You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.25 | বনগ্রাম যুদ্ধ (নাগরপুর, টাঙ্গাইল) - সংগ্রামের নোটবুক

বনগ্রাম যুদ্ধ (নাগরপুর, টাঙ্গাইল)

বনগ্রাম যুদ্ধ (নাগরপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ২৫শে অক্টোবর টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং নাগরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে গয়হাটা ইউনিয়নের অন্তর্গত বনগ্রাম গ্রামে। কাদেরিয়া বাহিনী-র কোম্পানি কমান্ডার জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ২৪শে অক্টোবর বনগ্রামে এ্যাম্বুশ করে। এ-খবর জানতে পেরে পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি গ্রুপ নাগরপুর থেকে এবং আরেকটি গ্রুপ সিরাজগঞ্জ থেকে লঞ্চযোগে বনগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। ২৫শে অক্টোবর তারা বনগ্রামের পশ্চিমে যমুনা নদীর তীরে লঞ্চ ভেড়ায়। এ সংবাদ পেয়ে কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার টার্গেটের মধ্যে আসামাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা গুলি চালান। এতে একজন পাকসেনা নিহত হয় এবং অন্যরা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এখান থেকে ৮টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
এর কিছুক্ষণ পর শতাধিক পাকসেনার একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছাকাছি চলে আসে। কোম্পানি কমান্ডার জয়নাল আবেদীন অতিদ্রুত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করে তাদের মোকাবেলা করার নির্দেশ দেন। একটি গ্রুপ ধানক্ষেতের আলে পজিশন নেয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাগমারীপাড়ার হারুন-অর-রশিদ, গোহালিয়াবাড়ির নজরুল ইসলাম, ঝাওয়াইলের সোহরাওয়ার্দী, নূরুল ইসলাম, শিমলার ওয়াজেদ আলী, শুকুর আলী, পুখুরিয়া-শিয়ালকোলের লুৎফর রহমান মিন্টু, আবদুল বাছেদ তালুকদারসহ আরো কয়েকজন। অন্য দুটি গ্রুপ ছিল কিছুটা দূরে। হঠাৎ একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে মিসফায়ার হয়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে পাকসেনাদের দিক থেকে বৃষ্টির মতো গুলি আসতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন।
বনগ্রামের এ-যুদ্ধে কালিহাতী থানার গোহালিয়াবাড়ি গ্রামের নজরুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার জাহাঙ্গীর আলম, আখতারুজ্জামান, আবদুল ওয়াহাব আলীসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পক্ষান্তরে পাকবাহিনীর একজন মেজরসহ তিনজন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে পাকবাহিনী গ্রামটিতে নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে ৫৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং ১২৯টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড