You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.06 | বংশিপাড়া যুদ্ধ (আটঘরিয়া, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

বংশিপাড়া যুদ্ধ (আটঘরিয়া, পাবনা)

বংশিপাড়া যুদ্ধ (আটঘরিয়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ৬ই নভেম্বর। এতে হানাদার পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন তাহেরসহ ১৩ জন সৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া এদিন হানাদার বাহিনী ১২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
বংশিপাড়া যুদ্ধের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ২২শে অক্টোবর ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বেরুয়ান গ্রামে আরেকটি যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধের পর থেকেই সবাই আশঙ্কা করছিল পাকবাহিনী যে-কোনো সময় এ এলাকায় অভিযান চালাবে। তাদের আশঙ্কা অনুযায়ী ৬ই নভেম্বর পাকবাহিনী দুটি দলে বিভক্ত হয়ে বেরুয়ান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় আসে। এদিন ভোরে একদল দেবোত্তর হয়ে বেরুয়ান ও আরেক দল ট্রেনযোগে ঈশ্বরদী থেকে মুলাডুলি-গফুরাবাদের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনাদের চতুর্মুখী ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল। আটঘরিয়ার আনোয়ার হোসেন রেনু ও মুলাডুলির ইউনুছের নেতৃত্বে (-মুজিব বাহিনী) এবং ঈশ্বরদীর ওয়াছেব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে (এফএফ) প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা বংশিপাড়া নামক স্থানে একত্রিত হন। এত অল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিশাল পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করা ঠিক হবে না মনে করে মুক্তিযোদ্ধারা চন্দ্রাবতী নদীর পশ্চিম তীর ধরে হেঁটে নিরাপদ স্থানে যাবার প্রস্তুতি নেন। হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান নদীর পূর্ব তীর ধরে হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছে। হানাদার বাহিনী তখন ৫০-৬০ গজ দূরে। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। আনুমানিক সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত একটানা গুলিবর্ষণে হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন তাহেরসহ ১৩ জন পাকসেনা নিহত ও প্রায় ২০ জনের মতো আহত হয়। অপরদিকে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা নিরাপদে সরে পড়লে হানাদার বাহিনী বংশিপাড়া গ্রামে ঢুকে ১২ জন গ্রামবাসীকে হত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
বংশিপাড়া যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আবুল কাশেম (পিতা সাহেব প্রামাণিক, বেরুয়ান, আটঘরিয়া), আব্দুল খালেক (পিতা শেখ আব্দুল হক, মাজপাড়া, আটঘরিয়া), ইউনুছ আলী (পিতা আফিল উদ্দিন প্রামাণিক, মুলাডুলি, ঈশ্বরদী), শহিদুল ইসলাম (পিতা তৈয়ব আলী মণ্ডল, দাদাপুর, ঈশ্বরদী), মুনসুর আলী (পিতা ইসহাক আলী প্রামাণিক, তিলকপুর, ঈশ্বরদী), আব্দুল মালেক (পিতা মফিজ উদ্দিন খাঁ, রূপপুর, ঈশ্বরদী), আব্দুস সাত্তার (পিতা আব্দুর রহমান বিশ্বাস, নতুন রূপপুর, ঈশ্বরদী), আব্দুর রশিদ (পিতা রহমত আলী প্রামাণিক, বিলকাদার, ঈশ্বরদী), আব্দুর রাজ্জাক (পিতা আমিন উদ্দিন প্রামাণিক, বিলকাদার, ঈশ্বরদী) এবং নায়েব আলী (পিতা জাফের উদ্দিন প্রামাণিক, লক্ষ্মীকুণ্ডা, ঈশ্বরদী)। গুরুতর আহত হন ঈশ্বরদী উপজেলার বিলকাদার গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও মোজাহার আলী। এছাড়া ঐদিন হানাদার বাহিনী যে ৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে, তারা হলেন- বংশীপাড়া গ্রামের ইসহাক আলী মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ, আ. মান্নান, হাচেন আলী, আফজাল আলী, আ. বারী ও নুর আলী। [আমিরুল ইসলাম রাঙা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৬ষ্ঠ খণ্ড