বড়বাড়ি যুদ্ধ (লালমনিরহাট সদর)
বড়বাড়ি যুদ্ধ (লালমনিরহাট সদর) সংঘটিত হয় ৯ ও ১০ই নভেম্বর এবং ৫ই ডিসেম্বর ৩ দফায়। প্রথম দুদফা সংঘর্ষে উভয় পক্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ৩য় বারের সংঘর্ষের পরের দিন পাকবাহিনী রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এতে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দা শহীদ হন। অপরপক্ষে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
লালমনিরহাট সদরের একটি ইউনিয়নের নাম বড়বাড়ি। লালমনিরহাট শহর ও তিস্তাঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এর অবস্থান। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। তারা বাংকার ও ট্রেঞ্চ খনন করে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ধরলা নদীর পাড় থেকে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য হানাদারদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হলেও কয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় তারা বড়বাড়ি দখল করে নেয়। এরপর থেকে হানাদার বাহিনীর এ ক্যাম্পটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নভেম্বর মাস থেকে মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত আক্রমণে হানাদার বাহিনী নাস্তানাবুদ হতে থাকে। বড়বাড়িতে মুক্তিবাহিনী-র সঙ্গে পাকবাহিনীর কয়েক দফা যুদ্ধ হয়। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় নভেম্বরের ৯ তারিখ। ৮ই নভেম্বর খোন্দকার মুখতার ইলাহী (রংপুর কারমাইকেল কলেজের ভিপি ও মুজিব বাহিনী-র সংগঠক)-র নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সাহেবগঞ্জ থেকে লালমনিরহাট হয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় দলটি বড়বাড়ি ইউনিয়নের আইরখামার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। দোসরদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে ৯ই নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁদের ঘেরাও করলে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ- যুদ্ধে মুখতার ইলাহীসহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দা শহীদ হন।
এ ঘটনার পরদিন ১০ই নভেম্বর লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাকবাহিনী পাল্টা জবাব দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫ জন নিহত ও বহু সংখ্যক আহত হয়। নভেম্বরের বাকি সময়জুড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানগুলোতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৫ই ডিসেম্বর পুনরায় দুপক্ষের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়। অবশেষে ৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা বড়বাড়ি ছেড়ে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড