You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ

ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ (১৯২৪-১৯৮৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, আইনজীবী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির অন্যতম সদস্য (পরবর্তীকালে চেয়ারম্যান), মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মার্কিন কংগ্রেসে বিশিষ্ট ভুমিকা পালনকারী ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত মার্কিন নাগরিক ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ ১৯২৪ সালের ২৫শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোর বইসি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বইসি হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি হার্ভার্ড ল স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীকালে স্থানান্তরিত হয়ে স্ট্যানফোর্ড ল স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ১৯৪২-৪৬ সাল পর্যন্ত ভারত, বার্মা (মিয়ানমার) ও চীনে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি আইন পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি ৪ বার আইডোহোর থেকে সিনেটর নির্বাচিত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৭১-৭৯ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড স্টেট্স সিনেট স্পেশাল কমিটি অন এজিং এবং ১৯৭৩-৮১ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড স্টেট্স সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশন্স-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর পূর্বে তিনি ফরেন রিলেশন্স কমিটির অন্যমত সদস্য ছিলেন।
১৯৮৪ সালের ৭ই এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
৭১-এ বাংলাদেশ সংকট শুরু হওয়ার পর সে-সময় ইউনাইটেড স্টেট্স সিনেট কমিটি অন ফরেন রিলেশন্স-এর সদস্য হিসেবে সিনেটর ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ একাধিকবার মার্কিন কংগ্রেসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও অত্যাচারের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি সংকটের প্রধান কারণ ও এর সমাধানের উপায় তুলে ধরে বিবৃতিও প্রদান করেন। বাংলাদেশ সংকটের জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে দায়ী করে তিনি সেদেশে মার্কিন অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য বন্ধ করার জন্য নিক্সন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৮ই মে কংগ্রেসে একটি জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন। ১০ই জুন সিনেটর স্যাক্সবি ও সিনেটর চার্চ যৌথভাবে বাংলাদেশ সংকটের নিরসন না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে প্রদেয় বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত রাখার সুপারিশ করে সিনেটে একটি সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। বাঙালিদের ওপর গণহত্যা বন্ধ করে নির্বাচনের রায় মেনে নিয়ে রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে উভয়ে ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে পাকিস্তান সফর করেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে উভয়ে মার্কিন কংগ্রেসে তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বিবৃতি দেন। ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের দাবি জানিয়ে একটি যৌথ প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থাপন করেন, সিনেটর চার্চ ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ সিনেটর ফ্রাঙ্ক ফরেস্টার চার্চ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির ও হারুন-অর-রশিদ বইলপুর যুদ্ধ (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) ১৫ই ডিসেম্বর সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এ-যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্রবাহিনীর একজন সদস্য শহীদ হন। ১৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পলায়নরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে অনুসরণ করে চৌদ্দগ্রামের বইলপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হন। বইলপুরে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে এখানে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ৫ জন ও মিত্রবাহিনীর একজন শহীদ হন। যুদ্ধের পর বইলপুর গ্রামে একটি গণকবরে ৬ জন শহীদকে সমাহিত করা হয়। এ গণকবরটি এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি। [মোতাহার হোসেন মাহবুব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড