বড়ইকান্দি বধ্যভূমি (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)
বড়ইকান্দি বধ্যভূমি (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায় অবস্থিত। বড়ইকান্দি রাজাকার ক্যাম্পকে পাকবাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করত। এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তাদের মরদেহ কংস নদীতে ফেলে দেয়। নদীর খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়তকারী নারীরা এখানে রাজাকারদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।
ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলার সীমানার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদীর পূর্বপাড়ে বালিয়া ইউনিয়নের বড়ইকান্দি গ্রামে রাজাকার ক্যাম্পের অবস্থান ছিল। গ্রামের তহসিল অফিসের সামনে নদীর পশ্চিম পাড়ে হালুয়াঘাট থানার শাকুয়াই বাজার অবস্থিত। হিন্দু-প্রধান বড়ইকান্দি ও শাকুয়াই বাজারে যাতায়াতের জন্য নদীর পাড়ে একটি খেয়াঘাট ছিল। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শতশত লোকের যাতায়াত ছিল। পাকিস্তানি সেনারা এখানে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পের কমান্ডার ছিল ফুলপুর থানার রূপসী ইউনিয়নের বড়ইকান্দি গ্রামের কাজী সৈয়দ লুৎফুর রহমানের ছেলে সৈয়দ বদিউর রহমান বনু।
কংস নদী দিয়ে শতশত শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা ভারতে যেতেন। তাঁদের বাধা দেয়ার জন্য বড়ইকান্দি খেয়াঘাটটিকে রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যরা ব্যবহার করত। নদীপথে চলাচলকারী বিভিন্ন নৌকায় তারা তল্লাশি চালাত। মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হিসেবে যাদের সন্দেহ হতো তাদের আটক করত। রাজাকার সৈয়দ বদিউর রহমান বনু ও তার সহযোগীরা বওলা, রূপসী, ঢাকুয়া, কামারগাঁও, শাকুয়াই, পূর্বধলা, হুগলা ও গোয়াতলাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষকে আটক এবং নির্যাতন শেষে হত্যা করত। ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ, পূর্বধলা ও দুর্গাপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড়ইকান্দি ক্যাম্পে বন্দি হস্তান্তর করা হতো। বন্দিদের অমানবিক নির্যাতন শেষে বড়ইকান্দি ক্যাম্পের সামনে কংস নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হতো। বদিউর রহমান বনু, বছির মেকার, বালিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আলবদর কামান্ডার হাফেজ মাহমুদসহ অন্য স্বাধীনতাবিরোধীরা অসংখ্য মানুষকে এখানে হত্যা করে। এ ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী অসংখ্য নারী রাজাকারদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। নির্যাতিত নারীদের তারা বেয়নেট খুঁচিয়ে হত্যা করত। বড়ইকান্দি রাজাকার ক্যাম্প ও ঘাটে নিহতদের মরদেহ নদীর জলে ভাসিয়ে দেয়া হতো। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড