মাইক দিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করেন।
২৬শে মার্চ সকাল ১০টায় পুলিশ সুপারের বাসভবনে নীতি- নির্ধারণী কর্মসূচি গ্রহণের উদ্দেশ্যে সংগ্রাম পরিষদের সদস্য, নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সকল সদস্য, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং জেলা প্রশাসনের সকল বিভাগের প্রধানসহ এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক খান। সভায় উপস্থিত সকলেই পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের অঙ্গীকার করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে দক্ষিণ অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এমএনএ (বেসামরিক বিভাগ), ক্যাপ্টেন (যুদ্ধকালে মেজর র্যাংকে উন্নীত) এমএ জলিল (প্রতিরক্ষা বিভাগ), আবদুল মালেক খান (অর্থ বিভাগ), মহিউদ্দিন আহমেদ এমপিএ (খাদ্য বিভাগ), এডভোকেট আমিনুল হক চৌধুরী (বিচার বিভাগ), আমির হোসেন আমু এমপিএ (ত্রাণ বিভাগ), শামসুল হক এমএনএ (জ্বালানী বিভাগ), এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন (তথ্য বিভাগ), এডভোকেট হাসান ইসলাম চৌধুরী (সিভিল ডিফেন্স বিভাগ), এডভোকেট সরদার জালাল উদ্দিন (যোগাযোগ বিভাগ) এবং ডা. রহমত আলী (চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজ) (স্বাস্থ্য বিভাগ)। প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ। এই উপদেষ্টা পরিষদ দক্ষিণ বাংলা স্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সংগ্রাম পরিষদের অপর একটি কমিটিও ছিল। এর সদস্যরা ছিলেন— আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এমএনএ, সালাউদ্দিন কায়সার এমএনএ, ডা. আজহার উদ্দিন আহম্মেদ এমএনএ, -আগরতলা মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক এমপিএ, আব্দুল করিম সরদার এমপিএ, এডভোকেট সুধীর চক্রবর্তী ও কাজেম আলী মিয়া। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাধীন দক্ষিণ বাংলা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সভায় জরুরিভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সামরিক, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২৫শে এপ্রিল বরিশাল শহরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সংগ্রাম পরিষদের কর্তৃত্ব বহাল ছিল। বাকেরগঞ্জ কালেক্টরেটের কর্মচারীদের একাংশসহ সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ পরিষদের সচিবালয়ের কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান সমন্বয়কারীর সভাপতিত্বে প্রতিদিন সংগ্রাম পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হতো। সভার সিদ্ধান্তগুলো মুক্তিযোদ্ধারা বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশনা আকারে কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ব্যাংকগুলোও উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশমতো কাজ করত। প্রশাসনিক যাবতীয় কার্যক্রম সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে পরিচালিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ উজিরপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে ছুটিতে আসা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন এম এ জলিলকে প্রতিরক্ষা প্রধান এবং ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা (হিরু)-কে সহ-অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। প্রধান ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয় বরিশাল বেলস্ পার্কে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু উদ্যান)। পার্ক সংলগ্ন আইডব্লিউটিএ-র ডাকবাংলোর কাঠের দোতলা বাড়িটিকে করা হয় ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্স। বেলস্ পার্কের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ নুরুল আহসান আবু মিয়া এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন লেফটেন্যান্ট নাসির, জেলা এডজুট্যান্ট মেজবাহ উদ্দিন, মহকুমা এডজুট্যান্ট তৈয়বুর রহমান, সহকারী এডজুট্যান্ট মকবুল হোসেন প্রমুখ। এছাড়া কাশিপুরের নারিকেল বাগান, নবগ্রাম রোডের মিশনারি বিদ্যালয়, তালতলী আমিন বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাকুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ভাটিখানায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর বরিশাল জেলায় ১১ সদস্যবিশিষ্ট স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক মনসুরুল আলম মন্টু এবং সদস্য ওবায়দুর রহমান মোস্তফা, হাবিবুল ইসলাম আনিস তালুকদার, ফারুকুল ইসলাম ফারুক, মনিরুল হাসান খান মনির, জহিরুল ইসলাম খান পান্না, খান আলতাফ হোসেন ভুলু, মুশফিকুর রহমান কবির, শামসুল আলম ও মাসুদ মাহমুদ খান। সদর রোডের বাটার দোকানের পেছনে ছিল ছাত্রলীগের অফিস। একই অফিস ছিল স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর কার্যালয়। এদিকে মুক্তিকামী জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আক্কাস হোসেনের নেতৃত্বে শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীত পরিবেশন করতেন।
মার্চ মাসে বিএম কলেজের অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট শামসুদ্দিন আহমেদ খানকে আহ্বায়ক, মহিলা কলেজের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং বাবুগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর মোল্লাকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে বরিশালের সরকারি ও বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। অধ্যাপক সিরাজুল হক (বি এম কলেজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান), অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদের (বি এম কলেজ, দর্শন), বিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত কুমার দাশগুপ্ত এর সদস্য ছিলেন। ২৬শে মার্চ স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের নেতৃেত্বে বিশাল মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। পাকবাহিনীর অতর্কিত হামলা মোকাবেলার জন্য মার্চ মাসেই সাধারণ ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং বিস্ফোরক মলোটভ ককটেল ও বোমা বানানো শুরু হয়। সেনাবাহিনীর নিয়মিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অধ্যাপক লেফটেন্যান্ট মো. শামসুদ্দিন আহমেদ খান বিএম কলেজের ইউওটিসি ক্যাডেটদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। ২৭শে মার্চ তাদের জন্য ব্যবহৃত ট্রেনিংয়ের এলএমজি-টি তিনি স্বাধীন বাংলা সচিবালয়ে নিয়ে আসেন এবং কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম এ জলিলের কাছে হস্তান্তর করেন। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা তারিক আনিছ ও শাহজাহানের চেষ্টায় এলএমজি-টি সচল করা হয়।
একই দিন সদর রোডের অস্ত্র ব্যবসায়ী আবদুর রশীদ (পিতা ইসরাইল) এবং প্রকৌশলী মকবুল কিছু কার্তুজসহ ২টি এয়ারগান সচিবালয়ে দান করেন। এ-সময় বিএম কলেজের ইউওটিসি প্লাটুনের ২০টি ডিপি থ্রি-নট-থ্রি ও ১০টি ডামি রাইফেল দ্বারা সার্জেন্ট আনিস, সার্জেন্ট ইউনুস, কর্পোরাল ফারুক ব্রজমোহন বিদ্যালয় মাঠে প্রতিদিন বিকেলে ২৫০ জন স্কুল ও কলেজের ছাত্রকে রণকৌশল ও রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। পাকিস্তানি নৌবাহিনীর ফ্রগম্যান ও কমান্ডো মাহফুজ আলম বেগ (পিতা অধ্যাপক হুছামউদ্দিন, অধ্যক্ষ, বিএম কলেজ) এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে ছুটিতে বাড়িতে এসে কাশিপুর নারিকেল বাগান প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, লেফটেন্যান্ট নুরুল হক বাচ্চু মিয়া লাকুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জমিদার দেবেন রায়চৌধুরী এবং কাশিপুর আওয়ামী লীগ নেতা মানিক মিয়া লাকুটিয়া ক্যাম্প প্রতিষ্ঠাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। পরবর্তীকালে কিছু সময়ের জন্য দেবেন রায়চৌধুরীর লাকুটিয়ার বাড়িতে ৯ নং সেক্টরের ২য় হেড অফিস স্থাপন করা হয়। ইউওটিসি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শাহনেওয়াজ (পিতা এডভোকেট আবদুল লতিফ) বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক তালতলী আমিন বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট মেহেদী তালতলীর ঝুনাহার ভারানীর পাড়ে ট্রেঞ্চ খনন করে পাকিস্তানি জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন।
সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশ অনুসারে কাউনিয়া বিসিকে এবং শহরের ধর্মরক্ষিণী মিলনায়তনে সাংবাদিক এস এম ইকবাল, মিন্টু বসু, গৌতম গাঙ্গুলী প্রমুখ এবং অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ খান, রসায়নের শিক্ষক হারুন অর রশীদ, ছাত্রনেতা এনায়েত চৌধুরী, মাহবুব, আ স ম ফিরোজ, রসায়ন বিভাগের বেয়ারার আবদুল মিয়া ব্রজমোহন কলেজের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি হতে কনসেনট্রেটেড সালফিউরিক এসিড, পটাশিয়াম ক্লোরেট ও সালফার জেলা প্রশাসকের গাড়িতে করে বরিশাল শহরের কাউনিয়া (বর্তমান বিসিক অফিস) নিয়ে মলোটভ ককটেল, বোমা ও নানা ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করেন। বরিশাল যুবসংঘের কর্মীরাও বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরিতে সহায়তা করেন। শিল্পী চিত্ত হালদার মলোটভ ককটেল তৈরিতে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। এসব বোমা ও মলোটভ ককটেল নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এমএনএ ও ক্যাপ্টেন জলিল খুলনা ও চাঁদপুর অপারেশনে ব্যবহার করেন। ১৮ই এপ্রিল বরিশাল শহরের ওপর পাকবাহিনীর প্রথম বিমান হামলার পর সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশক্রমে বরিশাল জেলার জেলখানার সকল বন্দিদের ছেড়ে দেয়া হয়। ন্যাপ এবং সিরাজ সিকদারের দল বরিশাল ল’ কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। নূরুল ইসলাম খান, সিদ্দিক হোসেন, নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ইকবাল হোসেন ফোরকান, শাহআলম প্রমুখ এ ক্যাম্প পরিচালনা করেন। শহরের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল বারেক এবং এডভোকেট জালাল সরদারের ওপর। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এমএনএ-র নেতৃত্বে সৈয়দ কামালউদ্দিন ফিরু, সাবু, সুরুজ, আবদুস সাত্তার, কালু, হাবিলদার কবির প্রমুখ স্বয়ংক্রিয় ও ভারী অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ভারতে যান এবং ২০শে এপ্রিল অস্ত্রসহ বরিশালে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে বরিশালের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বশিরহাট, টাকিপুর, টাকি, আমলি, হাসনাবাদ, পিপা, টেটরা প্রভৃতি স্থানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন পত্রিকা বাংলাদেশ- বরিশাল থেকে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন এস এম ইকবাল, মিন্টু বসু ও হেলাল উদ্দিন আহমেদ। প্রকাশক ছিলেন হারেছ আহম্মেদ খান, মুকুল দাস ও এনায়েত হোসেন মিলন। ২ পৃষ্ঠার ট্যাবলয়েড সাইজের পত্রিকাটির মূল্য ছিল ১৫ পয়সা। পত্রিকাটির একটি মাত্র সংখ্যা ছাপা হয়। ১৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী বরিশালে বিমান হামলা চালালে পত্রিকাটি আর প্রকাশিত হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধের বিভিন্ন খবর ৯ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত সকল স্থানে প্রচারের জন্য ৪ঠা আগস্ট মুজিবনগর সরকার-এর নিকট থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে (রেজি. নং ১৯) বিপ্লবী বাংলাদেশ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের উদ্যোগে এবং ৯ নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের আনুকূল্য ও সহায়তায় বশিরহাটের হাসনাবাদ থেকে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটিতে এর সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের সঙ্গে মিন্টু বসু, ইউসুফ হোসেন কালু, ফটোগ্রাফার তৌফিক ইসলাম দীপু ও মানসসহ একদল তরুণ সাংবাদিক যুক্ত ছিলেন। পত্রিকাটি মুজিবনগর সরকার, ৯ নং সেক্টরভুক্ত মুক্ত এলাকা ও এ সেক্টরের সকল ক্যাম্পের জন্য ছিল প্রেরণার উৎস। মুক্তিযুদ্ধকালে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ এ পত্রিকার পাঠক ছিল। স্বাধীনতা- পরবর্তীকালে বিপ্লবী বাংলাদেশ বরিশাল থেকে প্রথমে সাপ্তাহিক, পরে দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি এখনও টিকে আছে।
১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের পর বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা এবং ফরিদপুর জেলার একাংশ নিয়ে নবম সেক্টর গঠিত হয়। মেজর এম এ জলিলকে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। নবম সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদাকে সহ-অধিনায়ক, ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগকে সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল, ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ (মৃত্যু ২৮শে জুলাই ২০১৭)-কে বাগেরহাট ও সুন্দরবন অঞ্চল, ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামকে পটুয়াখালী জেলা এবং ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরকে বরিশাল জেলা সাব-সেক্টর কমান্ডার এবং ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক এমপিএ-কে এডজুট্যান্ট নিযুক্ত করা হয়। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট সৈয়দ কামাল উদ্দীন, লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবী, লেফটেন্যান্ট শচীন কর্মকার, লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ আলী, লেফটেন্যান্ট শাহ আলম এবং লেফটেন্যান্ট মঈন। নবম সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুলতান উদ্দিন আহমেদ, এ জি মুহম্মদ খুরশীদ এবং এসআই মুহাম্মদ বাদশা মিয়া। সচিবের দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুর রহমান মোস্তফা এবং প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন আলতাফ হোসেন খান অরুণ। বরিশাল জেলার প্রত্যেক থানায় একজন করে (কোথাও একাধিক) বেইজ কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। সদর উপজেলায়- আবদুল মন্নান (নলছিটি), বাকেরগঞ্জে মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন, বাবুগঞ্জে আবদুল ওহাব খান, এম এ কাশেম, আবদুল মজিদ খান, গৌরনদীতে নিজামউদ্দীন, মুলাদীতে কুতুবউদ্দিন, হিজলায় আনোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক মেহেদিগঞ্জে কুদ্দুস মোল্লা, বীর প্রতীক, উজিরপুরে হাবিবুর রহমান খান ও মুহাম্মদ আবদুল ওদুদ সর্দার, বানারীপাড়ায় বেণীলাল দাশগুপ্ত এবং আগৈলঝাড়ায় মতি তালুকদার।
মুক্তিযুদ্ধকালে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি বেসামরিক অঞ্চলে ভাগ করে জনপ্রতিনিধিদের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। দক্ষিণ অঞ্চলের (বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা) দায়িত্বে ছিলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত এমএনএ। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে মুজিব বাহিনীর প্রধান, রেজায়ে সাত্তার ফারুককে সুইসাইড স্কোয়াডের প্রধান এবং সৈয়দ আবুল বাসারকে নৌ-কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। বরিশাল অঞ্চলের সংসদ সদস্যগণ ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নবম সেক্টর গঠনে এবং যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বরিশাল সদরের আমানতগঞ্জের বাসিন্দা পুলিশ অফিসার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, বীর বিক্রম মুজিবনগর সরকারকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করেন।
সিরাজ সিকদারের দলছুট কমান্ডার রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে বরিশাল শহরে সুইসাইড স্কোয়াড- গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এ বাহিনীর গ্রুপ লিডার। এই স্কোয়াডের ক্যাম্প ছিল বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাধবপাশায়। ২১শে অক্টোবর এ স্কোয়াড সদস্যরা বরিশাল শহরে একের পর এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চতুর্দিক প্রকম্পিত করে তোলেন। ৩০শে নভেম্বর বরিশাল শহরে শান্তি কমিটি-র এক শোভাযাত্রা বের হলে সুইসাইড স্কোয়াড ঐ শোভাযাত্রার ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালায়।
নৌ-কমান্ডার সৈয়দ আবুল বাশার ১২ জনের একটি দল নিয়ে প্লাসটিক এক্সপ্লোসিভ, লিমপেট মাইনসহ ২৮শে আগস্ট পাকিস্তান সরকারের নৌচলাচল বন্ধ করার জন্য বরিশাল এসে কর্ণকাঠির শাহ আলম খাঁ-এর বাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ১৪ই নভেম্বর তাঁর নেতৃত্বে নৌকমান্ডোরা বরিশাল আইডব্লিউটি ঘাটে একটি জাহাজ ও দুটি অয়েল ট্যাংকার ধ্বংস করেন। চট্টগ্রাম থেকে আরো ১৭ জন নৌকমান্ডো কর্ণকাঠি এসে পৌঁছলে তাঁদের নিয়ে আবুল বাশার ১৭ই নভেম্বর বরিশাল লঞ্চঘাটে দুটি জাহাজ ধ্বংস করেন। বিচ্ছু বাহিনীর আলম ও গিয়াসউদ্দিন হাতবোমা নিক্ষেপ করে বরিশাল শহরে পাকবাহিনী, শান্তি কমিটি ও -রাজাকারদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বরিশাল শহরের ওপর আক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করেন। ২৫শে এপ্রিল ভোররাতে মুলাদী পিসিও হতে ট্রাঙ্ককলের মাধ্যমে মুলাদীর একজন মুক্তিযোদ্ধা বরিশালের উদ্দেশে পাকবাহিনীর মুলাদীর নন্দীর বাজার অতিক্রমের খবর বরিশালের নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেন। এদিনই প্রত্যুষে পিরোজপুর থেকে টিএন্ডটি কলের মাধ্যমে খবর আসে পাকিস্তানি গানবোট পিএনএস-যশোর বরিশাল অভিমুখে রওনা হয়েছে। ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) ফজলুল হক, ক্যাপ্টেন হুদা, লেফটেন্যান্ট মেহেদী ও লেফটেন্যান্ট নাছিরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নদীপথে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার জন্য তালতলী ও জুনাহারে শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করেন। তাঁরা আইডব্লিউটিসি-র প্যাসেঞ্জার প্যাডেল জাহাজ ‘মাজবী’ এবং ‘ইরানী’-এ দুটিকে ঝুনাহারের নদীমুখে নোঙর করিয়ে নদীর মুখ আটকে দিয়ে নদীর দুধারে বাংকারে শত্রুর অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকিস্তানি গানবোট গোলা নিক্ষেপ করে ‘মাজবী’ এবং ‘ইরানী’ জাহাজ দুটিকে ডুবিয়ে দেয়। ঝুনাহার প্রতিরোধ যুদ্ধ-এ আবদুল মোতালেব আকন্দ (ইছাকাঠী), সিপাহী সিরাজুল ইসলাম (স্যারাল, গৌরনদী) শহীদ এবং কর্নেল কামাল উদ্দিন (ফিরু ভাই) আহত হন। একই দিন পাকবাহিনী বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের কটকস্থলের সন্নিকটে সাউদের খাল ব্রিজ অতিক্রমকালে আ ন ম আবদুল হাকিম, আবুল হাশেম, আবুল হোসেন, আ. ছালাম, মন্টু মোল্লা, আলাউদ্দিন, মোক্তার হোসেন, পরিমল মণ্ডলসহ ২৫-৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই প্রতিরোধযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন এবং সিপাহি মো. আলাউদ্দিনসহ ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৭ই এপ্রিল সংগ্রাম কমিটির নির্দেশে জলস পার্কে প্রায় ২৫ হাজার লোকের উপস্থিতিতে একজন পাকিস্তানি দালালকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
১৮ই এপ্রিল বেলা এগারটার দিকে পাকিস্তান বাহিনীর ৬টি জঙ্গি বিমান বরিশালের ওপর বোমা এবং মেশিনগানের সাহায্যে গুলিবর্ষণ করে অনেককে হত্যা করে। ২৪শে এপ্রিল কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ অস্ত্র নিয়ে সুন্দরবন হয়ে বরিশাল পৌঁছান এবং পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নেন। ২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী জল, স্থল ও আকাশ পথে বরিশালের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এদিন সকাল ১০টার পর থেকে তারা বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর বিমান হামলা চালায়। বেলা ১২টার পর ৮ থেকে ১০টি হেলিকপ্টার বরিশাল শহরের ওপর চক্কর দিতে থাকে এবং গুলি করে নিরীহ মানুষজন হত্যা করে। তারা শহরের উত্তর প্রান্ত সায়েস্তাবাদ এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে প্যারাট্রুপার নামাতে থাকে। নদীপথে আগমনের সময় তারা চরবাড়িয়া ইউনিয়নে গণহত্যা চালায় এবং শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক পথে অনেকগুলো গাড়িতে করে তারা শহরে প্রবেশ করে।
সন্ধ্যার মধ্যে পাকবাহিনী বরিশাল শহরে অনুপ্রবেশ করে প্রথমে ব্রজমোহন কলেজ, অশ্বিনী কুমার টাউন হল এবং পরবর্তীতে জেলা স্কুল, ওয়াপদা কলোনি ও ত্রিশ গোডাউন এলাকায় তাদের হেডকোয়ার্টার্স ও ক্যাম্প স্থাপন করে। বরিশালে পাকবাহিনীর আক্রমণ এবং নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দায়িত্বে ছিল কর্নেল আতিক মালিক, মেজর নাদের পারভেজ, মেজর ইয়াহিয়া হামিদ, মেজর সালাম, ক্যাপ্টেন এজাজ, ক্যাপ্টেন হাবিব শাহ, ক্যাপ্টেন কায়ানি প্রমুখ।
একাত্তর সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত শান্তি কমিটির প্রভাবশালী ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে বরিশালের ছিল ৩১ জন। তাদের নিয়ে মুসলিম লীগ নেতা এডভোকেট আবদুর রবের নেতৃত্বে ২৮শে এপ্রিল বরিশালে গঠিত হয় জেলা শান্তি কমিটি। নুরুল ইসলাম সিকদার (আমুয়া, কাঁঠালিয়া) বরিশাল জেলা শান্তি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ছিল। তার প্রভাবে বরিশালের মুসলিম লীগ সমর্থকরা বিভিন্ন ইউনিয়নে পাকিস্তানের পক্ষে কয়েকটি ঘরোয়া সভায় মিলিত হয় এবং শান্তি কমিটি গঠন করে। সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলে পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার নীলনকশা প্রণেতা ছিল নুরুল ইসলাম সিকদার। নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী-র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহিম (কাউখালী, পিরোজপুর) হানাদার বাহিনীর কার্যক্রম সমর্থন করে পত্র- পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়। পাকবাহিনীর সহায়ক মুজাহিদ বাহিনী গঠনে সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মুসলিম লীগ (কাইউম) নেতা আবদুস সোবহান, কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা মৌলভী আবদুর রব, পিডিপি- নেতা মোহম্মদ আবদুল আজিজ তালুকদার প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতায় নিয়োজিত ছিল। জুলাই মাসের শেষদিকে স্থানীয় পাকিস্তান সমর্থক ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে বরিশাল জেলার থানায়-থানায় এমনকি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। ইসলামী ছাত্র সংঘ-এর নেতারা রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়। শর্ষিনা মাদ্রাসার (স্বরূপকাঠী) ছাত্রদের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনী গঠন করে তারা হত্যা, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বরিশালে রাজাকার বাহিনী গঠনে এ মাদ্রাসা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উদ্যোগ ও সমর্থনে গঠিত তাবেদার ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য ব্যারিস্টার আখতার উদ্দীন (নবগ্রাম, ঝালকাঠি) দক্ষিণাঞ্চলে রাজাকার ও শান্তি কমিটিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেপ্টেম্বর মাসে ঝালকাঠিতে মুসলীম লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় তার বক্তব্য ছিল, ‘পাকিস্তানকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে দুই কোটি লোককে হত্যা করতে হলেও করব।’ বরিশাল জেলা রাজাকার কমান্ডার ছিল মিয়া আব্বাসউদ্দিন (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট; পরবর্তীকালে এমপি)। বরিশালে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠক হিসেবে এডভোকেট আবদুল বারেক, এডভোকেট আবদুর রব, শাহজাহান চৌধুরী, এডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস, শমসের আলী প্রমুখ বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারা বরিশালে পাকবাহিনীর গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় সহযোগিতা করে। ২৫শে এপ্রিল হানাদার বাহিনী বরিশাল শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর হতেই এখানে তারা শাক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। তারা কসাই মসজিদের ঈমাম বশির উল্লাহ আতাহারীকে তাদের সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেয়। রাজাকার বাহিনী যুদ্ধের চেয়ে বরিশাল জেলার বিভিন্ন জায়গায় লুটতরাজ ও ব্যক্তিশত্রু খতম করতে অধিকতর উৎসাহী হয়। তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং অনেক নারীকে ধর্ষণ করে। পাকবাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে রাজাকাররা প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
২৫শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বরিশাল শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। এদিন নদীপথে বরিশালে অনুপ্রবেশকালে তারা চরবাড়িয়ায় গণহত্যা সংঘটিত করে। চরবাড়িয়া গণহত্যায় ৪৭ জন মানুষ নিহত হয়। এ-সময় তারা চরমোনাইসহ আশপাশের গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনী ৩০শে আগস্ট চরকাউয়ায় মোসলেম আলী খলিফার বাড়ির খালের পাড়ে গণহত্যা চালায়। চরকাউয়া গণহত্যা—য় ১৬ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। ২রা মে পাকবাহিনীর হাতে নিখোঁজ হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম হোসেন (ফরিদপুর)। ৫ই মে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আজিজুল ইসলাম (মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত), ১৩ই মে তাদের হাতে শহীদ হন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয়মুখ মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কাঞ্চন- (কালিশ চন্দ্ৰ রোড, বরিশাল সদর)। পাকবাহিনী কাঞ্চনকে বাসায় না পেয়ে তাঁর দুই ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। ছেলেদের বাঁচাতে তিনি পাকবাহিনীর ওয়াপদা ক্যাম্পে ধরা দেন। ১৫ই জুলাই তাদের হাতে শহীদ হন বি এম কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শরীফ নূরুল হুদা। ৩০শে নভেম্বর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা বরিশাল শহরে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজেম মিয়া ও ছাত্রনেতা আলতাফ হোসেন অরুণের বাসায় অগ্নিসংযোগ করে।
২৫শে এপ্রিল থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল সদর ও অন্যত্র পাকবাহিনীর হাতে যারা শহীদ হন- ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক আবদুল হালিম (বরিশাল শহর), রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক সুনীল কুমার চক্রবর্তী (বরিশাল শহর; ৩০শে এপ্রিল নিহত), দর্শনা কলেজের শিক্ষক রফিক ইসলাম (বগুড়া রোড, বরিশাল), ডেপুটি পোস্টমাস্টার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জী, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল (সহকারী ট্রেজারার, পোস্ট অফিস), জেলা ইনটেলিজেন্স অফিসার আফতাব উদ্দিন, এডভোকেট সুধীর কুমার চক্রবর্তী (বরিশাল বার; ১২ই আগস্ট নিহত), এডভোকেট জিতেন্দ্রলাল দত্ত (বরিশাল বার), বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন- নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম (দক্ষিণ আলেকান্দা, বরিশাল সদর), ছাত্রলীগ নেতা এস এম আলমগীর (আলেকান্দা, বরিশাল সদর), বিদ্যাসাগর বন্দ্যোপাধ্যায় (গোড়াচাঁদ দাস রোড, বরিশাল সদর), মোহাম্মদ জোবায়ের টিপু (কলেজ রোড; ১১ই ডিসেম্বর রায়েন্দা যুদ্ধে শহীদ), মোস্তাক আহমেদ ছেন্টু (পেশকার বাড়ি, বরিশাল সদর; ৭ই ডিসেম্বর বাকেরগঞ্জ যুদ্ধে শহীদ), এয়ারম্যান এ কে এম শাহ আলম (কাউনিয়া; ২৭শে মার্চ বগুড়ায় নিহত), শাহজাহান (গোরস্থান রোড, বরিশাল; খুলনায় সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), মোতাহার উদ্দিন আহমেদ (গোরস্থান রোড, বরিশাল; নলছিটি দরগাবাড়ির যুদ্ধে শহীদ), রনজিত কুমার বসু (নতুন বাজার, বরিশাল), প্রফুল্ল কুমার সেনগুপ্ত (ওভারসিয়র, জেলা বোর্ড, বরিশাল), ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল ওয়াজেদ তালুকদার (বাংলাবাজার, বরিশাল), আবদুস শুক্কুর, আবদুল গফুর (আমানতগঞ্জ, বরিশাল), শাহাবুদ্দিন তপন (ছাত্র; আমবাগান, বরিশাল), মোতাহার খলিফা (পূর্ব বগুড়া রোড, বরিশাল), সুবীর দত্ত (ছাত্র; আগরপুর রোড, বরিশাল), মণীন্দ্রনাথ হালদার (ফকিরবাড়ি রোড, বরিশাল), সীমা গুপ্ত (শংকরমঠ), কাউনিয়ার নিরোদ বরণ চক্রবর্তী, সতীশ চন্দ্র গাঙ্গুলী, তপন কুমার দে, মধুসূদন কর, সেকেন্দার আলী হাওলাদার, শেখ আবদুল মজিদ, জাহাঙ্গীর, কাটপট্টির কালীনাথ মিস্ত্রি, যজ্ঞেশ্বর পোদ্দার, সদর রোডের ঘোসাই ঘোষ, হরিদাস সেন, হাটখোলার দিলীপ চন্দ্র মণ্ডল, দিলীপ কুমার সরকার, দিপালী রায়, জগদীশ চন্দ্র রায়, সুরেন্দ্রনাথ দত্ত, তামিলি বালা দাস, বাবুল বণিক, আস্তাকাঠির মুকুন্দনাথ সিকদার, সাগরদীর ক্ষিরোদ সাহা, হাসপাতাল রোডের সুকুমার রঞ্জন গুপ্ত, কেশব নারায়ণ ভট্টাচার্য, ঝাউতলার চপলা দেবী, বরিশাল ল কলেজের পিয়ন রণজিত বসু মধু, বরিশাল বারের পিয়ন কার্তিক চন্দ্র, পুরানপাড়ার ইপিআর সদস্য আনোয়ার হোসেন, ভাটিখানার শংকর কুমার সাহা, ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা, নারায়ণচন্দ্র সাহা, ঠাকুর দাস সাহা, অমর চন্দ্র সাহা, মগরপাড়ার গণি হাওলাদার, আইয়ুব খাঁ, সৈয়দ মোবারক আলী, সায়েস্তাবাদের মীর আবদুস সেলিম, জাগুয়ার ইপিআর সদস্য আ. রাজ্জাক হাওলাদার (দিনাজপুরে নিহত), চরকাউয়ার সিপাহী আস্রাব আলী (কুমিল্লা সেনানীবাসে নিহত), সিপাহি আশ্রাব জমাদ্দার, তোজাম্বর আলী তালুকদার, কাশীপুরের বাবুল চন্দ্ৰ মুখার্জী, জাহাঙ্গীর গাজী, চর উলানঘুনীর যতীন্দ্রনাথ ঘোষ, আতাহার আলী, চঠার আনসার কদম আলী, চরমোনাইর আবদুল হাই, ইছাকাঠীর মোতালেব আকন (জুনাহারের যুদ্ধে শহীদ), বিপ্লবাড়ির রকমান মুন্সী, বুখাইনগরের সৈয়দ আবদুল মালেক, করাপুরের হাচন আলী, সারসীর তোফায়েল মোল্লা, রোকেয়া, হরিনাফুলিয়ার আবদুল বারেক সিকদার, লাকুটিয়ার জাকির হোসেন পলাশ, হোসেন আলী, কটুরাকাটির নিকুঞ্জ বিহারী ভট্টাচার্য, চপলা সুন্দরী চক্রবর্তী, ইপিআর সদস্য মুজাহার তালুকদার, দিয়াপাড়ার মোতাহর আলী সিকদার, চরআইচার রাবেয়া খাতুন, চর উলাগতির সুলতান আহমেদ, দীনবন্ধু সেন রোডের গোবিন্দ চন্দ্ৰ সাহা, করুণা রাণী সাহা, সত্যদাস গুপ্ত, বিশুদা, সিংহেরকাঠীর আলমগীর হোসেন খান, টুঙ্গীবাড়িয়ার মোসলেম কমান্ডার, সাপানিয়ার চান শরীফ, আলী আজিম খাঁ, আবুল হোসেন (কর্ণকাঠি; নলছিটি থানা আক্রমণের সময় শহীদ) প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধা এম এ জি কবির ভুলু (বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার)-কে ১৬ই জুলাই পাকবাহিনী আটক করে নির্মম নির্যাতন করে। তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন গৌরাঙ্গ দাস (শীতলাখোলা), হারুন অর রশীদ (আলোকান্দা), স্বপন কুমার গুর্খা, জগন্নাথ দে, বিশুসহ অনেকে। শান্তি কমিটির সহায়তায় পাকবাহিনীর ওয়াপদা ক্যাম্পে বরিশালের শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের হত্যার একটি নীলনকশা করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করার সুযোগ তারা পায়নি। পরবর্তীতে এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একটি তালিকা উদ্ধার করেন।
বরিশাল নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা) কলোনির একাধিক ভবন ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির। মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষজনদের ধরে এনে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে এখানে হত্যা করা হতো। আবার কাউকে টর্চার সেলে ঝুলিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ ওয়াপদা সংলগ্ন খালে ফেলে দিত।
বরিশাল নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী ওয়াপদা ও ত্রিশ গোডাউন বধ্যভূমি (এখানে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়) ও সিএন্ডবি ১নং পুল বধ্যভূমি এ দুটি ছিল শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। তালতলী, চরকাউয়া মোসলেম মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন খালপাড়ে রয়েছে গণকবর।
বরিশালের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা খুলনার গল্লামারী বেতার কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তাঁদের কাছে ছিল শুধুমাত্র ৩০৩ রাইফেল। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে শহীদ হন। আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর অনুরোধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা লঞ্চভর্তি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে চাঁদপুর পৌঁছান এবং লাকসামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের প্রচুর ক্ষতিসাধন করেন।
জুলাই মাস হতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ভারত হতে অস্ত্র এনে বরিশাল জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘাঁটি স্থাপন করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অক্টোবর মাস পর্যন্ত বরিশাল জেলার গৌরনদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশকিছু অফিসার ও সাধারণ সৈনিক নিহত হয়। এ সময় গড়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সুইসাইডাল স্কোয়াড নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বরিশাল অঞ্চলের পরিস্থিতি এতটা সংঘাতময় হয় যে, সন্ধ্যার পর কোনো বাংকার বা ক্যাম্প থেকে পাকসেনাদের বাইরে যাতায়াত রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দিনের বেলায়ও বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী যশোর-খুলনা থেকে পালিয়ে বরিশালে আসে এবং ওয়াপদা কলোনিতে আশ্রয় নেয়। ৭ই ডিসেম্বর বরিশাল জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একটি গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শান্তি কমিটির নেতা এডভোকেট আবদুর রব, শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল মজিদ প্রমুখ ছাড়াও রাজাকার, আলবদর, জামায়াতে ইসলামী, মুসলীম লীগ ও নেজামে ইসলামী-র সদস্যরা উপস্থিত ছিল। সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সামরিক কর্মকর্তাদের নির্দেশে অপরাহে শহরের অর্ধেক এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা দুপুর ১টায় গানবোট, লঞ্চ ও স্টিমারে বরিশাল থেকে গোপনে পালিয়ে যায়। দুপুর ২টায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ২টি মিগ বোমারু বিমান বরিশালে বিআইডব্লিউটিএ, রহমতপুর বিমান বন্দর এবং পলায়নরত পাকবাহিনীর নৌবহরে বোমাবর্ষণ করে। মাথার ওপর বোমারু বিমান আর রাস্তায় উৎফুলু জনতা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত বরিশালের প্রতিটি জনপদ। এদিন সন্ধ্যায় সুলতান মাস্টার ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল শহরে প্রবেশ করে। ৮ই ডিসেম্বর বরিশাল সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
বরিশাল শত্রুমুক্ত হলেও পাকবাহিনীর একটি বড় অংশ বরিশালের পানি উন্নয়ন বোর্ডে (ক্যান্টমেন্ট নামে পরিচিত ওয়াপদা ভবন) আশ্রয় নেয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নুরুল ইসলাম মঞ্জুর এমএনএ এবং ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগের নেতৃত্বে ১৭ই ডিসেম্বর সুন্দরবন অঞ্চল হতে তিনশ মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বরিশালে আসে। ঐদিন বিকেলে নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের নিকট ওয়াপদা ভবনে অবস্থানরত রাজাকার ও আলবদররা আত্মসমর্পণ করে। পরদিন ১৮ই ডিসেম্বর নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের নিকট দোয়ারিকা ফেরিঘাটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ও গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পাসে আটকেপড়া দেড়শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হাবিলদার আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, বীর উত্তম (পিতা রহমত আলী হাওলাদার, গনপাড়া), ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিনআহমদ, বীর (পিতা আলতাফ উদ্দিন আহমদ, আমানতগঞ্জ), মেজর মো. ওয়ালিউল ইসলাম, বীর প্রতীক (পিতা মো. ওয়াজেদ আলী, উত্তর আলোকান্দা), কে এস এ মহিউদ্দিন মানিক, বীর প্রতীক (পিতা কাজী মনোয়ার হোসেন, বগুড়া রোড), নায়েক সাইদুল আলম, বীর প্রতীক (চরকরঞ্জী), সিপাহি জাহাঙ্গীর হোসেন, বীর প্রতীক (পিতা আবদুল মজিদ মোল্লা, দিনার, চরকাউয়া), আব্দুল লতিফ, বীর প্রতীক (পিতা তোলফে আলী মজুমদার, পশ্চিম কাউনিয়া), মো. নজরুল হক, বীর প্রতীক (পিতা এ কে এম জহুরুল হক, বরিশাল শহর) এবং ইপিআর হাবিলদার আব্দুর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা আজিম উদ্দিন হাওলাদার, কাশিপুর)।
বরিশাল সদর উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন, বীর প্রতীক (কুমিরা যুদ্ধে শহীদ), তোফয়েল আহমেদ (পিতা রোকন উদ্দিন হাওলাদার, বিহংগল, কাশিপুর), শেখ শাহেনশাহ খায়রুজ্জামান (পিতা মোকাম্মেল হোসেন, কাঠপট্টি রোড), আ. গণি হাওলাদার (পিতা সোনামুদ্দিন হাওলাদার, সদর রোড), আবদুল মতলেব (পিতা সরূপ আলী খান, চরবাড়িয়া), আবদুস শুক্কুর (পিতা মো. আ. রহমান বেপারী, আমানতগঞ্জ), সুধীর কুমার চক্রবর্তী (পিতা কৈলাশ চক্রবর্তী, কালীবাড়ি রোড), টমাশ আশীষ বেপারী (পিতা ধীরেন বেপারী, উইলিয়ামপাড়া, ব্যাপটিস্ট মিশন রোড), আবুল হোসেন হাওলাদার (পিতা ছাবেদ আলী হাওলাদার, কর্ণকাঠী), কদম আলী তালুকদার (পিতা লেহাজ উদ্দিন তালুকদার, চইটা, কাশিপুর), মোসলেম আলী বিশ্বাস (পিতা হাসমত আলী বিশ্বাস, চন্দ্রমোহন), আবদুর রশীদ হাওলাদার (আফতাব উদ্দিন হাওলাদার, দক্ষিণ আলেকান্দা), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (পিতা সৈয়দ আশ্রাফ আলী, আর্শেদ আলী রোড, দক্ষিণ আলেকান্দা), মীর মোশতাক হোসেন ছিন্টু (পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, পেশকার বাড়ি, বগুড়া রোড), আনোয়ার হোসেন (ইন্তাজ উদ্দিন মল্লিক, গাওয়াসার, নতুন বাজার), টিপু সুলতান (পিতা আ. রশিদ সওদাগর, শহীদ টিপু সড়ক, কলেজ রোড), সহিদুল হোসেন (পিতা মৌ. বেলায়েত হোসেন, কাজীরচর), সিপাহি কানচান আলী (পিতা নাহার আলী মিয়া, কড়াপুর), সিপাহি সেকেন্দার আলী (পিতা বুরজু আলী হাওলাদার, উত্তর কড়াপুর), ল্যান্স নায়েক আবদুস সাত্তার (সায়েদুল হক, কুন্দিয়াল পাড়া, সাহেবেরহাট), স্যাপার আবুল হোসেন (পিতা ছাদেক আলী হাওলাদার, কর্ণকাঠী), সিপাহি মো. শাহজালাল (পিতা খাদেম ফকির, কর্ণকাঠী), সিপাহি মোহাম্মদ আলী সিকদার (পিতা নোয়াব আলী, রামচন্দ্রপুর), সিপাহি আবদুল গণি (পিতা সনাম উদ্দিন, গাওয়াসার), ল্যান্স নায়েক আবদুল মালেক গাজী (পিতা রতন আলী গাজী, উলালঘুনি, চরবাড়িয়া), সিপাহি মো. আশরাফ আলী (পিতা কাদের আলী জোমাদ্দার, চরআইচা, খানপুর), সিপাহি ফজলুল কবির (পিতা মোতাহার আলী হাওলাদার, গোরস্থান রোড), সিপাহি মোখছেদুর রহমান (হাতেম আলী, ছাহাটা, কাশিপুর), ল্যান্স নায়েক শাহজাহান (পিতা আ. হামিদ হাওলাদার, সোলনা), সিপাহি কাঞ্চন আলী (পিতা ওয়াজেদ আলী, কড়াপুর), সিপাহি আবদুল আজিজ খান (পিতা জিন্নাত আলী খান, সাপানিয়া চড়বাড়িয়া), সিপাহি মো. আলতাব হক হাওলাদার (পিতা মো. সিরাজুল হক হাওলাদার, রামকাঠি, চুরামন), লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এন ইউ চৌধুরী (পশ্চিম কাউনিয়া), ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল ওয়াহেদ তালুকদার (পিতা মনসুর আলী তালুকদার, আলেকান্দা), শাহ আলম (পিতা মো. আসাদুল হক মিয়া, কাউনিয়া), নূরুল হক চৌধুরী (পিতা কবির আহমেদ চৌধুরী, রূপাতলী), জাহাঙ্গীর মোল্লা বিপি (পিতা আবদুল মজিদ মোল্লা, চরকাউয়া), মোজাফফর আলী (পিতা মিছিল আলী খন্দকার, কাশীপুর), আ. মোতালেব হাওলাদার (পিতা আদম আলী হাওলাদার, মতাসার, চরবাড়িয়া), আবুল হোসেন (পিতা মৌলভী কালা মিয়া, বাংলাবাজার, আলেকান্দা), সামছুল হক খান (পিতা মিয়া খান, রায়পাশা, কড়াপুর), মনসুর আলী শরীফ (পিতা দরবার আলী শরীফ, কর্ণকাঠী), নুরুদ্দীন আহমেদ (পিতা মো. সামছুদ্দিন আহম্মেদ, দক্ষিণ আলেকান্দা), সেকেন্দার আলী (পিতা ইয়াকুব আলী, সাগরদী), মো. হানিফ (পিতা সাহেবজান আহমেদ, হাসপাতাল রোড), ল্যান্স নায়েক আবদুল মোবারক (পিতা আ. লতিফ জমাদার, চরকরনজি), সিপাহি আবদুর রাজ্জাক (পিতা জিন্নাত আলী হাওলাদার, জাগুয়া), সিপাহি মকবুল হোসেন (পিতা আরজ আলী হাওলাদার, বকসীর চর)।
বরিশালে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত বেলস্ পার্কের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’। বরিশালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সচিবালয় বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত হয়েছে ‘প্রথম সচিবালয়’। ত্রিশ গোডাউন বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্যাতনকেন্দ্র এবং সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীর আমতলার মোড় এলাকায় নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘বিজয় বিহঙ্গ’। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নির্মিত হয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নামফলক। ওয়াপদা বধ্যভূমিতে হানাদারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শণের জন্য নির্মিত হয়েছে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’। চরবাড়িয়া গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহীদদের তালিকা সম্বলিত ‘স্মৃতিস্তম্ভ”। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ম্যুরাল এবং প্লানেট ওয়ার্ল্ড শিশু পার্কে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। শহীদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আজিজুল ইসলাম স্মরণে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মেরিন ওয়ার্কসপ সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। আমতলা মোড় এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতা পার্ক। কালিবাড়ি রোড বি এম স্কুল সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ কাঞ্চন পার্ক। আমানতগঞ্জ এলাকায় নির্মিত হয়েছে শহীদ শুক্কুর-গফুর পার্ক। নগরীর কাশিপুর এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর-এর পরিবারের সদস্যদের বসবাস করার জন্য সরকারিভাবে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বরিশাল নগরীর সদর রোডের নামকরণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক। এ সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। মথুরানাথ পাবলিক স্কুল থেকে বগুড়া রোডের সংযোগ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা এম এ গফুর সড়ক। অমৃত লাল দে সড়ক এবং কালিবাড়ি রোডের সংযোগ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কাঞ্চন সড়ক। নাজির মহল্লা সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম সড়ক। ভাটিখানা প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আ. গণি সড়ক। পদ্মাবতী সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোবারক সড়ক। কলেজ রোডের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ টিপু সুলতান সড়ক। কাউনিয়া সাবান ফ্যাক্টরি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মোবারক সড়ক। বরিশাল স্টেডিয়াম, কীর্তনখোলা নদীর ওপর ব্রিজ, বরিশাল টেক্সটাইল কলেজ ও সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে ৭৫-এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আঞ্চলিক প্রশাসক আবদুর রব সেরনিয়াবাত- এর নামে। এছাড়া কাউনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কলেজ এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়। ব্রজমোহন কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের নামে। ব্রজমোহন কলেজের অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এবং একাডেমিক ভবনের নামকরণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ভবন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রজমোহন কলেজে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ছাত্র-শিক্ষকদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন বাজার এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে গড়ে উঠেছে বীর প্রতীক প্লাজা। [দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী ও মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড