বরইতলা গণহত্যা (কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ)
বরইতলা গণহত্যা (কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই নভেম্বর। এতে প্রায় দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নে বরইতলা একটি গ্রাম। ঘটনার দিন এখানে মোজাফফর হোসেন মোজামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিলেন। গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকের কালভার্টের কাছে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাত্রিকালীন প্রহরায় রেখে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তাঁরা অবস্থান করেন। স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ইমান আলী (চেয়ারম্যান, গান্ধাইল ইউনিয়ন) পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল এবং গ্রাম ছেড়ে সে থানায় আশ্রয় নেয়। ঘটনার আগের দিন গ্রামের মানুষদের ত্রাণ দেয়ার কথা বলে সে থানায় ডেকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়। হানাদার বাহিনী ঐদিনই শেষরাতে বরইতলা গ্রামে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি বাহিনীকে বরইতলার দিকে আসতে দেখে আগে থেকে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভারী অস্ত্র না থাকায় এক সময় তাঁরা পিছু হটেন। তখন পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে প্রতিটি ঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে তল্লাশি চালায়। তারা যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। তারা মসজিদ এবং ধানক্ষেতের ভেতর থেকে ২৮ জন লোককে ধরে এনে বরইতলা গ্রামের উত্তর প্রান্তে নিয়ে যায়। সেখানে সবাইকে পিঠমোড়া করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। ২৮ জনের মধ্যে ২৭ জন নিহত হয় এবং আফসার আলী নামে একজন বেঁচে যায়। পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা, বেশ কয়েকজন নারীকে নির্যাতন এবং গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বরইতলা গণহত্যায় শহীদ ৭৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন— আমজাদ আলী (পিতা সাহেব আলী মণ্ডল), পণ্ডিতা সরকার (পিতা সৈয়দ আলী সরকার), আবেদ আলী সরকার (পিতা সৈয়দ আলী সরকার), শামছুল হক (পিতা আবদুর রহিম বক্স), পণ্ডিতা মণ্ডল (পিতা ওমর আলী মণ্ডল), মেহের বক্স (পিতা আজিতুল্লাহ), এজাহার আলী (পিতা মহির উদ্দিন), করিম বক্স (পিতা আজিতুল্লাহ), রিয়াজ উদ্দিন (পিতা আয়ান আকন্দ), ইদ্রিস আলী (পিতা ইউসুফ আলী), মানিক উল্যা (পিতা মীর বক্স), আজাহার আলী (পিতা মানিক উল্যা), আবুল হোসেন (পিতা ওমর আলী মণ্ডল), আহাম্মদ আলী মণ্ডল (পিতা রমজান আলী মণ্ডল), ছাবেদ আলী আকন্দ (পিতা হোসেন আলী), হাসান আলী জোয়ারদার (পিতা শামসুল হক জোয়ারদার), শামসুল হক সরকার (পিতা জমশের আলী সরকার), আবদুল কুদ্দুস সরকার, (পিতা শামসুল হক সরকার), মোকতেল হোসেন (পিতা মহির উদ্দিন), আবু কালাম (পিতা মহির উদ্দিন), মহির উদ্দিন (পিতা আছম উদ্দিন), আবু সাইদ আকন্দ (পিতা মৌলভী আবদুর রহিম), সইম উদ্দিন খলিফা (পিতা আজিতুল্লাহ), হাবিবুর রহমান (পিতা এশারত আলী সোনারু), আমজাদ হোসেন (পিতা সাকার আলী), সিরাজ উদ্দিন (পিতা ময়েজ উদ্দিন), লোকমান হোসেন (পিতা হাজী ফকির মাহমুদ), করিম বক্স জোয়ারদার (পিতা কলিম উদ্দিন জোয়ারদার), সফর আলী (পিতা আনা বক্স), আনিছুর রহমান (পিতা জেল হোসেন), জেল হোসেন (পিতা ইজ্জত হোসেন), আবদুর রহমান (পিতা নুরা খলিফা), সুজাবত আলী (পিতা মোহের বক্স), দেরাজ উদ্দিন (পিতা কছিম উদ্দিন), মোজাহার আলী (পিতা খয়ের উল্লাহ), ছাবেদ আলী (পিতা রমজান আলী মণ্ডল), আবদুল মজিদ (পিতা জবান আলী), ইছাহাক আলী (পিতা ইব্রাহিম আলী, মোহাম্মদ আলী (পিতা খবর আলী কর্মকার), আবদুল সালাম (পিতা সবদেব আলী), আফজাল হোসেন (পিতা আলিম উদ্দিন মিস্ত্রি), নূরুল ইসলাম (পিতা ফাজেল করিম), তেছের আলী (পিতা রহমত উল্লাহ), মোজাহার আলী (পিতা আজগর আলী আকন্দ), মোহাম্মদ আলী ওরফে মামুদ আলী (পিতা রহমত উল্লাহ), আবেদ আলী, মেহের আলী, আজিজুল হক, বরকত আলী (পিতা হায়াত মামুদ), কোরবান আলী, কছির উদ্দিন আকন্দ (পিতা কলিম উদ্দিন আকন্দ), আবদুল হাকিম (পিতা হাজী মানিক উল্লাহ), মালেকা খাতুন (পিতা ফাজেল করিম), সুফিয়া খাতুন (পিতা কছির উদ্দিন আকন্দ), কদভানু (পিতা আফজাল হোসেন), জয়গুন বেগম (পিতা আজিজ উল্লাহ ফকির), নইম উদ্দিন আকন্দ (পিতা রহিজ উদ্দিন আকন্দ), শামসুল কাদের আকন্দ (পিতা হাজী আহাম্মদ আলী), আবদুল রহমান আকন্দ (পিতা শাহেব আলী আকন্দ), ইজ্জত আলী আকন্দ (পিতা সাবান আলী আকন্দ), জবান আলী আকন্দ (পিতা সাবান আলী আকন্দ), আজগর আলী আকন্দ (পিতা কিতাব আলী আকন্দ), আবদুল মজিদ (পিতা ইজ্জত আলী আকন্দ), সন্তোষ আলী, নুরুল ইসলাম, আফজাল হোসেন (পিতা হাদুল্লাহ), মানিক উল্লাহ (পিতা মোনসর আলী), কোরবান আল গুঠু (পিতা সাবেদ আলী), হারুনুর রশীদ (সিংড়াবাড়ী), মফিজ উদ্দিন, আবদুর রহমান ওরফে চাঁন মিঞা ও গোলজার হোসেন। শহীদদের স্মরণে ১৯৯৬ সালে বরইতলা বাজারে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [সুস্মিতা রানী দাস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড