বড় জামবাড়িয়া গণহত্যা (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
বড় জামবাড়িয়া গণহত্যা (ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৯ই নভেম্বর। পাকবাহিনী ও রাজাকার রা এ নৃশংস গণহত্যা চালায়। এদিন তারা গ্রামে ঢুকে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি ও লুটপাট করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে নাস্তানাবুদ হতে থাকে। আস্তে-আস্তে তাদের অবস্থান সংকুচিত হয়। উপায়ান্তর না দেখে শেষ পন্থা হিসেবে তারা নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজে মেতে ওঠে।
ঘটনার দিন রাতে শত্রুবাহিনী ৩টি দলে ভাগ হয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার সাহাপুর গড়ের ৪টি গ্রাম ও ভোলাহাট উপজেলার বড় জামবাড়িয়া গ্রামে হামলা করে। প্রথম দল চৌডালা থেকে নরশিয়ার পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা দিয়ে এবং দ্বিতীয় দল দক্ষিণ দিক দিয়ে অগ্রসর হয়। তৃতীয় দল আড়গাড়া হয়ে ছোট জামবাড়িয়া গ্রামের খড়বড়ো দাঁড়ার পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয়। এ-সময় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্থানীয় দালালদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। প্রথম দুই দল বড় জামবাড়িয়া গ্রামে হত্যা ও ধ্বংসলীলা চালায়। তারা গ্রামের নিরীহ ১১ জন মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- নাসিরুদ্দিন (পিতা নেকীতুল্লাহ), আ. গফুর (পিতা এফার মোল্লা), তানেশ উদ্দিন (পিতা তমুজুদ্দিন মোল্লা), ইলিয়াস আলী (পিতা খাপুরুদ্দিন সরদার), সাজ্জাদ আলী (পিতা খাপুরুদ্দিন সরদার), আলেক (পিতা আমুরুদ্দিন), আ. রশিদ (পিতা হাবিবুল্লাহ্), ইয়াসিন সরদার (পিতা লিভরসী সরদার), ফেলানী বিবি (পিতা সালেকউদ্দিন), আকবর আলী (পিতা ফকিরউদ্দিন) এবং আজেদা (পিতা বরকত মোল্লা)। হানাদাররা নিহতদের মাটিচাপা দেয়। এদিন শত্রুবাহিনী গ্রামজুড়ে ব্যাপক লুটতরাজ ও জ্বালাও-পোড়াও করে। গ্রামে পাকবাহিনীর ফেলে দেয়া মাইন বিস্ফোরণে আকবর আলী (পিতা ফিরোজ আলী), তাসুরুদ্দিন (পিতা আ. আজিজ) এবং এন্তাজ আলী (পিতা উমুরুদ্দিন) আহত হন। হানাদারদের আক্রমণে আতংকিত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ ছোট জামবাড়িয়া, বড়গাছি, কাশিয়াবাড়ি এবং অনেকে ভোলাহাট পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
পাকবাহিনীর নৃশংসতার সংবাদ পেয়ে মোহদীপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর তাঁর দলের ৪০ জন সদস্য নিয়ে আদমপুর গ্রামে উপস্থিত হন। এখানে মুক্তিবাহিনীর ৩৭-৩৮ জন সদস্য অবস্থান করছিলেন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর অগ্রগামী হয়ে বড় জামবাড়িয়া গ্রামের ব্রিজের পশ্চিমে ইয়াসিন আলীর ইটভাটার কাছে অবস্থান নেন। তখন বেলা সাড়ে ১২টা। হানাদার বাহিনী ছোট জামবাড়িয়া গ্রামে একটি বাড়িতে আগুন ধরাতে গেলে লে. বজলুর রশিদ ব্রাশ ফায়ার করেন। এতে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়। শুরু হয় প্রচণ্ড গুলি বিনিময়। এ-সময় গেরিলা যোদ্ধা আমিনুলের সিভিল গানের ছোড়া গুলিতে আরো ১ জন পাকসেনা মারা যায়। লড়াই চলাকালে শত্রুপক্ষের অপর দল বড় জামবাড়িয়া প্রাইমারি স্কুলে বেশকিছু নিরীহ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করার সময় আগুনে আজিজুর রহমানের বাড়ির টালিঘরের কোঠায় রাখা গেরিলা বাহিনীর হ্যান্ড গ্রেনেড ও মাইন প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে। এ অবস্থায় চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে আশংকা করে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। [মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড