You dont have javascript enabled! Please enable it! বখতিয়ার সোসাইটি ও বাংলাদেশ একশন কমিটি (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

বখতিয়ার সোসাইটি ও বাংলাদেশ একশন কমিটি (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)

বখতিয়ার সোসাইটি ও বাংলাদেশ একশন কমিটি (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) লন্ডনপ্রবাসী আনোয়ারা উপজেলাবাসীদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী একটি সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই লন্ডনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি বিশ্বজনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফান্ড সংগ্রহসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ও বাংলাদেশ সরকার-এর সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। জনমত গঠন ছাড়াও প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের অর্থ কিংবা চাঁদা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ সরকারের ফান্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এমন দেড় শতাধিকের মতো লন্ডনপ্রবাসী বাঙালি ছিলেন আনোয়ারা উপজেলার পশ্চিমচাল, ছাপাতলী ও ছিরাবটতলী গ্রামের বখতিয়ার পাড়ার বাসিন্দা। আনোয়ারা জনপদের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম পশ্চিমচাল। এ গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করে বখতিয়ার গোত্রের চার শতাধিকের মতো পরিবার। স্থানীয়ভাবে বখতিয়ার নামে পরিচিত এ গোত্রের আদিনিবাস ছিল ইরানে। বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ (১৪১৫-১৪৩২ খ্রি.) কর্তৃক চট্টগ্রাম বিজয়কালে সুদূর আরব থেকে প্রাচীন বন্দর-শহরকে কেন্দ্র করে অত্র অঞ্চলে তাদের পূর্বপুরুষদের আগমন ঘটে। চাকরি অথবা ব্যবসাসূত্রে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে লন্ডন- আমেরিকায় বসবাস করে আসছে। তবে লন্ডনই তাদের পছন্দের শহর। তাই আনোয়ারার জনসাধারণ্যে বখতিয়ার পাড়ার অপর নাম ‘লন্ডনি পাড়া’। লন্ডন ব্রিজের নিকটস্থ এস/ই ওয়ান, ৮৩ মোবারী বিল্ডিং-এ বখতিয়ার সোসাইটি নামে একটি সমিতি ছিল (প্রতিষ্ঠা ১৯৫৫)। এ সংগঠনটি ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বখতিয়ার গোত্রের লোকদের যোগাযোগের অন্যতম ঠিকানা। কোনো বিশেষ কর্মসূচি কিংবা দিবসে কিংবা দেশের কোনো সংবাদে তারা ছুটে আসতেন এ সোসাইটিতে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাত থেকে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বখতিয়ার সোসাইটির সদস্যরা লন্ডনস্থ তাদের কার্যালয়ে এক সভায় মিলিত হন। দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঐ সভায় সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব মদিনুল্লা ও সাধারণ সম্পাদক এস জে আলীর (লন্ডন প্রবাসীদের কাছে তিনি জি মি আলী নামে পরিচিত) নেতৃতে সংগঠনের সকল সদস্যের সমন্বয়ে ১৩২ সদস্যবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ একশন কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে পুরুষদের পাশাপাশি ১২ জন মহিলা সদস্যও ছিলেন। উক্ত কমিটির প্রধান কার্যালয় ছিল ২৯ কনটেস্ট রোড, নর্থ-ওয়েস্ট, লন্ডন ঠিকানায়। এ কার্যালয় থেকেই বখতিয়ার সোসাইটির মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। মিডিয়া-মাধ্যম ছাড়াও সদস্যরা নিজস্ব প্রচেষ্টায় দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রতিনিয়ত খবর সংগ্রহ করতেন। ভারতের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দালালদের প্রতিনিয়ত হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ ও লুঠপাটের সংবাদসহ পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা অবগত হতেন। এরপর তারা লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
নিজেদের চাঁদার টাকায় ‘মুক্তিযুদ্ধ ফান্ড’ গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় এ ব্যাপারে তারা লন্ডনস্থ কার্যালয় থেকে ভারতের ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া ঠিকানায় চিঠি লিখে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ববৃন্দ বিশেষ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ- এবং কলিকাতাস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী (যার নেতৃত্বে উক্ত দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষাবলম্বন করেন) প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী তারা লন্ডনে অবস্থানরত জাস্টিস আবু সৈয়দ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। কলিকাতা স্থ পাকিস্তান হাইকমিশন অফিসের টেলিফোন ইনচার্জ আব্বাস উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর বাড়ি আনোয়ারা থানার বরুমচড়া গ্রামে। এ খবর জানতে পেরে বখতিয়ার সোসাইটির সদস্যরা প্রতিনিয়ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ পান। সংগঠনের অনেক সদস্যই কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে সার্বক্ষণিক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। কূটনীতিক হোসেন আলী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যা, নারীনির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের ছবি সংগ্রহ করে তাদের কাছে প্রতিনিয়ত পাঠাতে থাকেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে সংগঠনের সদস্যরা এ ছবিগুলো লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানসমূহে প্রদর্শন এবং লন্ডনস্থ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে পাঠাতে থাকেন। এ সময় তাদের এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লন্ডনপ্রবাসী বিপুল সংখ্যক লোকও যোগ দেন। গ্রেটব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে তারা সংগঠনের আরো কয়েকটি কার্যালয় স্থাপন করেন। তন্মধ্যে ৩৫ বেনসন রোড ও ৩৮ পিসভেরি পার্ক রোড, লন্ডন শাখা ছিল অন্যতম। একশান কমিটির পক্ষে তারা কয়েকটি গ্রুপ গঠন করেন। তারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাহায্য চেয়ে লিফলেট বের করেন এবং কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে লন্ডন শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্টেশন এবং রাস্তার মোড়ে-মোড়ে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্লাকার্ড প্রদর্শন, স্লোগান ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যান। এ-সময় তাদের স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল ‘নট এ পেনি নট এ গান ইয়াহিয়া-ভুট্ট-টিক্কা খান’, ‘স্টপ এইড টু ইয়াহিয়া ভুট্ট – টেররিস্ট মার্ডারার আইয়ুব খান’ ইত্যাদি। প্রত্যেকের পরনে একই রংয়ের একটি করে টাই এবং শার্টে লাগানো থাকত বাংলাদেশের পতাকাসহ . একটি মনোগ্রাম, হাতে থাকত লিফলেট। এভাবেই তারা বাংলাদেশ মুভমেন্ট মোবিলাইজেশন করতেন। সারাদিনের মুভমেন্ট শেষে রোজ রাত ৮টায় তারা মিলিত হতেন প্রধান – কার্যালয়ে। উক্ত কার্যালয়টি এক পর্যায়ে লন্ডনপ্রবাসী চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার লোকসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাসীদের মুক্তিযুদ্ধের ঠিকানায় পরিণত হয়। তাঁরা যে অর্থ সংগ্রহ করতেন তা Humbros Bank, Bishop Gate-London W-1-এর একাউন্টে জমা রাখতেন এবং ঐ ব্যাংকের মাধ্যমেই কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রেরণ করতেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে বখতিয়ার সোসাইটির উদ্যোগে গঠিত একশন কমিটি ছাড়াও লন্ডন ও ব্রিটেনের অন্যান্য শহরে অনুরূপ একাধিক একশন কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেসব কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। প্রচুর অর্থ প্রেরণ করে তারা কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ সরকারের হাতকে শক্তিশালী করেন। শুধু তাই নয়, ভারতে আশ্রিত শরণার্থীদের জন্য কাপড়-চোপড়, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বিভিন্নভাবে কলকাতায় পাঠিয়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ মুভমেন্ট মোবিলাইজেশনের সময় তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির নেতা মি. পিটার শো এমপি, জন স্টোনহাউস এমপি ও লেবার পার্টির নেতা হেরাল্ড উইলসনসহ ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের অনেক নেতা। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে লন্ডনের হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল সমাবেশ। উক্ত সমাবেশে লন্ডনপ্রবাসী বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। প্রায় ১০ হাজার লোকের বিশাল এ সমাবেশের আয়োজকও ছিল বাংলাদেশ একশন কমিটিসমূহ। বখতিয়ার সোসাইটি গঠিত একশন কমিটি মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি সমাবেশের আয়োজন করে। সেসব সমাবেশে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন ফণীভূষণ মজুমদার- এমপিএ, আনোয়ারা-পটিয়া থেকে নির্বাচিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপিএ, শামসুল আলম চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ একশন কমিটির সদস্য হিসেবে বখতিয়ার সোসাইটির যে-সকল লন্ডন প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তাঁরা হলেন— ছিরাবটতলী গ্রামের আলহাজ্ব মদিনুল্লা (পিতা নূর আহমদ), হাজী আমীর আহমদ (পিতা নূর আহমদ), হাজী আলতাফ আলী (পিতা নূর আহমদ), মাহবুব আলী (পিতা নূর আহমদ), আবদুল মজিদ (পিতা হোসেন আলী), আবদুল খালেক (পিতা সফিউদ্দিন), আবদুল মালেক (পিতা আফিউদ্দিন), হাজী আবুল বশর (পিতা দুদু মিয়া), আহমদ নবী (পিতা আনজু মিয়া), মাহবুব আলী (পিতা এরশাদ আলী), ছালে আহমদ (পিতা অলি আহমদ), সফিকুর রহমান (পিতা এমদাদ আলী), রশিদুল্লা (পিতা আবদুচ সত্তার), আহমদ মিয়া (পিতা কালা মিয়া), শেখ আহমদ (পিতা ছমিউদ্দিন), কালা মিয়া (পিতা এয়াকুব আলী), মনির আহমদ (পিতা আরবান আলী), আহমদ আলী (পিতা আবেদ আলী), ফিরোজ আহমদ (পিতা আবদুল হালিম), আবদুছ ছালাম মেম্বার (পিতা সুলতান আহমদ সুকানি), আহমদ নবী (পিতা মোহাম্মদ ইসমাইল), হাকিম আলী (পিতা লাল মিয়া), মোহাম্মদ সফি (পিতা লাল মিয়া), মোহাম্মদ সোলায়মান (পিতা সোনা মিয়া), সোলতান আহমদ (পিতা নোয়া মিয়া), জামাল আহমদ (পিতা নোয়া মিয়া), আলী আকবর (পিতা বুধা গাজী), আবুল কাসেম (পিতা জিন্নু মিয়া), হাজী সৈয়দ নুর (পিতা বাঁচা মিয়া), আহমদ নবী (পিতা এমদাদ আলী), সফিকুর রহমান (পিতা আবুল মজিদ), মনির আহমদ (পিতা আবদুল আজিজ), আবদুর রশিদ (পিতা আমজু মিয়া), গোলতাপ আলী (পিতা ফজর আলী), আবদুল গফুর (পিতা এজাহার মিয়া), মোখলেছুর রহমান (পিতা আলী মিয়া), আবদুল লতিফ (পিতা আন্নর আলী), জালাল আহমদ (পিতা রাজা মিয়া), সোলতান আহমদ (পিতা লাল মিয়া), মোহাম্মদ আলী (পিতা লাল মিয়া), আবদুল মজিদ (পিতা হাকিম আলী), হাজেরা খাতুন (স্বামী আবদুল খালেক), হাজেরা খাতুন (স্বামী আবুল বশর), নূর খাতুন (স্বামী মনির আহমদ), আবদুর রহিম (পিতা বকুম আলী); ছাপাতলী গ্রামের হাজী আবদুর রহিম (পিতা খুলু মিয়া), মোহাম্মদ শরীফ (পিতা কালা মিয়া), ওহাব মিয়া (পিতা বাদশা মিয়া), নোয়াব আলী (পিতা রাজা মিয়া), শের আলী (পিতা রাজা মিয়া), মাহবুব আলী (পিতা রাজা মিয়া), আহমদ নবী (পিতা আমীন শরীফ), হাজী নূর মোহাম্মদ (পিতা বদিউর রহমান), হাজী সাহাব মিয়া (পিতা হামিদ আলী), হাজী মোহাম্মদ সৈয়দ (পিতা সাহাব মিয়া), হাজী মোহাম্মদ ইউনুছ (পিতা হাজী সাহাব মিয়া), নুরুল আমীন (পিতা জমির হোসেন), নুরুচ্ছাফা (পিতা ছেমর আলী), আবদুল জলিল মেম্বার (পিতা বাঁচা মিয়া), মকবুল আহমদ (পিতা বাচন আলী), পেয়ার আহমদ (পিতা কবির আহমদ), আবিজা খাতুন (স্বামী আবদুর রহিম), কবির আহমদ (পিতা খুল্যা মিয়া), ছালে আহমদ (পিতা খুল্যা মিয়া), আবদুল করিম (পিতা আবদুল আলী), মোহাম্মদ সোলায়মান (পিতা সৈয়দ আলী), মোহাম্মদ ছবুর (পিতা সৈয়দ আলী), জেবল হোসেন (পিতা কালা মিয়া), মুন্সি মিয়া (পিতা জেবল হক), মুন্সি মিয়া (পিতা সুজায়েত আলী), মোহাম্মদ ইউনুছ (পিতা তমিজ আলী); পশ্চিমচাল গ্রামের হাজী এস জে আলী (পিতা এরশাদ আলী), হাজী নুর আহমদ চৌধুরী (পিতা আমীন শরীফ), হাজী নুরুল আলম (পিতা হামিদ শরীফ), হাজী নূর মোহাম্মদ (পিতা আবদুল মজিদ), মোহাম্মদ হোসেন (পিতা আবদুল মজিদ), হাজী আমীন শরীফ (পিতা আবদুল কাদের), হাজী আহমদ নবী (পিতা আবদুল কাদের), হাজী আক্কল আলী (পিতা মোহাম্মদ হাড়ি মিয়া), হাজী হাসান শরীফ (পিতা হাজী এয়ার আলী মাঝি), সোনা মিয়া (পিতা হাজী আসকর আলী), আবদুল খালেক (পিতা বাদশা মিয়া), গুরা মিয়া (পিতা আরবান আলী), মোহাম্মদ হোসেন (পিতা সাঁচি মিয়া), মোহাম্মদ হোসেন (পিতা আরবান আলী), ইউছুফ আলী (পিতা বেলায়েত আলী), ছালে আহমদ (পিতা ওয়াহেদ আলী), নূর আহমদ (পিতা সাঁচি মিয়া), আবদুর রহিম (পিতা গুরা মিয়া), আলী আহমদ (পিতা সৈয়দ আলী), আবদুল গফুর (পিতা এজাহার মিয়া), মোহাম্মদ ছবুর (পিতা আবদুল জলিল), আহমদ হোসেন (পিতা কোরবান আলী), সফর মুলুক (পিতা আবুল হোসেন), হাজী গফুর আহমদ (পিতা হাজী জেবল হোসেন), আলতাফ মিয়া (পিতা কুলু মিয়া), ইসমত আলী (পিতা কুলু মিয়া), মোহাম্মদ ইসমাইল (পিতা আনর আলী), মোহাম্মদ শরীফ (পিতা ছেমর আলী), বদরুজ্জামান (পিতা আহমদ আলী), আবদুর রাজ্জাক, আহমদ শরীফ (পিতা গুরা মিয়া), মোহাম্মদ ইউনুছ (পিতা বাদশা মিয়া), সিদ্দিক আহমদ সুকানী (পিতা দরবেশ আলী), ফজলুর রহমান (পিতা জাফর আলী), হাজী মকবুল আহমদ (পিতা বাঁচা মিয়া), হাজী সোলতান আহমদ (পিতা বাঁচা মিয়া), হাজী ইউছুফ আলী (পিতা দুদু মিয়া), ইসমত আলী (পিতা দুদু মিয়া), হাজী নূর মোহাম্মদ মেম্বার (পিতা গুরা মিয়া), হাজী মনির আহমদ (পিতা বদু মিয়া), আবদুল খালেক (পিতা আবদুল মজিদ), আবদুল মালেক (পিতা আবদুল মজিদ), আবদুছ ছালাম (পিতা এয়াকুব আলী), মোহাম্মদ সলিম (পিতা গোলতাফ আলী), শাহ আলম (পিতা আলতাফ আলী), হাজেরা খাতুন (স্বামী নূর আহমদ), আলতাজ খাতুন (স্বামী হাসান শরীফ), হামিদ শরীফ (পিতা কালা মিয়া), নূরুল ইসলাম (পিতা সিদ্দিক আহমদ), নূরুল আমীন (পিতা সিদ্দিক আহমদ), মোহাম্মদ ছবুর (পিতা আলী মিয়া), আহমদ মিয়া (পিতা আলী মিয়া); গোবাদিয়া গ্রামের হাজী জরিফ আলী শাহ (পিতা লাল মিয়া), হাজী আইয়ুব আলী (পিতা লাল মিয়া), লায়লা বেগম (স্বামী জরিফ আলী শাহ) প্রমুখ।
বখতিয়ার সোসাইটি গঠিত বাংলাদেশ একশন কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মদিনুল্লা বর্তমানে আনোয়ারা থানার পশ্চিমচাল বখতিয়ার পাড়াস্থ নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। কয়েক বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও উল্লিখিত বাংলাদেশ একশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস জে আলী এবং সদস্য জরিফ আলী শাহ পরলোক গমন করেন। জরিফ আলী শাহ ছিলেন লন্ডনের বহুল পরিচিত হোটেল ‘গেইট অব বাংলাদেশ’-এর মালিক। এ হোটেলের নাম ছিল ‘গেইট অব লন্ডন’। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে হোটেলটির পূর্বের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘গেইট অব বাংলাদেশ’। হোটেলটি আজো এ নামেই চলছে। মুক্তিযুদ্ধকালে এ হোটেলটি ছিল প্রবাসী বাঙালিদের গর্বের ঠিকানা। লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালি নেতৃবৃন্দ প্রায়ই এ হোটেলে মিলিত হতেন। রমনা গার্ডেন নামে লন্ডনের ‘চেস্টার’-এ জরিফ আলী শাহের অপর একটি হোটেল মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঠিকানা ছিল। ১৮৪ লেভেন্ডার এলাকায় কামাল রেস্টুরেন্ট নামে তার আরেকটি হোটেলের ওপর তলাটি আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ থেকে আগত নেতৃবৃন্দ এ হোটেলে থাকতেন এবং এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড