You dont have javascript enabled! Please enable it! বড়বাজার কালীবাড়ী বধ্যভূমি ও গণকবর (ময়মনসিংহ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

বড়বাজার কালীবাড়ী বধ্যভূমি ও গণকবর (ময়মনসিংহ সদর)

বড়বাজার কালীবাড়ী বধ্যভূমি ও গণকবর (ময়মনসিংহ সদর) ময়মনসিংহ সদরে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে অনেক মানুষকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। কালীবাড়ীতে নিহত অনেককে সেখানেই গণকবর দেয়া হয়।
বড়বাজার কালীবাড়ীতে প্রবেশ করে পাকসেনারা পুরোহিত কালীপদ চক্রবর্তী ওরফে চিক্কি ঠাকুরকে গুলি করে হত্যা করে। কালীমন্দিরের পাশেই থাকত কুখ্যাত রাজাকার সুলতান মিয়া, ভোলা মিয়া, চুন্নু মিয়া প্রমুখ। এদের প্ররোচনায় এক সময় একটি বিহারি পরিবার কালীমন্দির দখল করে নেয়। এরপর মন্দিরের প্রবেশ মুখে লাকড়ির ব্যবসা শুরু করে। সেখানে উপর্যুক্ত রাজাকাররা সব সময় অবস্থান করত। তাদের সঙ্গে পাকসেনারা এসে দেখা করত। বড়বাজার কালীবাড়ীর সামনে ছিল ব্রহ্মপুত্র ফেরিঘাট। ফেরিঘাটে পাকসেনাদের একটি চেকপোস্ট ছিল। গ্রাম থেকে আসা মানুষদের চেকপোস্টে আটক করে পাকসেনারা তাদের কালীবাড়ীতে পাঠাত। সেখানে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা লুট করে নিত। অনেককে জিম্মি করে বাড়ি থেকে টাকা আনতে বাধ্য করা হতো। যারা টাকা দিতে পারত না তাদের নির্যাতন শেষে হত্যা করা হতো। এভাবে খুরশেদ, ভোলা কশাই ও অন্য রাজাকাররা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে মন্দিরের বড় কূপে ফেলে দিত। রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের হাতে এখানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে ক্ষিতীশ চন্দ্র পাল, প্রদ্যুন্ন চক্রবর্তী, অন্নদা শংকর রায়, কার্তিক ঘোষ, ঘেতু সরকার, মরণ সরকার, সুধাংশু মোহন দত্ত, অজিত দত্ত, মহেন্দ তেলী, শংকর তেলী, বসন্ত চক্রবর্তী ও নগেন্দ্র চন্দ্র নাগের নাম মন্দিরের দেয়ালে লিপিবদ্ধ আছে।
স্বাধীনতার পর মন্দিরের একটি কক্ষে চওড়া দুটি কাঠের টুকরো এবং সেগুলোতে চাপ-চাপ রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ কাঠের ওপর রেখে মানুষদের জবাই করে হত্যা করা হতো। কালীবাড়ীর অভ্যন্তরের গণকবরটি সংরক্ষিত হয়েছে। এখন প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়। [বিমল পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড