মুক্তিযুদ্ধে বরকল উপজেলা (রাঙ্গামাটি)
বরকল উপজেলা (রাঙ্গামাটি) রাঙ্গামাটি জেলার প্রাচীনতম থানাগুলোর একটি। কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা এ উপজেলার আয়তন ৭৭০.৮৮ বর্গকিলোমিটার। এখানে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় ও দৃষ্টিনন্দন ঝরনা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার লোকসংখ্যা ছিল খুবই কম অর্থাৎ ৪ থেকে ৫ হাজারের মতো। চাকমা, মার্মা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, বম- সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস ছিল এখানে। এ উপজেলা দিয়ে ভারতে সহজেই যাতায়াত করা যায়। উপজেলার উত্তরে বাঘাইছড়ি, দক্ষিণে জুরাছড়ি, পশ্চিমে লংগদু ও রাঙামাটি সদর এবং পূর্বে ভারত। ১৯৮৩ সালে এটিকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিলে তার উত্তাপ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ উপজেলার মানুষ অতটা সচেতন ছিল না। এখানে আওয়ামী লীগ-এর লোকজন ছিল না বললেই চলে। তাই এখানে আন্দোলন-সংগ্রামও হয়নি। এখানকার অধিকাংশ লোকজন ছিল অশিক্ষিত ও সহজ- সরল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিতে এবং শতশত শরণার্থী যখন বরকল হয়ে সীমান্তের দিকে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে শরণার্থীদের সঙ্গে ভারতে চলে যায়।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির আহ্বান এ উপজেলার লোকজন জেনেছে কিছুদিন পরে। পূর্বে এখানে তেমন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম হয়নি। এখানে লোকজনদের যুদ্ধ সম্পর্কে অবহিত করানো এবং প্রতিরোধ গড়ার জন্য তাদের সুসংগঠিত করার মতো তেমন কেউ ছিল না। তাছাড়া দুর্গম এলাকা হওয়ায় তারা ভেবেছিল এদিকে শত্রুবাহিনী আসবে না। এসব কারণে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি বা স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণের কোনো ধরনের ব্যবস্থা করা হয়নি। এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন অশোক মিত্র কার্বারী।
২৫শে মার্চ সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এ সংবাদ এখানে পৌঁছতে সময় লাগলেও যুদ্ধ যে শুরু হতে পারে এমনটা বরকল উপজেলার বয়স্ক লোকজন আগেই অনুমান করেছিলেন। কারণ ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিলে রাঙ্গামাটির মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলী সীমান্তে নিয়োজিত অবাঙালি ইপিআর-দের ক্রমশ ক্লোজ ও নিরস্ত্র করেন। সরকারি কর্মকর্তারা নিয়মিত এখানে আসা-যাওয়া করতেন। এর কারণ যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য কোন পথে ভারতে পাঠানো যাবে তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা। স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে বাঙালিরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই অন্যান্য শরণার্থীদের সঙ্গে ভারতে চলে যায়। তাদের সঙ্গে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেকেই চলে যায়। এখানে স্থানীয় লোকজন হানাদারদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রাথমিক কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি।
১৪ই এপ্রিল রাঙ্গামাটি দখলে নেয়ার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ও স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বরকলের দিকে এগুতে থাকে। তারা রাঙ্গামাটি দখলে নিয়ে জেলা প্রশাসক এইচ টি ইমাম, অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক সৈয়দ আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার বজলুর রহমান, মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুঁজতে থাকে। ১৪ই এপ্রিল রাঙ্গামাটি দখল হলে ১৫ই এপ্রিল রাঙ্গামাটির কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়েন। তাঁদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় কোথায় তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অস্ত্রশস্ত্র কোথা থেকে পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কিছুই বলেননি। এরপর ১৬ই এপ্রিল অস্ত্রসহ মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলী ধরা পড়ার পর হানাদাররা তাঁর কাছ থেকেও নানাভাবে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের অবস্থান, কোথায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং অস্ত্রশস্ত্র কোন পথ দিয়ে আসছে সেসব জানতে চায়। কিন্তু নির্যাতনের পরও এম আবদুল আলী মুখ খোলেননি। ১৭ই এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা কাপ্তাই হ্রদে রেকি করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে পড়ে পিছু হটে। ফলে তারা কাপ্তাই হ্রদের আশপাশে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান আছে ভেবে শহরে অবস্থান করে। মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলীর কাছ থেকে যখন কোনো তথ্য বের করতে পারছিল না, তখন তারা চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়কে বিষয়টি অবহিত করে। ত্রিদিব রায় ও স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বরকলের দিকে এগুতে থাকে।
হানাদাররা প্রথমে সুবলংয়ে তাদের ঘাঁটি করে। পরে স্থানীয় হেডম্যান-কার্বারীদের সহায়তায় বরকল উপজেলা সদরের দিকে এগিয়ে যায়। উপজেলার সবচেয়ে বড় পাহাড় ফালিটাইঙ্গ্যাচুগ (পাকিস্তান টিলা)-এর পাদদেশে তারা ক্যাম্প স্থাপন করে। পাহাড়ের চূড়ায় তারা এম্বুশ করেস্থানীয়দের মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে, এপথ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের দিকে গেছেন। এরপর হানাদাররা রাজাকারদের সহায়তায় ভূষণছড়া, হরিনা ও জালিয়াপাড়ার দিকে এগুতে থাকে। জালিয়াপাড়ায় ছিল পাকিস্তানি সেনাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। তারা বরকল সদর ও জালিয়াপাড়া ছাড়াও সীমান্ত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ছোট- ছোট অনেকগুলো ক্যাম্প করে। এছাড়া তারা আইমাছড়া, জগন্নাথছড়া, লতিবানছড়া, শুয়ারিবাতি, কলাবুনিয়া, উজ্জাংছড়ি, বামপ্লেইন, হারুনটিলা, তালছড়া, জারুলছড়ি, ভূষণছড়া, নন্দছড়া, ঠেগামুখ, চাঁদরাছড়া, কম্বাক, আন্দারমানিক এবং উঁচু-নিচু পাহাড়ের টিলায় এম্বুশ করে। বরকল উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় রাজাকার, হিল রাজ, সিভিল আর্মড ফোর্স, শান্তি কমিটি ও মিজো বাহিনীর অবস্থান ছিল।
স্থানীয় হেডম্যান-কার্বারীদের দ্বারা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এছাড়া রাজা ত্রিদিব রায়ের নির্দেশে হিল রাজ বাহিনী গঠন করা হয়। রাজাকাররা অস্ত্রকাঁধে ঘুরে বেড়াত। পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তারা সমতলে গিয়ে যুদ্ধও করে। অনেকে মারাও যায়। বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে মিজো বাহিনীর সঙ্গে রাজাকারদেরও পাঠানো হতো। একেক সময় একেক দল সীমান্তে গিয়ে পাহারা দিত। স্থানীয় লোকজনদের দিয়ে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন কাজ করাত, যেমন— রান্না-বান্না করা, তরি-তরকারি সংগ্রহ করা ইত্যাদি। কখনো- কখনো পাহাড়ি পথ চিনিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতা নিত।
পাকিস্তানি বাহিনী বরকল দখলে নেয়ার পর বিভিন্ন স্থানে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। তাঁবু গেড়ে বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়ায়ও ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। যেহেতু স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন রাজা ত্রিদিব রায়ের প্রতি অনুগত ছিল, সেহেতু তার নির্দেশে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও হিল রাজ বাহিনীর সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত ছিল। পাকিস্তানিরা তাদের ওপর কোনো অত্যাচার-নির্যাতন করত না। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে মাঝে-মধ্যে মিজো ও রাজাকাররা জোরপূর্বক গবাদি পশু, ফল-মূল ইত্যাদি নিয়ে নিয়ে যেত।
উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনী, মিজো ও রাজাকার বাহিনীর বেশ কয়েকটি ক্যাম্প ছিল। যেহেতু চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নির্দেশে স্থানীয় হেডম্যান-কার্বারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং পাকিস্তানিরা বরকল দখলে নেয়ার পর এসব লোকজন তাদেরকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করেছিল, সেহেতু হানাদাররা স্থানীয়দের কাউকে ধরে এনে বন্দি বা নির্যাতন করেনি। নভেম্বরের শুরুর দিকে ভারতীয় কমান্ডার ক্যাপ্টেন কোরিয়ান ও মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম পাঁচ শতাধিক সৈন্য নিয়ে ভারতের দেমাগ্রী থেকে পানছড়ি সীমান্তে আসেন। সেখান থেকে তাঁরা বরকলের আন্দারমানিক নামক স্থানে আসেন। সেখানে তাঁরা দুদিন অবস্থান করেন। জালিয়াপাড়ায় ছিল শত্রুবাহিনীর বড় ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে পাকিস্তানি, মিজো ও রাজাকারসহ পাঁচ শতাধিক হানাদার অবস্থান করত। ক্যাপ্টেন কোরিয়ান, জৈলানন্দ শিং, সুলতান আহমদ কুসুমপুরী ও সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ই নভেম্বর জালিয়াপাড়া ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফজরের আজানের পরপরই যৌথবাহিনী ঘাঁটি আক্রমণ করে। শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি। দুঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। যৌথবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে শত্রুবাহিনী পিছু হটে। এ-যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ৩৫ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়। আহতদের নিয়ে শত্রুবাহিনী পালিয়ে যায়। যৌথবাহিনীর একজন শহীদ ও একজন আহত হন। জালিয়াপাড়া দখলে নেয়ার পর যৌথবাহিনী সেখানে দুদিন অবস্থান করে।
সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের পর থেকেই যৌথবাহিনী আইমাছড়া, জগন্নাথছড়া, লতিবানছড়া, শুয়ারীবাতি, কলাবুনিয়া, উজ্জাংছড়ি, বামপ্লেইন, হারুনটিলা, তালছড়া, জারুলছড়ি, ভূষণছড়া, নন্দছড়া, ঠেগামুখ প্রভৃতি স্থানে ছোট-ছোট ক্যাম্পে আক্রমণ করে বরকলের দিকে এগুতে থাকে। কিছু- কিছু ঘাঁটি থেকে পাল্টা আক্রমণ করলেও শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে শত্রুবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। বরকল উপজেলা সদরে ছিল পাকিস্তানিদের হেডকোয়ার্টার্স। ফালিটাইংগ্যাচুগ নামক পাহাড়ে ছিল তাদের একটি বড় ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে সাত থেকে সাড়ে সাতশত পাকসেনা, রাজাকার ও মিজো সদস্যের অবস্থান ছিল। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সুলতান আহমদ কুসুমপুরী ও ভারতীয় কমান্ডার জৈলানন্দ শিং-এর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল বরকলে আসে। ফালিটাইংগ্যাচুগ পাহাড়ের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণের পাহাড়ে তাঁরা অবস্থান নেন। কিন্তু এ-সময় কাপ্তাই লেকে পানি ছিল বেশি। তাই তাঁরা লেক পার হয়ে আক্রমণ করতে পারছিলেন না। ফলে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সীমান্তের ক্যাম্পে খবর পৌঁছানো হয়। ক্যাম্প থেকে জানানো হয় যে, পরদিন সকালে বিমানযোগে পাকিস্তানিদের ঘাঁটিতে বোম্বিং করা হবে।
অপর একটি দল ক্যাপ্টেন কোরিয়ান ও সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বোটে করে বরকলের দিকে এগুতে থাকে। সুলতান আহমদ কুসুমপুরী ওয়ারলেসের মাধ্যমে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু প্রথমে তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়নি। পরে বিমান থেকে তাদের ওপর বোম্বিং করার পরিকল্পনার কথা শুনে রাত ৮-৯টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা বরকল ছেড়ে সুবলংয়ের দিকে চলে যেতে সম্মত হয়। শর্ত হিসেবে তারা তাদের ওপর আক্রমণ না করার অনুরোধ করে। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার তাদের শর্ত মেনে নেন। ফলে ঐ সময় ৮টি বড় বোট ও লঞ্চে করে পাকিস্তানি সৈন্যরা সুবলং চলে যায়। এরপরও বেশকিছু পাকসেনা, মিজো, আলবদর ও রাজাকার ফালিটাইংগ্যাচুগ পাহাড়ে থেকে যায়। পরদিন ১৪ই ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে –মিত্রবাহিনী-র দুটি যুদ্ধ বিমান থেকে ঐ ঘাঁটিতে বোম্বিং করা হয়। তখন হানাদাররা দিকবিদিক ছুটতে থাকে। অপরদিকে দুদিক থেকে যৌথবাহিনীর রকেট লঞ্চার ও এলএমজি থেকে অনবরত গুলি চালানো হয়। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে যৌথবাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণ পরিচালনা করে। আক্রমণে টিকতে না পেরে অবশিষ্ট পাকিস্তানি সৈন্যরা বোটযোগে রাঙ্গামাটির উদ্দেশে বরকল ত্যাগ করে। এদিকে তাদের অনুসারী রাজাকার, আলবদর ও মিজো সৈন্যদের যুদ্ধরত অবস্থায় বরকলে রেখে যাওয়ায় তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। ফলে ঐদিন বিকেলে তারা সাদা পতাকা উড়িয়ে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এভাবে বরকলে পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটি মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এ-যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ৩০-৪০ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। অপরদিকে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন সদস্য শহীদ হন। এ ঘাঁটি দখলের পর মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল সুজন সিং ওভান বরকল পরিদর্শন করেন। মুক্তিবাহিনীর একটি দল বোটযোগে সুবলং হয়ে রাঙ্গামাটিতে পৌঁছায়। ১৪ই ডিসেম্বর বরকল উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [ইয়াছিন রানা সোহেল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড